পেশাওয়ার ইস্টিশনে একগাদা বাঙালি রেলগাড়ি থেকে নামেনা। তাই আলী সায়েব
যখন পেশাওয়ারে নামলেন গাড়ি থেকে, খেয়াল পড়ল তিনি পাঞ্জাবী পরে আসেননি। কাজেই তাঁকে
নিতে আসা, পাঠান বন্ধুর-বন্ধু (কিম্বা বন্ধুর-বন্ধুর-বন্ধুর-বন্ধু। খাঁটি পাঠান
বন্ধুর সম্পক্কে বন্ধুর পন্থায় বিশ্বাস করেনা বলেই লিখেছেন আলী সায়েব) তাঁকে
চিনবেন কি করে, তাই নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। সেই দুশ্চিন্তার কথা শুনে পাঠান তাজ্জব
– “পাঞ্জাবী দিয়ে বাঙালি চেনা যায়?” - আজ্ঞে ১৯২৭ সালের কথা কইচি। এখন হিন্দি-পাকি
দুশমনিতে নিরুপায় হয়ে বাঙালি রেলগাড়ি চেপে পেশাওয়ার যেতে পারেনা। কিন্তু ৮০-৯০ বছর
আগে পেটের টানে সেই নিরুপায় হয়েই আবার বাঙালি রেলগাড়ি চেপে পেশাওয়ার যেত। আলী
সায়েব বলে গেছেন যে।
যাই হোক, আসি পাঞ্জাবীর কথায়। পাঞ্জাব নন্দন বা নন্দিনী নয়। পাঞ্জাবীর
সঙ্গে বাঙালীর সম্পর্ক অনেক কালের। পাঞ্জাবী না পরলে পনেরো-বিশ বছর আগে বাঙালির
বিয়ে হতো না। আজকাল অবিশ্যি সবই হচ্ছেটচ্ছে। বাঙালি বিয়ের পোষাকের ব্যাপারে পরভূম নির্ভরতা
ছাড়াতে পেরেছে এটা ভালোই (বেনারসী ও পাঞ্জাবী)। এখন দেখি বর জরীর ঝালর দেওয়া প্রায়
আলখাল্লা গোছের একটা কিম্ভুত বস্তু পরে বসে আছে, গলায় একটা ওড়না প্যাঁচানো। এত সব
জরি আর কলকাওয়ালা ঝাঁইঝপ্পর গোড়ালিঝুলের সঙ্গে ওড়না। প্রথমে বুঝতে পারতুম না ইনি
বর না বৌ। দু একবার মিসফায়ারও হয়েছে বটে। শেষে গোঁফটোফ দেখে ...। এ বস্তুর নাম যদি
শেরওয়ানী হয়, তবে পন্ডিত নেহেরু আর আবুল কালাম আজাদ যা পরতেন সে গুলোর নাম নির্ঘাত
হাওয়াই শার্ট। আমি এই পাঞ্জাবী নিয়েও বলতে বসিনি। ভনিতা অংশটা বড্ড ইয়ে হয়ে গেল।
আমার কাজ কারবার জিভ এবং পেটের। মানে খাওয়া দাওয়া নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত
থাকি, যে তাবৎ জগতসভায় কি হচ্ছে না হচ্ছে সে নিয়ে ঘামার মত জায়গাই আমার মাথায়
থাকেনা। আজকাল যেমন “লং ড্রাইভে” যাবার খুব চল। এবং পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঢাবায়
পাঞ্জাবী খানা, আমাদের ছোটোবেলায় এমনটা ছিলোনা। চেনাশোনা কজন লোকের গাড়ি ছিলো,
সেটা আঙুল গুনতে শুরু করলে গোটা দুয়েক কর গোনার পরে মাথা চুলকু করত, আর গুনতি সব
মিলিয়ে পুরো কড়ে আঙুল পেরোতো না। না ছিলো এত গাড়ি, না ছিল এত হাইওয়ে, না ছিল এত
ঢাবা। তবে হ্যাঁ ছিল আদী-অকৃত্রিম পাঞ্জাবীর হোটেল। ইতি-উতি, রাস্তার ধারে, সিনেমা
