সাধারনত
বেড়াতে বেরোলে বা বলা ভালো বেড়াতে বেরোবার সুযোগ পেলে আমার বেশ আনন্দই হয়। তাও
আবার সেই বেড়ানো যদি হয় বিন্-খরচে, তাহলে তো এপাশ ওপাশ দেখে নিয়ে
নিজের গায়ে একটা চিমটি কেটে, উফ্ বলে চমকে উঠি। বিশ্বাসই
হতে চায়না। কিন্তু এবারে যখন সত্যি সত্যিই এরকমটা ঘটল, তখন
মনের মধ্যে ফুর্তিটা, একটা চাপা আশঙ্কার সঙ্গে মিশে গিয়ে
কেমন যেন নেতিয়ে পড়ল। তাহলে খুলেই কই।
আসলে আমার এবারের বেড়াতে যাবার কারন (কারন ও
একটা আছে বই কি!) আমার কর্মক্ষেত্র। সোজা কথায় বলতে গিয়ে দেখছি, গলাটা প্রচ্ছন্ন গর্বে কেমন যেন ভারি ভারি ঠেকছে। তবে বলবার পরে লক্ষ্য
করলুম, তলপেটের ভেতরটা, কেমন যেন,
একটুখানি...। আসলে এই গর্বের সঙ্গে, হাঁড়িকাঠে
চড়ার আগে, ঢাক-ঢোল শুনে পাঁঠার গর্ব করার অনেক মিল রয়েছে।
আমাকে যেতে হবে নাগপুর। বহু প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ এই অঞ্চলের মালভুমি।
ভুপ্রকৃতি কিঞ্চিত বন্ধুর হলেও মা ধরিত্রী কৃপন নন। এখানে আশপাশ অঞ্চলে মাটির নিচে
লুকিয়ে আছে প্রচুর কয়লা।মাটির খুব বেশী নিচেও নয়। এখানে যে খনি গুলো থেকে কয়লা
তোলা হয়, সেগুলোকে একত্র করে গড়ে উঠেছে ভারত সরকারের
প্রতিষ্টান – ওয়েস্টার্ন কোলফিল্ডস
লিমিটেড। হাজার হাজার মজদুর, কোথাও দু শিফটে, কোথাও তিন শিফটে অবিরাম খেটে চলেছে। এই এত সংখ্যক মজুরদের ঠিকঠাক মাইনে
দেওয়া, জটিল সমস্ত হিসেব নিকেষ করা, মজুদ
মালপত্রের হিসেব রাখা ইত্যাদি ঠিক সময় মত সম্পন্ন করা খুব কঠিন ব্যাপার। তাই
কর্তৃপক্ষ এই কাজে কম্প্যুটার ব্যবহার করে থাকেন। এই কম্প্যুটার এখানে বসেছে ১৯৯০
সালে। আপনি হয়ত বলবেন তার মানে খুব বেশী দিন হয়নি, কিন্তু
যাঁরা কম্প্যুটার নিয়ে নাড়া চাড়া করেন, তাঁদের কাউকে জিজ্ঞেস
করে দেখুন, তার ভুরু দুটো অনেক খানি ওপরে ঊঠে যাবে। সত্যি
কথা বলতে কি, এই সময়ের মধ্যে কম্প্যুটারের জগতে এত বিপুল
পরিমান পরিবর্তন ঘটে গেছে, যে এই ৯-১০ বছরের পুরনো পদ্ধতিতে
কাজ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই নতুন পদ্ধতি, নতুন
বাতাবরন। এই কাজের বরাত পায় যে সংস্থা, সেখানেই আমি কর্মরত।
আমার কাজ হলো এই কয়লা খনি গুলোর মধ্যে যে কোন একটি তে গিয়ে এই নতুন পদ্ধতি তে পুরো
ব্যাপারটা কে চালিয়ে দেওয়া। তার পর, বাকি খনি গুলোতেও সেই
ভাবে সবকিছু পরিবর্তন করা হবে। বিগত ১০ বছর ধরে পুরনো ব্যবস্থায় বিপুল পরিমান তথ্য
জমা হয়ে রয়েছে। আমাকে সেই তথ্য নতুন পদ্ধতিতে নিয়েও আসতে হবে। ভাবছেন গাড়িটা যখন
তৈরি হয়েই গেছে, তখন তাকে চালাতে দ্বিধা কেন? ওইখানেই তো করলেন ভুল। গাড়ি কোথায়? নতুন সফটওয়ার
সর্বদাই একটা বুনো ঘোড়া। আমার কাজ হলো সেই বুনো ঘোড়াকে লাগাম পরিয়ে, পোষ মানিয়ে তালিম দেওয়া, আর নতুন মালিকের হাতে তুলে
দেওয়া। তথ্য পাচারটা এর সঙ্গে ফাউ। ভাবছেন তথ্য পাচারটা খুব সহজ? উঁহু, কেঁদো বাঘে তাড়া করলে, পাগলা
কুকুরের তোয়াক্কা করে কোন মুর্খ? বাকি টা বুঝে নিন। জেনে
রাখবেন, মুর্খ আমি মোটেও নই, বুদ্ধি
আমার যথেষ্টই আছে। আর আছে বলেই না বুদ্ধি ভ্রংশ হয়, মাঝে
মাঝেই গুবলেট পাকায়।
প্রথমেই
বলে রাখি, আমি হালকা হয়ে ভ্রমন করতে ভালোবাসি। কেননা
আমার নিজের বপুটা কিঞ্চিত ভারির দিকে হওয়াতে সেটার কারনে আমাকে কিছুটা
মেহেনত-মজদুরি করতে হয়। কিন্তু শুধু ভালোবাসলেই তো হলো না। প্রেম-ভালোবাসার
ব্যাপারে প্রথম বাধাটা বরাবর বাড়ির দিক থেকেই আসে। এই ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্ন এলো,
আমাকে যেতে হচ্ছে ঠিক কতদিনের জন্য। সেই অনুযায়ী বাক্স-প্যাঁটরা,
তোরঙ্গ, পুঁটলি ইত্যাদির বপু নির্দিষ্ট হবে।
অফিসে প্রশ্নটা করতেই, মাথা-টাথা চুলকোনো একটা জবাব পেলুম – ছয় মাস, এক বছর......∞ (ইনফিনিটি বা অসীম)। কলন শাশ্ত্রে (Calculus) সীমা উল্লেখ করা হয় দুটো সংখ্যা দিয়ে। যেটা
নিম্নতম, সেটা থেকে একটা তীরচিহ্ন এঁকে তার
উর্ধসীমার দিকে নির্দেশ করে তীরের ডগায় উর্ধসীমা লেখা হয়। এখানে নিম্ন সীমার শুরু
দেখলাম ছমাস। ব্যাস উর্ধসীমার আর কোনো প্রয়োজন রইলনা। কেননা নিম্নসীমাতেই আমি আমার
মালপত্রের উর্ধসীমার বেশ একটা পরিস্কার আকার অনুভব করতে পারছিলুম। শেষপর্যন্ত যখন
বাক্স-প্যাঁটরা বাঁধা হলো, তখন তাদের আকৃতি দেখে আমার
চোখদুটো কোটর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসে কয়েক বার লাফালাফি করলোনা বটে, তবে স্যুটকেস টা তুলতে গিয়ে মনে হলো, এটা নিয়ে,
নাগপুর না গিয়ে, চাঁদে যাওয়াটা বরং
বুদ্ধিমানের কাজ, কেননা চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর ছয় ভাগের
এক ভাগ মাত্র।
তা
সে যাই হোক, এতদিনের জন্য বাড়ি ছাড়ছি, তার ওপর বেরোবার সময় নামলো তেড়ে বৃষ্টি। “দেশে-বিদেশে” তে পড়েছি, বাড়ির বাইরে থাকলে মানুষ কেমন যেন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়ে, তখন পাশের বাড়ির বেড়াল মারা গেলেও, বালিসে মুখ গুঁজে,
তিন দিন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। ভাবুন একবার।
একে বর্ষা, তার ওপরে অসীম সময়ের জন্য বাইরে যাচ্ছি, ফলে, শুরুতেই কাকভেজা হয়ে গেলাম। বাড়ি শুদ্ধু লোক
স্টেশনে যাচ্ছে আমাকে গাড়িতে তুলতে। গোদের ওপর বিষফোড়া, সঙ্গে
যাচ্ছে ঋজু, আমার সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট বড়দাদা। না না,
ওর বাবা মা আমাদের প্রতিবেশি একথা ঠিকই, কিন্তু
ও তো আমাদের বাড়ির ই ছেলে। আমার ছোট্ট বড়দাদা, যে কিনা এক
মূহুর্তের জন্যও চুপ করে থাকতে পারে না। কিন্তু আজকে যেন এই ছোট্ট মানুষটাও কিছু
একটা আঁচ করতে পেরে চুপচাপ হয়ে গেছে। হঠাৎ দেখলাম আমার গলাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
ঋজুর সেই গলা জড়ানো-কোলে চড়া অবস্থায় ওকে নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হলুম। বৃষ্টির
ফোঁটা পড়লো গায়ে, বৃষ্টির ফোঁটা পড়ল চোখে-মুখে। চোখের ভেতরেও
পড়ল বোধহয়, নাহলে ঝাপসা দেখছি কেন ঋজু কে?