হলের পাশে। আর সেখানে পাওয়া যেত অতি উমদা “পাঞ্জাবীর হোটেলের মাংস” আর “তড়কা-রুটি”।
পাড়ায় পাড়ায় তন্দুরী মুর্ঘ তখন বহুদূর অস্ত। পাঞ্জাবী খানার প্রতি আমার ভালবাসা ওই
টুকটুকে লাল পাঞ্জাবী মাংস আর তড়কা-রুটি থেকেই শুরু। বাইরে বেড়াতে গেছি যখনই, বাবা
মায়ের সঙ্গে এখানে সেখানে খেয়েছি, আর তার সিংহ ভাগ খাবারের দোকানের মালিকই
পঞ্চনদের মানুষ। কিছুতেই মাথায় ঢুকতোনা, সাধারন ডাল, কিম্বা আলুকপি এদের হাতে পড়ে
এরকম দুরন্ত জিভে জল আনা স্বাদের হয় কি করে। অথচ গোটা রান্নাই করল আমাদের সামনে।
টেবিলে বসে বসে দেখতে পাচ্ছি। আমার মা উঁকিঝুঁকি মেরে বেশ কিছুটা দেখে মনে মনে
মুখস্ত করে নিতো। কয়েকটা প্রনালী বাড়িতে এসে প্রায় সেই রকম করে ফেলাও গিয়েছিল, কিন্তু
বেশীরভাগ সময়ে স্বাদ যেন একটু অন্যরকম হয়েই যেত।
আমি যখন রান্নাবান্না করতে চেষ্টা শুরু করলুম, তখনও অনেক বার করে
চেষ্টা-চরিত্তির করে গেছি, যাতে করে বাড়িতে রান্না পাঞ্জাবী খানা, ওই পাঞ্জাবী
হোটেলের মত হয়। কিন্তু পরিশেষে সেই ব্যার্থতাই জুটেছে। তার পর ইতিউতি চেষ্টা।
বইপত্তর, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা, পরীক্ষা-নিরিক্ষা। কিন্তু সবচেয়ে কাজে
দিয়েছে, কিছু পাঞ্জাবী বন্ধুবান্ধবের টিপস। অবশ্যই যারা রান্নাবান্না করে, খাইয়ে
টাইপ। সব মিলিয়ে অনেক চেষ্টায় কিছুটা স্বাদ খাড়া করতে পেরেছি, যেটা এখানে আমার
পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিই।
প্রথমে আসি মেনুর কথায়। এই নিচে আমি গোটা কয়েক পাকপ্রনালী দিচ্ছি,
যেগুলো করা সহজ, এবং বাঙালি রান্নাঘরে এই উপকরন সহজেই পাওয়া যায়। তন্দুরী, টিক্কা
এসবের ঝামেলায় যাচ্ছিনা। কেননা তার জন্যে যে উনুন লাগে তা আমাদের সাধারন রান্নাঘরে
পাওয়া যায়না। সে উনুন তৈরি অবশ্য তেমন কিছু বিরাট ব্যাপার নয়, তবে কিনা, আজ এই
পরিসরে সে নিয়ে আলোচনা মুলতবি রেখে আপনাকে ডিউ স্লিপ দিলুম। আজ্ঞে হ্যাঁ, পাঞ্জাবী
হোটেলের মত, এটিও আমার ছোটোবেলার বস্তু। এখনকার ছোটোরা যারা রেশনের দোকানে লাইন
দেয়না, তারা জানবেনা ডিউ স্লিপ কাকে বলে। এবার আসি মেনুতে। আজ রান্না হোক ভাত ও
রুটি। অবশ্যই পাঞ্জাবী কায়দায়। সেই সঙ্গে ডাল। সেটাও ভাত এবং রুটির জন্যে দু ধরনের
ডাল। এছাড়া কেউ নিরামিষ খেলে তাঁর জন্যে পনীর। পনীর , মাখন , ঘি এসব ছাড়া পাঞ্জাবী