রাত্রি
আটটা কুড়ি তে ট্রেন, স্টেশনে পৌঁছে গেছি প্রায়
চল্লিশ মিনিট আগে। আমরা তিনজন সহকর্মী একসঙ্গে যাবো। এবং এই কাজে আমরাই হবো
পথপ্রদর্শক ( হাঁড়িকাঠের পয়লা পাঁঠা )। অফিস থেকে বাড়ি কাছে বলে, আমাদের তিনজনের টিকিট ছিল সৌমেনের কাছে। বাবা, মা,
ঋজু আর কমলাদি (ঋজুর মা) কে এক জায়গায় বসিয়ে খুঁজতে বেরোলুম বাকি
দুজন কে। এদিকে তখন প্ল্যাটফর্মের ওপর হুলুস্থুলু কান্ড। একদিকে কোথাকার যেন হাজার
খানেক কাঠের পেটি চালান যাবে, অন্য দিকে প্রচুর ফৌজি লোকজন
তাদের পল্টনী মালপত্রের সঙ্গে স্টেশনে হাজির হয়েছে। একদম ধারের প্ল্যাটফর্ম বলে
এটা কিঞ্চিত সরু গোছের। অঝোরে বৃষ্টি পড়েই চলেছে, সঙ্গে ঝোড়ো
হাওয়া। প্লাটফর্মের মাঝখানের ছাঊনি ছেড়ে ধারে গিয়ে ভিজতে রাজি নয় কেউই। আশি-নব্বই
জন বড়বাজারের মুটে, লাল (এবং নীল) কোর্তা পরিহিত হাওড়া
স্টেশনের মালবাহক এবং গদিওয়ালা মাড়োয়াড়িদের সঙ্গে ঝগড়া লেগেছে ফৌজি অফিসার এবং
জওয়ানদের। অত্যুৎসাহী কিছু অবাঞ্ছিত মজাদেখনেওয়ালা ও জুটে গেছে। এর মাঝখানে ট্রেন
ধরতে আসা বাদবাকি যাত্রিরা (তাদেরও মালপত্র নেহাত অল্প নয়) রাস্তা না পেয়ে
লাগিয়েছে বেজায় চেল্লামেল্লি। ভারতবর্ষের সরকারি এবং বেসরকারি বেবাক ভাষায় মানুষ
উত্তেজিত হলে কিভাবে সেটা প্রকাশ করে, তার একেবারে জীবন্ত
প্রদর্শনি। কেবল শুনবেন না বাংলা। উত্তেজিত হলে বাঙালি নিজের ভাষায় কথা বলতে
একেবারেই ভালোবাসে না। কর্তা যদি চিৎকার করে আগুয়ান মালবাহক কে দাঁড়াতে বলেন,
তো গিন্নি বৃষ্টির দিকে নাচতে নাচতে এগিয়ে যাওয়া ছেলেটাকে ধমকান।
তার ওপর মাইক্রোফোনে একনাগাড়ে কয়েক হাজার কয়েক শো কি যেন বিদঘুটে সংখ্যা আর তার
সঙ্গে “আপ” আর “ডাউন” বলে চলেছে। আমি তখন
দুপাশের এই ডামাডোলের মাঝখানে সৌমেন আর বুয়া কে খুঁজতে এতই ব্যাস্ত, যে ওপরে নিচে তাকাবার এতটুকু ফুরসৎ নেই। এমন সময় শুনতে পেলুম, মাইকে বলছে “আহমেদাবাদ এক্সপ্রেস”। তখন
খেয়াল করলাম, মাইকের কথাগুলো আসলে ট্রেন ছাড়ার খবরাখবর।
বুদ্ধি আমার আছে, তাই তো বুঝলুম, শুধু
এই হইহট্টগোলের মধ্যে পড়ে একটু গুবলেট হয়ে গিয়েছিল।
সৌমেন
এবং বুয়া দুজনেই “অধুনা পশ্চিমবঙ্গ নিবাসী”। অর্থাৎ পূর্বতন “দ্যাশের
লোক”। তবে প্রায় পনের মিনিট এদিক ওদিক খুঁজেও যখন
দুজনের কাউকেই দেখতে পেলুম না, তখন বুঝলুম, স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসা সর্ম্পকিয় আপন দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতি দুজনের কেউই
শ্রদ্ধাশীল নয়। নাহলে, নিদেন পক্ষে গাড়ি ছাড়ার দুটি ঘন্টা
আগে ওদের এখানে পৌঁছে যাবার কথা। আরও দু-এক বার পায়চারী করে মিনিট দশেক কাটালুম।
এদিকে উৎকন্ঠাও বাড়ছে। একজন আসবে বাগুইহাটি থেকে, আর একজন
যাদবপুর। কোনটাই খুব কাছের নয়। আমি হাওড়া শিবপুরের ছেলে, হাওড়া