রান্না হয়না। কাজেই আপনি যদি স্বাস্থকর কিছুর সন্ধানে থাকেন, স্বাদ থেকে কাটছাঁট
করতে থাকুন। অধমের পরামর্শ হলো, এ রান্না আপনি করবেন কালেভদ্রে। কাজেই এক দিনের
অনিয়মে এমন কিছু এসে যাবে না। পনিরের পরে, যাঁরা আমিষাসী, তাঁদের জন্যে থাক একটা
মুর্গির হালকা কিছু। আজ রান্না হোক দাল মাখনি, তন্দুরি রুটি (হ্যাঁ তন্দুর ছাড়াই
হবে), আচারি পনির, জিরা রাইস, দাল তড়কা (আমাদের রুটি তড়কা নয় কিন্তু) আর কঢ়াই
মুর্ঘ। জিরা রাইস খাবেন দাল তড়কা দিয়ে, তন্দুরি রুটি দিয়ে দাল মাখনি। মুর্গি আর
পনির আপনার ওপরেই ছাড়লাম। আপ-রুচি-খানা। একে একে পাকপ্রনালী গুলো নিচে দিয়ে দিলাম,
স্রেফ স্যালাডটা বাদে। আমার ধারনা ওটা আপনি আমার চেয়ে অনেক ভালো পারেন।
তন্দুরি রুটি
----------------
*উপকরন*
ময়দা বা আটা ৫০০
গ্রাম, টক দই এক কাপ, সাদা তেল ৪ টেবল চামচ, বেকিং পাউডার এক চা চামচ, খাবার সোডা
দু চা চামচ, নুন এক চা চামচ, চিনি দু চা চামচ, গরম জল এক কাপের মত, কালোজিরে এক চা
চামচ।
*প্রনালী*
আপনি ময়দা বা
আটা যে কোনোটা দিয়েই করতে পারেন। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ অবশ্য আটা। নরম হয় বেশী। আটা, বেকিং পাউডার, খাবার সোডা, নুন, চিনি ও কালোজিরে একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এক কাপ দই ভাল করে
ফেটিয়ে নিয়ে আটায় ঢেলে মাখতে হবে, সঙ্গে
দু টেবল চামচ তেল দিতে হবে। ভাল করে মিশে গেলে গরম জল অল্প অল্প ঢেলে আটা মাখতে
হবে নরম করে। ১০ মিনিট ঠাসতে হবে। ঠাসা কম হলে কিন্তু চলবে না। তার পর এক টেবল
চামচ তেল ভাল করে মাখিয়ে আটা মাখাটা একটা পাত্রে রেখে শক্ত করে ঢাকা আটকে ৩ ঘন্টা
রেখে দিতে হবে। বায়ু চলাচল যেন না করতে পারে পাত্রের ভেতর।
৩ ঘন্টা পর, আর এক চামচ তেল ভাল করে মাখিয়ে নিয়ে
লেচি কেটে নিতে হবে বড় বড় করে। এর পর সাধারন রুটির তুলনায় একটু মোটা করে বেলে নিতে
হবে।
চাটু ভাল করে
গরম করতে হবে। নন স্টিক চাটু চলবেনা। তবে হাতল ওয়ালা চাটু হলে ভাল হয়। বেলা রুটির
এক পিঠে ভাল করে জল মাখাতে হবে আঙ্গুল দিয়ে। জল মাখানো দিকটা চাটুতে দিতে হবে। আঁচ
একটু কমের দিকে রাখাই ভাল, নইলে রুটি পুড়ে যাবে। ১ মিনিটের মধ্যেই রুটির ওপর ফুলে
ফুলে উঠবে। এবারে চাটু ধরে উলটে দিতে হবে। চাটুর হ্যান্ডেল ধরে উলটে দিলে ভাল।
হ্যান্ডেল না থাকলে সাঁড়াশি দিয়ে ধরে উলটো করে আগুনের ওপর একটু ঘুরিয়ে নিতে হবে।
তাতেই সেঁকা হয়ে যাবে অন্য পিঠ। এবার চাটু থেকে পাতলা খুন্তি দিয়ে রুটি ছাড়িয়ে
নিয়ে কাপড়ের ওপর রেখে দিতে হবে।নন-স্টিক চাটু হলে, রুটি আটকাবেনা, কাজেই আপনি উলটো
করে সেঁকতেও পারবেন না। গরম গরম খাওয়াই ভাল।
দাল মাখনি
---------
*উপকরন*
খোশা সমেত কালো
ডাল (একটু বড় মুদির দোকান, বিগ বাজার, রিলায়েন্স, অবাঙালি পাড়ার দোকানে পাবেন)
আর রাজমা আধ কাপ করে আর সঙ্গে আধ মুঠো খোশা
সমেত গোটা মুগ আর আধ মুঠো ছোলার ডাল।
২ টো বড় পেঁয়াজ, ৪ টে টমেটো, ১ টা বড় রসুন, ১.৫ ইঞ্চি আদা, কাঁচালঙ্কা ৩-৪ টে, ধনে পাতা, জিরে গুঁড়ো দুই চা চামচ, ধনে গুঁড়ো চার চা চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো দুই চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়ো ২ চা চামচ (প্যাকেটের
টা নেবেন, বাঙালি গরম মশলায় হবে না), কাসুরি
মেথি আধ কাপ, ক্রিম (আমুলের ক্রিমটা দিয়ে দিব্যি হয়)আধ
কাপ, সাদা তেল আধ কাপ আর মাখন ৫০ গ্রাম।
*প্রনালী*
ডাল গুলো আর
রাজমা ধুয়ে জলে ভিজিয়ে দিন। ৩-৪ ঘন্টা ভিজবে। তার পরে প্রেশার কুকারে অল্প নুন
দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। ৪ থেকে ৫ টা সিটি। অল্প আঁচে।
টমেটো কেটে
মিক্সিতে পেস্ট করে নিতে হবে। আদা রসুন বেটে নিতে হবে। পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কেটে
নিতে হবে। কাসুরি মেথি শুকনো কড়ায় অল্প নেড়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
এবার কড়ায় সাদা
তেল দিয়ে পেঁয়াজ ভাজতে হবে। একটু লালচে হয়ে এলে আদা রসুন বাটা দিতে হবে। ২ মিনিট
নেড়ে তার পর টমেটো পেস্ট দিতে হবে। সঙ্গে একটু ধনেপাতা কুচি, আর আধ চামচ লাল লঙ্কা গুঁড়ো।
টমেটো একটু
রান্না করে নিতে হবে ৩-৪ মিনিট। এবার কুকার থেকে ডাল সেদ্ধ কড়ায় ঢালতে হবে। নাড়তে
হবে। জল খুব কম মনে হলে একটু ফুটন্ত জল দিতে হবে। ঠান্ডা জল দেওয়া যাবেনা।
ফুটে যাবার পর ৫
মিনিট রান্না হতে দিতে হবে।এর পর চার চা চামচ ধনে গুঁড়ো আর দুই চা চামচ করে জিরে
আর গরম মশলা গুঁড়ো দিতে হবে। কাসুরি মেথি গুঁড়োটা দিয়ে দিতে হবে সবটুকু।
এবার চার টেবল
চামচ (৫০-৬০ গ্রাম) মাখন গরম করে গলিয়ে, তাতে এক চা চামচ শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো
দিতে হবে। দিয়ে সমস্তটা ডালের ওপর ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার এক কাপ ক্রিম ফেটিয়ে নিয়ে