স্টেশনে যাওয়া আমার কাছে পাশের পাড়ায় যাওয়ার মত। এমন সময় হঠাৎ দেখতে পেলুম একটা
আধভেজা গোলাপী ঝলঝলে বুশ্ শার্ট, নীল রঙের প্যান্ট, তার ও প্রায় পুরোটাই ভেজা, আর পায়ে প্রায় চ্যাপলিন
মার্কা বুট। বুয়া। যাক, টেনশন্ চল্লিশ শতাংশ কমে গেল।
কিন্তু বুয়ার পেছনে ও কি? এক তাগড়া মালবাহক দুটো, হ্যাঁ হ্যাঁ, মাত্র দুটো স্যুটকেশ নিয়ে পা ফেলছে এমন
এলোমেলো, যে প্রথমটা মনে হয়েছিল,ও
বোধহয় গঞ্জিকা বা ঐ রকম কিছুর প্রভাবে একদম ভোঁ। কিন্তু পেছনে দেখলুম বুয়ার দাদা
রাজর্ষী। তার হাতেও বোম্বাই সাইজের এক খানা ব্যাগ, আর মা
ধরিত্রীর বাৎসল্যাকর্ষণে রাজর্ষী প্রায় ইন্দির ঠাকরুন। এমন কি তার ও পেছনে
রাজর্ষীর সদ্য বিবাহীতা স্ত্রীর হাতেও বেষ বড় গোছের একটা কিছু। বর্ননাটা বোধহয়
ঠিকঠাক দিতে পারলুম না। তবু মনে করতে চেষ্টা করলুম, ট্রেনে
মাথাপিছু মালবহনের কোন ঊর্ধসীমা আছে কিনা। অতি কষ্টে সেই সব মালপত্র নিয়ে
প্ল্যাটফর্মে এসে দেখি ট্রেন এসে গেছে। এবার শুরু হয়েছে আরো বেশী গন্ডগোল। গাড়ীর
গায়ে লেখা সংরক্ষন তালিকা ও কামরার নম্বর দেখার জন্য যাত্রিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিছু
লোক গাড়িতে উঠেও পড়েছে। এদিকে কামরার ভেতরে আলো জ্বলছেনা বলে মালপত্র সমেত যাত্রি
ও মালবাহক রা করিডোরে দাঁড়িয়ে পড়াতে কেউই কোনো দিকে এগোতে পারছে না। ওদিকে গাড়ি ছাড়তে
আর মাত্র দশ মিনিট দেরি। সৌমেন এর পাত্তা নেই এখনো। মানসপটে কিছু অশ্লীল শব্দেরা
ইতিমধ্যেই আনাগোনা করছে। খামোখা মানুষকে এমন উৎকন্ঠায় রাখা কেন বাপু? শুনতে পেলুম বাবা বলছে, টিকিটের ফোটোকপি যখন সঙ্গেই
আছে, তখন গাড়িতে উঠে পড়াই ভালো। কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা হয়েই
যাবে। আমি আপত্তি করছিলাম। মা এর দিকে তাকিয়ে দেখি মা চেয়ে আছে ভিড়ের দিকে। একটু
আশা, যদি......।
এই
সময় হঠাৎ আমাদের নির্দিষ্ট কামরার সামনে দেখতে পেলুম একটা দাড়ি। গেছোদাদার নয়, সৌমেন এর। সুকুমার রায় সৌমেন কে দেখেন নি। তাহলে লিখতেন না “গোঁফের আমি গোঁফের তুমি,
তাই দিয়ে যায় চেনা”। সৌমেন
এর দাড়ি কোমর পর্যন্ত নয়। এমন কি মর্মস্পর্সী (মর্মস্থল অর্থাৎ বুক স্পর্স করা) ও
নয়। কিন্তু এক অত্যাশ্চর্য্য এবং অনন্য দাড়ি। ধোঁয়া দেখলে যেমন আগুনের অস্তিত্ব
স্বীকার করতে হয়, তেমন ঐ বিখ্যাত দাড়ি দেখে
অনুভব করলুম দাড়ির মালিক ও হাজির হয়েছে। হুড়মুড় করে ট্রেনে উঠলুম।
কামরার
ভেতরকার চেহারা দেখেই যাত্রার রোম্যান্টিকতার চারভাগের একভাগ উবে গেল। থই থই করছে
জল। সিটগুলো পর্যন্ত ভিজে। অর্ধেক জানলায় কাঁচ নেই। শতকরা চল্লিস ভাগ আলো
জ্বলছেনা। তার বদলে নীলরঙা নাইটল্যাম্প টিমটিম করছে। আর পুরনো দিনের কামরা বলে
টিউবলাইট অবধি নেই। যে আলোগুলো জ্বলছে, তাদের দেখে মনে হচ্ছে বাইরের