ডালে দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। আর ধনে পাতা ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে নিলেই দাল
মাখনি তৈরি। মনে রাখবেন, ধনে পাতা দু বার দিতে হয়। এক বার টমেটোর সঙ্গে আর এক বার
শেষে।
আচারি পনির
------------
*উপকরন*
পনির ২০০ গ্রাম, একটা মাঝারি ক্যাপসিকাম, একটা বড় টমেটো, এক কাপ টক দই, ধনে পাতা, দেড় চা চামচ আদা বাটা, এক চা চামচ লাল লংকা গুঁড়ো, আধ চা চামচ কালো জিরে, আধ চা চামচ হিং, সাদা তেল।
ভাজা মশলার
জন্যে - এক চামচ জিরে, এক চামচ ধনে, এক চামচ সরষে, আধ চামচ মেখি, ২ টো শুকনো লঙ্কা
*প্রনালী*
ভাজা মশলার
উপকরন শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
ক্যাপসিকাম আর
টমেটো ছোটো করে কেটে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে।
এবার কড়ায় তেল
দিয়ে তেল গরম হলে প্রথমে কালোজিরে তার পরে হিং দিতে হবে। তার পর আদা বাটা আর লাল
লংকা গুঁড়ো দিয়ে একটু নেড়ে নিতে হবে। আদা রান্না হয়ে গেলেই (দেড় থেকে দু মিনিট) টমেটো ক্যাপসিকামের পেস্ট দিতে হবে। তার
ওপর ভাজা মশলার গুঁড়োটা ছড়িয়ে দিতে হবে।
এবার এই মিশ্রন
আস্তে আস্তে নাড়তে হবে যতক্ষন টা তেল আলাদা হয়ে আসে।।তেল দেখা গেলেই বুঝতে হবে
মিশ্রন তৈরি।।এবার টক দই ভাল করে ফেটিয়ে মিশ্রনে দিতে হবে, আর নাড়তে হবে। ভাল করে মিশে গেলে পনির
ছোটো টুকরো করে দিয়ে দিতে হবে। ৫-৬ মিনিট রান্না করতে হবে। জল কমে আসবে। ৫-৬
মিনিট পর নামিয়ে নিতে হবে
জিরা রাইস
---------
*উপকরন*
এক কাপ বাসমতি চাল (বড় কাপ), তিন চা চামচ
গোটা জিরে, চারটে শুকনো লংকা, একটা বড় এলাচ, আধ ইঞ্চি দারচিনি, একটা তেজ পাতা, ধনে
পাতা, সাদা তেল ৩ টেবল চামচ (ঘি হলে আর ভাল), নুন। ব্যাস, আর কিচ্ছুটি চাইনা।
*প্রনালী*
চাল এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এক ঘন্টা পর
জল থেকে চাল ছেঁকে তুলে জন ঝরিয়ে নিন। এবার একটা ছোটো হাঁড়ি বা বড় প্যানে সাদা তেল
দিন। খুব বেশী গরম হবার আগেই তেজ পাতা, লংকা, দারচিনি আর বড় এলাচ দিয়ে দিন। বড়
এলাচটা একটু ফাটিয়ে দেবেন। একটু নেড়ে নিয়ে এবার জিরে দিন। জিরে একটু ভাজা হয়ে
গেলেই চাল দিন। দেখবেন জিরে যেন পুড়ে কালো না হয়ে যায়। চাল মিনিট খানেক অল্প আঁচে
নাড়াচাড়া করে জল দিতে হবে। জলের মাপ বলে দিই। যে কাপে চাল মেপেছেন, সেই কাপের পৌনে
দু কাপ জল নিন। বেশী যেন না হয়, কম ও যেন না হয়। জল ঢেলে দিয়ে আঁচ জোরে করুন, ফুটে
গেলে ঢাকা চাপা দিয়ে আঁচ কম করে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকা খুলে দেখুন চাল কতটা হয়েছে।
এই পর্যায়ে বড় এলাচ, তেজ পাতা আর দারচিনি ভাত থেকে তুলে ফেলে দিতে পারেন। রেখে
দিলেও অবশ্য খুব কিছু তফাত হয়না। এবারে আঁচ একদম কম করে দিন। যখন মনে হবে ভাত ৯০%সেদ্ধ
হয়ে গেছে, তখন আঁচ বন্ধ করে ঢাকা চাপা দিয়ে ১০-১২ মিনিট দমে রেখে দিন। বাকি ভাত
আপনিই হয়ে যাবে। এবার ধনে পাতা কুচিয়ে ওপরে ছড়িয়ে দিন।
দাল তড়কা
---------
*উপকরন*
আধ কাপ অড়হর ডাল, আধ কাপ ছোলার ডাল, একটা বড়
পেঁয়াজ, একটা বড় টমেটো (অথবা মাঝারি আকারের হলে দেড় খানা), তিন চামচ সাদা তেল। দুই
চা চামচ ঘি, এক চিমটে হলুদ, কাঁচা লংকা ৩-৪ খানা, এক চা চামচ গোটা জিরে, এক চা
চামচ লাল লংকা গুঁড়ো, এক ইঞ্চি দারচিনি, ৩-৪টে লবঙ্গ, আধ চা চামচ হিং, রসুন কুচোনো
৪ চা চামচ, একটা গোটা শুকনো লংকা, ধনে পাতা।
*প্রনালী*
দু রকমের ডাল ভিজিয়ে রাখুন ঘন্টা তিনেক।
তার পরে প্রেসার কুকারে ৩ টে সিটি মারুন। সেদ্ধ হয়ে গেলে একটা হাতা বা বড় চামচ
দিয়ে ভাল করে ঘেঁটে দিন, যাতে কিছুটা ডাল পিষে যায়, তবে সবটা নয় কিন্তু।
এবারে কড়ায় সাদা তেল গরম করুন। গরম হলে
তাতে জিরে, লবঙ্গ আর দারচিনি দিন। একটু ভাজা হলেই পুরো পেঁয়াজ কুচোনো ওতে দিয়ে
দিন। পেঁয়াজ ভাল করে ভাজুন, তবে পুড়িয়ে বাদামী করে ফেলবেন না। তাতে ডালের স্বাদ
গন্ধ নষ্ট হবে। মোটামুটি হালকা সোনালী করে ভাজুন। পেঁয়াজ সোনালী হলে, কুচোনো টমেটো
আর কাঁচা লংকা দিয়ে দিন। লাল লংকা গুঁড়ো আর হলুদ গুঁড়োও দিন। নাড়তে থাকুন, টমেটো
যতক্ষন না গলে গিয়ে রান্না হয়ে যাচ্ছে। মিনিট তিন চার লাগার কথা।
এবারে করায় ডাল ঢালুন। ভাল করে মেশান। যদি
পাতলা করতে চান অল্প, তাহলে কিন্তু গরম জল দেবেন। ঠান্দা জল দেওয়া চলবেনা। নুন দিন
ডালে, স্বাদ মত। এবার ৫-৬ মিনিট রান্না হতে দিন। তার পর ধনে পাতা কুচো ছড়িয়ে দিন।
এবারে শেষ পর্যায়। ডালে তড়কা দেওয়া। একটা
ছোটো হাতায় ঘি গরম করুন। তাতে শুকনো লংকাটা দিন, আর রসুন কুচি দিন। একটু খানি
নেড়েচেড়েই হাতা শুদ্ধু ডালের ওপরে ছড়িয়ে দিন।
কড়াই মুর্গ
--------
*উপকরন*
মুর্গি ৫০০ গ্রাম, দেড় ইঞ্চি আদা, পাঁচ কোয়া রসুন (বাটার পর দুটো মিলিয়ে অন্তত ৪
চা চামচ হওয়া চাই), এক চা চামচ জিরে
গুঁড়ো, দেড় চা চামচ ধনে
গুঁড়ো, এক চা চামচ লঙ্কা