ঝড়-বৃষ্টি তে তারাও কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। ভেতরে থাকলে পাছে আরো নিরুৎসাহ
হয়ে পড়ি, তাই দরজার সামনে এসে দাঁড়ালুম। বাবার কোলে চড়ে থাকা
ঋজু এতক্ষন কোনো কথা বলেনি। এবারেও বললোনা। শুধু দরজার সামনে আমায় দেখতে পেয়ে
ছোট্ট হাত দুটো বাড়িয়ে দিলো। আমিও টপ করে তুলে নিলুম ওকে আমার কোলে। এবারে ছোট্ট
একটা প্রশ্ন – “ কোথায় যাচ্ছিস?”। এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া
হয়নি। আমি হয়ত বলতে পারতাম নাগপুর। আমার বাবার অফিসে, এক ভদ্রলোক অন্য আরেকজন কে জিজ্ঞেস করেছিলেন “বিশ্বাস বাবু কোথায় বসেন?”, দ্বিতীয়
জন উত্তর দিয়েছিলেন “চেয়ারে”। আমার মনে হলো, আমার নাগপুর বলাটা ঐ চেয়ারে বলার মতো শোনাবে। আসলে ঋজু বলতে চাইছিলো,
আমি ওকে ফেলে রেখে এই রকম স্বার্থপরের মত কোথায় যাচ্ছি। এটা প্রশ্ন
ছিলোনা। ছিলো অনুযোগ। তার কোনো উত্তর হয়না। আমি উত্তর দিই নি। ওকে কোলে নিয়ে আমার
বার্থ এর কাছে এলুম। দেখলুম চারিদিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো, তারপর
একদৃষ্টে আমার জলের ফ্লাস্কটার দিকে তাকিয়ে রইল। স্কুলে যাবার জন্য ওকে একটা লাল
টুকটুকে জলের বোতল কিনে দিয়েছিলাম। বোধহয় ফ্লাস্কটা দেখে পছন্দ হয়েছিলো ওর। যদি
একবার মুখ ফুটে বলতো সেকথা, তদ্দন্ডেই ওটা ওকে দিয়ে ফেলতুম।
কিন্তু একটি কথাও বললোনা। আমি ওকে নিয়ে ধিরে ধিরে দরজার দিকে এগোলুম। বাবার কাছে
ওকে দেবার আগে একবার ওর গালে গাল ঠেকালুম। ঠান্ডা স্যাঁতস্যাঁতে হাওয়া দিচ্ছিলো
বলে ঋজুর গাল ঠান্ডা। কিন্তু গাল ছাড়াও মানুষের শরীরের অন্য অংশে উষ্ণতা থাকে।
বুঝলুম আগামী কাল থেকে ছেলেটা মাঝে মধ্যেই মনখারাপ করে বসে থাকবে। এবার চোখ পড়লো
মায়ের দিকে। দেখলুম কোনো দিকে খেয়াল নেই। শুধু প্রানপনে মুখে হাসি টেনে রেখেছে। এই
যে যাচ্ছি, আবার কতদিন পরে ফিরবো তার ঠিক নেই। আমার বাবাও
থাকে বাড়ির বাইরে। শনিবার রাত্রে দুর্গাপুর থেকে ফেরে, আর
সোমবার রাত থাকতে আবার কর্মক্ষেত্রে হাজিরা দিতে বেরিয়ে পড়ে। মেরে কেটে বাড়িতে
থাকে সোওয়া এক দিন, ত্রিশ – বত্রিশ ঘণ্টা। কাজেই এবার
থেকে মা কে থাকতে হবে একদম একা।
সময়
হয়ে গেছে গাড়ি ছাড়ার। কিন্তু ছাড়ছেনা কেন? এই শেষ মুহুর্ত গুলো আমি বড়
একটা পছন্দ করিনা। বাবা বললো সিগন্যাল সবুজ হয়েছে। আমি শুনতে পেলুম ইঞ্জিনের সিটি।
হাতটা বাড়িয়ে দিলুম। ঋজুর আঙুল গূলো স্পর্স করলুম। মায়ের নরম হাত আমার হাতে,
বুঝলুম মা আর্শীবাদ করছে আমাকে। বাবার হাতের মুঠোয় আমার হাত। হঠাৎ
অনুভব করলুম বাবার হাতের স্পর্শ আমার পিঠের ওপর। সব আশঙ্কা উধাও হয়ে গেল। মনটা
চিন্তাশূন্য। এতবড় ভরসা এর আগে পাইনি। আস্তে আস্তে বাবা – মা – ঋজু – কমলা দি সবাই ছোট হয়ে
আসছে। কয়লার ইঞ্জিন অনেক কাল হলো বাতিল হয়ে গেছে, তবুও চোখের