গুঁড়ো, দুই চা চামচ বেসন
আগে থেকে শুকনো খোলায় কিছুটা সেঁকে নেওয়া, দুই চা চামচ গোটা ধনে, এক চা চামচ গোটা
জিরে, আধ চা চামচ গোটা
মৌরি, গোটা দশেক গোলমরিচ, একটা শুকনো লংকা, তিন চা চামচ কাসুরি মেথী, দু খানা টমেটো, দু খানা পেঁয়াজ, গোটা গরম মশলা (এক
ইঞ্চি দারচিনি, ৩-৪ টে ছোটো এলাচ,৬-৭ টা লবঙ্গ, এক খানা বড় এলাচ), দু টেবিল চামচ সাদা
তেল, এক টেবিল চামচ ঘি, এক টেবিল চামচ মাখন, একটা ছোটো ক্যাপসিকাম, হলুদ ও নুন, এক টেবিল চামচ ভিনিগার, এক টুকরো কাঠ কয়লা।
*প্রনালী*
একটা বড় পাত্রে
মুর্গি মাখতে হবে, আর সেই পাত্রে যেন ঢাকা বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকে। মুর্গি ধুয়ে
নুন ভিনিগার অর্ধেকটা আদা রসুন বাটা আর দু চামচ কাশ্মিরি লংকা গুঁড়ো দিয়ে মেখে
রাখুন। একটা ছোটো বাটিতে এক চামচ ঘি দিন আর বাটিটা মুর্গী যে পাত্রে রেখেছেন তার
মধে রাখুন, এবারে কাঠ কয়লার টুকরোয় ভাল করে আগুন ধরিয়ে সেটা ওই ঘিয়ে মধ্যে দিন। কুল
কুল করে ধোঁয়া বেরোবে। সঙ্গে সঙ্গে পাত্রের ঢাকা এঁটে বন্ধ করে দু ঘন্টা রেখে দিন।
গোটা জিরে, গোটা ধনে শুকনো
লঙ্কা, গোলমরিচ, মৌরি একসঙ্গে শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করে রাখতে হবে।
পেঁয়াজ একেবারে কুচি
কুচি করে কেটে নিতে হবে। আর অল্প পরিমান খুব বড় চৌকো টুকরো করতে হবে। ক্যাপসিকাম ও
ওই ভাবে টুকরো করতে হবে। টমেটো গ্রেট করে নিতে পারলে ভাল হয়, কেননা এতে খোসাটা
নিজে থেকেই আলাদা হয়ে যায়। একান্ত না পারা গেলে, মিক্সিতে পেস্ট করে নিতে হবে।
জিরে গুঁড়ো, ধনে
গুঁড়ো, লংকা গুঁড়ো আর সেঁকা বেসন মিশিয়ে রাখতে হবে।
শুকনো কড়ায় গোটা
মশলা – দারচিনি, লবঙ্গ, ছোটো এলাচ, বড় এলাচ, কয়েক দানা গোলমরিচ, তেজ পাতা আর একটা
শুকনো লঙ্কা এক মিনিট নেড়ে নিতে হবে। তার পরে কড়ায় ওই মশলার ওপরেই ঘি দিতে হবে। এক
মিনিট পর ঘি গরম হএ মশলা ভাজা শুরু হলেই সাদা তেল দিতে হবে। সাদা তেল গরম হয়ে গেলে
এবার পেঁয়াজ ছাড়তে হবে।
পেঁয়াজ একদম লাল লাল
করে ভাজতে হবে। লাল হয়ে গেলে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে একটু ভাজতে হবে। এবার আদা-রসুন বাটা
দিতে হবে। মিনিট খানেক নেড়ে নেড়ে ভাজার পর এতে টমেটো দিতে হবে। টমেটো পুরো রান্না
হতে দিতে হবে। এতে অন্ততঃ ৫-৭ মিনিট সময় লাগবে। তেল ছেড়ে আসছে দেখলে বোঝা যাবে
টমেটো রান্না হয়ে গেছে। এবারে এতে গুঁড়ো মশলা (জিরে+ধনে+বেসন+লংকা গুঁড়ো) মেশাতে
হবে। এক মিনিট নাড়াচাড়া করে, আগে থেকে মেখে রাখা মুর্গি এতে দিয়ে দিতে হবে।
মুর্গি কড়ায় দিয়ে
ভাল করে মশলায় মাখিয়ে ৩-৪ মিনিট রান্না করে নিয়ে তাতে এবার পরিমান মত নুন দিতে হবে
আর জল দিতে হবে। জল ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে ঢাকনা চাপা দিয়ে ১৫ মিনিট রান্না হতে দিতে
হবে।
১৫ মিনিট পর ঢাকনা
খুলে দেখতে হবে জল কতটা আছে, যদি বেশী থাকে তো আঁচ বাড়িয়ে একটু জল শুকিয়ে নিতে
হবে। একটু গা মাখা হবে, বেশি ঝোল হবে না। এবার ভাজা মশলা গুঁড়ো, বড় বড় করে কেটে
রাখা পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকাম আর কাসুরি মেথি দিয়ে নেড়ে চেড়ে দু তিন মিনিট রান্না করতে
হবে। নামাবার আগে একটি মাখন দিয়ে দিতে হবে। এটা না হলে কিন্তু স্বাদ আসবে না।
নামাবার পর ওপরে ঝিরি ঝিরি করে কেটে রাখা আদা (জুলিয়ন কাট) ছড়িয়ে দিতে পারেন।
----
অনেক গুলো রান্না হলো। খেয়ে তার পরে
আপনাদের মন্তব্য পেলে ভাল লাগবে। পাঞ্জাবী দিয়েও বাঙালিকে চেনা যায়। আর সে চেনার
রাস্তা গেছে তার জিভ আর হৃদয় দিয়ে।
এর পরের বার আসবো তন্দুরি আর টিক্কার
রহস্যভেদ করতে। ততদিন ধৈর্য্য ধরতে আসুবিধে হলে, আমার কন্যার কীর্তি দেখতে পারেন
এখানে – https://www.youtube.com/watch?v=efVqNb-krQ0
বঁ-আপেতিত।
ছবিগুলো তো আগেই দেখা, সঙ্গে তার সুস্বাদের একটা বর্ননাও। বলতে গেলে, জামায় পড়া জিভের জলও এতদিনে শুকিয়েই গেছিল! লেখাটা পড়ে, আবার নোলা জেগে উঠল আজ! শুধু পাকপ্রণালীর জায়গায়, এরকম একটা সুরসিক লেখা পেয়ে - যেখানে মুড়ো-ল্যাজাটাও পেটির মতই সুস্বাদু - দুদিনের রাত-জাগার ক্লান্তিটা কেটে গেলো ভালোই।
উত্তরমুছুনএগুলো রান্না করতে যাবার দুঃসাহস করা উচিৎ হবে কিনা সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে!!
আর হ্যাঁ, লেখার দিক থেকে কিনা সেটা ভবিষ্যৎ বলবে, তবে রান্নার দিক থেকে তোমার উত্তরাধিকারী তৈরি হয়ে গেছে, সেটা বলাই যায় ভিডিওটা দেখে। :)
তিনি গোকুলে বাড়ছেন।
মুছুনUff ... Osadharon lekha.. Trust me Somnath da lekhata porte portei mukhe jol eshe gelo... ��������
উত্তরমুছুনএবারে তাহলে রান্না গুলোও হয়ে যাক। রান্না করে জানিও, কেমন লাগল।
মুছুনachha tui ki khali ranna banna nie likhbi? barite tho khali oi ak alochona abr ekhaneo? onno kichi lekh.
উত্তরমুছুন