ভেতরটা কেন জানি কর্কর্ করতে লাগলো। হঠাৎ দেখলুম সবাই একসঙ্গে ঝাপসা হয়ে গেল।
দরজার কাছে দাঁড়ানো বোধহয় ঠিক নয়। ভেতরে ঢুকলুম।
গাড়ির
ভেতর আধো-অন্ধকার। মেঝেতে জল বলে মালপত্র সব সিটের ওপর তোলা। বুয়া দেখলুম কোমরে
হাত দিয়ে মালপত্রের দিকে তাকিয়ে আছে, আর সৌমেন ওয়াটার বটল আর
প্ল্যাস্টিকের একটা ঝোলা কে দুটো জানলার মাঝখানের আংটায় ঝোলাতে ব্যাস্ত। আংটার
নিচেই চোখে পড়ল দু-খানা সুইচ। কিসের সুইচ? খট খট করে জ্বেলে
ফেললুম। দেখি পুরো খোপটা আলোয় ভরে গেল। ও হরি, আলো গুলো
তাহলে সব নেভানো আছে। দেখলুম আমাদের দেখাদেখি অন্যরাও খটাখট বাকি আলো গুলো জ্বেলে
ফেললো। এবার কামরার ভেতর টা একটু পরিস্কার করে দেখতে পেলুম। আমাদের তিন জনের এক
দিকের আপার, মিডল্ আর লোয়ার বার্থ। সেইখানে দেখলুম খান
পাঁচেক বোম্বাই সাইজের স্যুটকেস, গোটা আষ্টেক ব্যাগ আর ছোট
বড় মিলিয়ে প্রায় গোটা দশেক জলের বোতল, ফ্লাস্ক ইত্যাদি।
সর্বনাশ! বসবো কোথায়? আমার বাক্স – প্যাঁটরা গুলো আছে তো?
রাত্রে খাবারের ঝোলাটা? মিনিট খানেক হাঁটকাবার
পর সে গুলোকে আবিস্কার করে যাহারপরনাই নিশ্চিন্ত হলুম। স্যুটকেসটাকে পাচার করলুম
সিটের তলায়, ব্যাগ আর জলের ফ্লাস্ক উঠলো আপার বার্থে। আগেই
বলেছি, সিট ভর্তি জল ছিলো। এবারে দেখি অনেকটা শুকনো। “???” – সৌমেনের অতিকায় স্যুটকেস
গুলোর গায়ে ছিলো কাপড়ের ঢাকনা। তারা এখন সিক্ত বসন। আহা ঢাকার ছেলে বলেই কি আর
ঢাকা দেওয়া স্যুটকেস দিয়ে জল – ঢাকা
দিতে গেছে? আমার কেমন যেন মায়া হলো, আমার
ব্যাগে কিছু পূরনো খবরের কাগজ ছিলো। তারই কিছুটা বের করে সিটটাকে ভালো করে পুঁছে
তার ওপর বসালুম ওকে। দেখলুম গুম হয়ে আছে। আমি আর ঘাঁটালুম না। একে যাচ্ছে বাইরে,
হয়ে আছে স্যাঁতস্যাঁতে, তার ওপর মালপত্রও
ভিজলো। বাইরে দেখি একটা স্টেশন পেরোচ্ছে। ওমা, এ যে
রামরাজাতলা। এখান থেকে হেঁটে গেলেও আমার বাড়ি মাত্র পনেরো মিনিট। ধুৎ, আবার সেই বাড়ির কথা। আর তাকাবোই না বাইরে। ভাবলুম তার চাইতে দেখি বুয়া কি
করছে।
বুয়া
দেখি ওর খয়েরি রং এর চামড়ার স্যুটকেসটা খুলেছে। আগেই বলেছি, আমার বপু টা নেহাৎ ছোট নয়। কিন্তু একটু কসরৎ করলে, বুয়ার
ঐ স্যুটকেসের বিশাল গহ্বরে আমিও সাঁৎ করে সেঁধিয়ে যাবো তাতে আমার কোনো সন্দেহ
রইলনা। কিছু বছর আগে আমাদের সংসদে কি যেন একটা ঘুষের কেলেঙ্কারির সময় কথা উঠেছিল,
কি ভাবে একটা মাত্র স্যুটকেসে এক কোটি টাকা ঢোকানো যায়। যিনিই এই
প্রশ্ন তুলে থাকুন, তাঁকে একবার বুয়ার এই স্যুটকেস টা দেখালে,
তদ্দন্ডেই তাঁকে অন্য ইস্যু খুঁজতে হতো। এক কোটি তো নস্যি, আমাদের পুরো একটি বছরের বাজেটের টাকার একটা বড় অংশ ওর মধ্যে আরাম সে এঁটে
যাবে। ভাবতে পারেন ওর মধ্যে কি আছে? বই মশায়, স্রেফ বই দিয়ে ঠাসা। এতক্ষনে আমার কাছে হাওড়া স্টেশনে মালবাহকের ভোঁ হয়ে
যাওয়ার রহস্যটা পরিস্কার হলো। ওর ওজন তো নেহাত ছাপোষা কিলোগ্রামে হবে না, দস্তুর মতো মেট্রিক টন লাগাতে হবে। আমার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত বিমর্ষ মুখে
বুয়ার স্বীকারোক্তি – সমারসেট
মম্ এর পুরো সেট টা বাড়িতে ফেলে আস্তে হলো। আমি ভয়ে উত্তর দিলুম না। পাছে বলে বসে,
বাড়িতে বইএর গোটা দুয়েক আলমারি ফেলে এসেছে, আর
নাগপুর পৌছেই সেগুলো যোগাড় করার চেষ্টা চালায়। এবার নজর দিলুম আমাদের উল্টোদিকে
বসা সহযাত্রীদের দিকে। এক বৃদ্ধ, ও দুই বৃদ্ধা। ভদ্রলোকের
ছোটোখাটো চেহারা, বয়স প্রায় পঁচাত্তর। বাকি দুই বৃদ্ধাও
সত্তরের ওপরেই মনে হলো। চোখাচুখি হতেই ভদ্রলোক বললেন – কিছু মনে করবেন না,
সিগারেটের ধোঁয়ায় আমাদের কিন্তু খুব অসুবিধে হয়। যদি একটু ওদিকে
......। আমি ধুম পান করি না। বুয়া ও করে না। যত নষ্টের গোড়া নির্ঘাত ব্যাটা সৌমেন।
নিশ্চই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাই বের করে দেখতে গেছে, সেগুলো ভিজেছে কিনা। আমি আশ্বাস দিয়ে বললুম, - নিশ্চিন্ত
থাকুন, ওটা আমার ও সহ্য হয় না। কথায় কথায় জানলুম, এনারা স্বামী-স্ত্রি ও ভাতৃবধু, দ্বারকায় যাচ্ছেন
তীর্থ করতে, কুন্ডু স্পেশালের সঙ্গে।
বাইরে
তাকিয়ে মনে হলো বৃষ্টির জোর একটু কমেছে। কিন্তু অন্ধকার রাত্রি। মাঝে মধ্যে একেকটা
স্টেশনের আলো দেখতে পাচ্ছি। প্রায় নটা বাজে, আর তাছাড়া আবহাওয়া ভালো নয়,
কাজেই সেগুলো একদম জনমানব শূন্য। ওদিকে বূয়া ততক্ষনে তার অতিকায়
স্যুটকেসের গহ্বর থেকে উদ্দিষ্ট বইখানা বার করেছে। এক্কেবারে চটি একটা বই। একশ
পাতা হয় কি না হয়। হালকা নীল রঙের পাতলা কাগজের মলাট। একটু লক্ষ্য করে দেখলুম,
লেখা রয়েছে, - সহজে হিন্দি শিক্ষা। এই হলো
বুয়া। পৃথিবীর সর্ব সমস্যার জন্য ও বই কিনতে পারে। ও বাইরে এভাবে যায়নি কখনো। আর
তাছাড়া হিন্দি সিনেমাও দেখে না। ফলতঃ, হিন্দি কথা অল্প অল্প
বুঝতে পারতা হ্যায় বটে, কিন্তু বলতে নেহি পারতা। পায়ের ওপর
পা তুলে বেশ মনোযোগ সহকারে বুয়া হিন্দি পাঠক্রম শুরু করল। ওকে বিরক্ত করা ঠিক হবে
না মনে ক রে সৌমেনের দিকে ফিরলুম। দেখলুম সে ও এখনো গুম হয়ে রয়েছে। তাই আবার
জানালার বাইরে অন্ধকারে চোখ রাখলুম। বৃষ্টি থেমেছে। মেঘ ও কিছুটা কেটেছে। অস্পস্ট
জ্যোৎস্নায় দ্রূত গতিতে পেছনে ছূটে যাচ্ছে বাংলাদেশের মাঠ, ঘাট,
ধান জমি। আবেগ তাড়িত হয়ে মনে মনে আবৃত্তি করতে চেষ্টা করলুম “আবার আসিব ফিরে, ধানসিড়িটির তীরে, এই বাংলায়”। কিন্তু পাঁচ লাইনের পর আর এগোতে পারলুম না। দেখলুম বেবাক
ভুলে মেরে দিয়েছি বাকিটা। বিরক্তিতে ধুত্তোর বলতে যাচ্ছি, ঠিক এই সময় একটা স্টেশন পেরোলুম। স্টেশনের নাম টা বিদ্যুৎ ঝলকের মতো মাথায়
কিছু স্মৃতি উস্কে দিয়ে গেলো। মেচেদা। আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে, দীঘা যাবার সময় যাত্রা বিরতি তে, এই মেচেদা তেই
খেয়েছিলুম সিঙ্গাড়া। সে এক অপূর্ব সৃষ্টি। রন্ধন বিষয়ের মামুলি সায়েন্স নয়,
অতি উচ্চাঙ্গের আর্ট। গাঢ় সোনালী-হলুদ রঙ, নিখুঁত
চতুস্তলকীয় আকার।এত যত্ন করে তৈরি করা, যে হাতে নিলে মনে হয়
কোনাগুলো আঙুলে ফুঁটে যাবে। আবার এত পাতলা ময়দার আস্তরন, যে
ভেতরে পুরের সবুজ কড়াইসুঁটি বা লালচে বাদাম প্রায় পরিস্কার দেখা যায়। হাতে নিয়ে
কামড় দিন, প্রথমে একটা মৃদু মচ্ করে শব্দ, তার পরে...... সে স্মৃতি অক্ষয়।কিন্তু তাকে ভাষায় প্রকাশ করার সামর্থ আমার
নেই। আলী সাহেব (সৈয়দ মুজতবা আলী) হয়ত পারতেন। সৌমেনের কনুই তে ঠেলা মেরে ওকে
সিঙ্গাড়ার কথাটা বললুম। কারন ওকে যতটুকু জানি, একমাত্র খাবার
দাবারের গন্ধই ওকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে।
খাবারের
কথা তুলতেই দেখলুম বুয়ার হিন্দি শিক্ষার মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। সৌমেন ও ঘন ঘন
প্লাস্টিকের ঝোলাটার দিকে তাকাচ্ছে। শুনেছি, প্রথম প্রেমে পড়ার পর, প্রেমিক – প্রেমিকা
দুজনেই চায় একে অপরের কাছে আপন অনুভুতি প্রকাশ করতে। কারন প্রেম সর্বদাই প্রকাশিত
হতে চায়। কিন্তু প্রথমবারের কুন্ঠা ও অনভিজ্ঞতাবশতঃ প্রকাশ করতে বহু সময় লেগে যায়।
প্রথমটা কেউই বলতে পারে না। আমার সঙ্গে আছে লুচি, আলুরদম আর
সন্দেস। ওদের সঙ্গে কি আছে জানি না। লুচি – আলুরদমের প্রতি আমার
প্রেম প্রায় কিংবদন্তি (যদিও আপনি এ লেখা পড়ার আগে পর্যন্ত কাব্যে উপেক্ষিত ছিল),
কিন্তু আমি “বনলতা সেন” জাতীয় অদেখা রোম্যান্টিসিজমের প্রতি কখনো বিমুখ হইনি। তাই সৌমেন আর বুয়ার
অদেখা সমস্ত খাদ্যবস্তুর প্রতি একটা দুর্নিবার টান অনুভব করলুম। আর যেহেতু
এক্ষেত্রে আমি অভিজ্ঞ প্রেমিক, তাই দুর্বল মুহুর্তে, সুবর্ন সুযোগ বুঝে প্রস্তাব করলুম – এবার খেয়ে নিলে হয় না?
শব্দের গতিবেগ কত ঠিক মনে নেই, কিন্তু এখন যেন
মনে হল আমার মুখ থেকে শব্দ নিঃসৃত হয়ে ওদের কান পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই ওদের
প্রতিক্রিয়া হলো। মা একটু তাড়াহুড়ো করেছিলো রান্নার সময়, ফলে
নিজে ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। আমি খাচ্ছি মায়ের হাতের রান্না, কিন্তু যখন দেখলুম সৌমেন অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে আলুরদমের কৌটো থেকে
নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পাঁচ নম্বর আলু তুললো, আর বুয়ার চোখ প্রথম
রস্বাসাদনের পর পাক্কা পাঁচ মিনিট কেটে যাবার পরেও বন্ধ, তখন
চুপি চুপি একবার “জয় মা” বলে জয়ধ্বনি দিয়ে উঠলুম। বললে বিশ্বাস করবেন না, তার
পরে ন মাসের মধ্যে আর আলুরদম খাওয়া হয়নি।
- সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন