রবিবার, ৭ জুন, ২০২০

মির্জাপুরি পোলাও


বাংলোটা দিব্যি পছন্দ হলো। বহু পুরোনো আমলের বাড়ি হলেও যত্নআত্তির অভাব হয়নি বলেই, বাড়িটায় জরার চিহ্ণ নেই কোথাও। অথচ প্রাক স্বাধীনতা আমলের সাহেবিয়ানা লেগে আছে বাড়িটার সারা শরীরে। লাল ইঁটের রঙের কাঠামো, গোল গোল খিলেন। সাদা রঙের বর্ডার দেওয়া। সম্প্রতি রঙ হয়েছে। বাংলোর সামনে গাড়ি বারান্দার নিচে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে নামতেই নাকে ভেসে এলো একরাশ সুগন্ধ। কোথাও কাছেপিঠে কোথাও জুঁইফুল ফুটেছে, আর এই নিঝুম সন্ধ্যের মুখে তার গন্ধ ভুরভুর করছে। সেই কাকভোরে লখণৌ থেকে বেরোবার পর কেটে গেছে ঘন্টা বারো, আর এই মুহুর্তে বিহারের লখিসরাইয়ের কাছে, মনকেমন করা সন্ধ্যে হুড়মুড় করে ছুটে চলা দিনের গতি রোধ করছে আস্তে আস্তে।

রবিবার, ৩ মে, ২০২০

নিতাইয়ের রেডিও

রেডিওটা নিতাইয়ের নয়। নিতাইয়ের টিভি, রেডিও, ফ্রিজ, গ্যাসের উনুন এসব কিচ্ছুটি নেই। এসব রাখার মত সামর্থ্য বা ইচ্ছে কোনোটাই তার নেই। নিতাই নিতান্তই ঝাড়া হাত পা মানুষ। পৈতৃক একটা বাস্তুভিটে আছে বটে, কিন্তু সে ভিটেও মোটেই বড় সড় বাড়ি নয়। টালির চালা খুপরি। একটা ঘর আর রান্নাঘর সে ভাড়া দিয়েছে। বাথরুম কমন। ভাড়াটেরা টাকা পয়সা দিতে পারেনা বটে, কিন্তু নিতাইয়ের দুবেলার খাওয়াটা ওখান থেকেই আসে, আর মাস গেলে ইলেকট্রিকের বিল ভাড়াটেরাই দিয়ে দেয়। এই ব্যবস্থাতেই ঘর ভাড়া দেওয়া। 

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

স্বর্গপ্রান্তে সতোপন্তে


মনে হয়েছিলো সশরীরে স্বর্গারোহন হয়েই গেল বুঝি। সামনের কিলোমিটারটাক গেলেই নাকি দেখতে পাবো স্বর্গারোহিণী গ্লেসিয়ার। আর সেইখানেই ঢুকে গেলাম বরফের খাঁজে। পা ফেলতেই ভুস করে নরম বরফ ভেদ করে আমার দু মনি দেহকান্ডখানি বরফের ভেতর সেঁধিয়ে গেল।

সতোপন্ত হিমবাহ পার হবার সময়

দাঁড়ান দাঁড়ান । বয়স বাড়ার সঙ্গে কি ছিরির যে কথাবার্তা বলি, খেয়াল থাকেনা। মাঝখান থেকে বেমক্কা এসব বলতে শুরু করলে আপনার মানসপটে অশ্লীল শব্দসমূহ ঘোরাফেরা করার প্রভূত সম্ভাবনা। তাই শুরু থেকেই কই। 

সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০

করোনার অনুরা

- আমাকে আপন ভাবো না তুমি...
-ও মা? সে কি জানু? এ হতেই পারে না। য্যাঃ...
-আপন ভাবলে পরের মত দুরে সরে থাকতে ঠিক....
*********
- ইভ টিজিং এর একটা লিমিট থাকে হে ছোকরা, এরকম ভাবে গায়ে পড়ছ? বাসে একটুও ভিড় নেই...
- ইভ টিজিং নয় মিসেস মিত্র, আজ থেকে আট বছর আগে প্রি-টেস্টে আপনি বাংলায় আমাকে যে নম্বর দিয়েছিলেন.....
- মা মা মানে... কি বলতে চাও?
- সকাল থেকে সাতটা হাঁচি হয়েছে মিসেস মিত্র... ইভ টিজিং নয়......... প্রতিহিংসা...প্রতিহিংসা....
***********

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

আনবিক

আজ্ঞে বেড়ালের ভাগ্যেও সিকে ছেঁড়ে। যদিও কস্মিনকালে কেউ আমাকে বেড়ালের সঙ্গে তুলনা করেনি। বরং গতর দেখে হাতি টাতি.... যাকগে সে যাই হোক, কুলোকে কুকথা কইতেই পারে,আর সে কুকথা শুনতেও হয়। তা মশায় কুকথা শুনতে যখন পারেন (পস্টো দেকচি আপনি আমারই মত অনুভূতিহীন হয়ে পড়েচেন), তখন পড়তেও নিশ্চই পারেন। 

রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯

তিন সেদ্ধ, এক দম


আজ্ঞে সেই ইংরেজের ফেরেব্বাজির ফেরে যদি নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের কলকাতায় আগমন, আর তার পর কলকাতার বিরিয়ানিতে আলুর কিস্যা লিখতে বসি, তাহলে আপনি এ লেখা মোটেও পড়বেন না। কেননা সামাজিক মাধ্যমের কল্যানে ইউটিউব বা অন্যান্য জায়গায় এই নিয়ে হাজার হাজার ভিডিও আছে, এবং আপনি সে গুলো দেখে দেখে গোটা ব্যাপারটা নিশ্চিতভাবে মুখস্তই করে ফেলেছেন। কাজেই, ও নিয়ে আমি আর একটি কথাও বলছিনা। বলব অন্য কথা। এই আমাদের বিরিয়ানির কথা, যাকে, বাইরের লোকে কলকাতা বিরিয়ানি নামে চিনতে শিখেছেন , এবং যা দেখতে একদম এই নিচের ছবির মত।

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ভূপর্যটক

- মানে আমি আসলে আমি নই?
- আপনি নিশ্চই আপনি, কিন্তু আপনার স্মৃতিগুলো আপনার নয় মিস্টার মুখার্জী
- মুখার্জী? আমার নাম জগবন্ধু নস্কর, তিনের আট হরি মিত্তির লেন ক...
- ওই যে বললাম মিস্টার মুখার্জী, এই স্মৃতিগুলো আপনার নয়
- আমার নয়? কি বলছেন আপনি ডাক্তারবাবু...আমি যে পস্টো...
- স্পষ্ট মনে করতে তো পারবেনই। মেমরি ইমপ্ল্যান্টেশন করলে সেই সব স্মৃতি আগের চেয়ে অনেক বেশী তাজা হয়ে যায়
- আমার ছেলে,  ছেলের বউ, নাতি... আহা, বড় আদরের নাতি মশায়...
- হ্যাঁ আপনার মেমরি সেই ভাবেই ডিজাইন করা হয়েছিলো মুখার্জীবাবু

শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯

বাগিনীর পিঠে

জলে আমার বিলক্ষন ভয়। জলে পড়লে এক্কেবারে পাথরবাটি। একমাত্র ভরসা ঘাড়ের ওপর ফাঁপা ব্রেনবাকসো। তাইতে ঘিলুর জায়গায় প্রভূতপরিমানে বায়ু ভর্তি করে দিয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা, ফলে সে খানা হয়ত রবারের টিউব বা লাইফ জ্যাকেট হয়ে আমাকে ভাসিয়ে রাখার একটা মরিয়া চেষ্টা করতে পারে। কাজেই নুলিয়া , মাঝি-মাল্লা, নিদেন পক্ষে সাঁতারজানা লোকজন আমার বড়ই পছন্দের। মানুষের সুবুদ্ধি হয়, কুবুদ্ধি হয়, আরো অনেক রকম বুদ্ধিই হয়ত হয়। কিন্তু আমি যে দলের মানুষ, সেখানে এসব হয় না। কারন সুবুদ্ধি বা কুবুদ্ধি যাই বলুন, সেটা হতে গেলে ঘটে সামান্য বুদ্ধির দরকার, সেখানেই তো বিশাল ঘাটতি। ভয় পেতে গেলে, আগে ভয়ের কারনটা ভেবে বের করতে হয়। যার এসবের বালাই নেই, সে নির্ভয়। তাই ২০১৭ সালের অক্টোবর নাগাদ যখন প্রথম কথাটা উঠলো, আমি দুম করে বলে দিলুম লোকজন হিমালয়ে গেলে আমি আছি। তা থাকতে আমার অসুবিধে নেই। আগেও থেকেছি অনেক। কিন্তু বলে ফেলার কদিন পর অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপে ব্রাজিল বনাম জার্মানির খেলা দেখতে গিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে যুবভারতীর মাঝের টায়ারে উঠবার সময় সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে, আর প্রবল বেগে হাপরের মত হাঁপাতে হাঁপাতে খেয়াল হলো, কি নিদারুন বিপদের মধ্যে নিজেকে নিয়ে গিয়ে ফেলতে চলেছি। খুলে কই।

শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

পোদ্দারের প্রতিকৃতি


(১)
- তুই আন্দাজ করতে পারিস পুকু, পারিস না? কিছু তো আন্দাজ করেছিস বটেই...
- দাদা, এসব ব্যাপারে আমার বিদ্যে তোমার ধারেকাছেও যায়না। আমি কারবারী মানুষ......
- দেখ, আমি এই মাঝরাতে আমেরিকা থেকে তোকে এমনি ফোন করিনি, নিশ্চই কারন আছে যথেষ্ট
- জানি তুমিও ব্যস্ত মানুষ
- ব্যস্ত কে নয়? কিন্তু সেটা কথা নয়। দেখ পুকু, আমার গত এক বছরের গবেষনা বলছে ও জিনিস অমূল্য, আর সেই গবেষনা শেষ করতেই ওটা আমার লাগবে।

বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৭

তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা

[২০১০ সালের ঘটনা। লেখাও তার কিছুদিন পরেই। হারিয়ে ফেলেছিলাম লেখাটা কোথাও। এতকাল পরে খুঁজে পেয়ে সামান্য কিছু পরিমার্জন করে তুলে দিলাম]

আমাদের ইশকুলে কিছু ডক্টর জেকিল মাস্টারমশায় পরীক্ষার আগুপিছু মিস্টার হাইড হয়ে যেতেন। সে আমলে বছরে পরীক্ষা দিতে হতো মোটে দু বার, আর ওই দুই পরীক্ষার আগুপিছু দিন কুড়ি-পঁচিশ করে “মন দিয়ে” পড়তে বসা, এবং পরীক্ষায় টেনেটুনে, মিস্টার হাইডদের নাগাল এড়িয়ে “সিলিপ কেটে” পরের ক্লাশে উঠে যাওয়া। এই করে ইশকুল জীবন শেষ হলো।

সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭

বিরিয়ানি এ অওধ

মুঘলিয়া সলতানতের সূ্য্যি তখন পাটে ঢলতে বসেছে। “মারাঠা দস্যু” হানা দিচ্ছে রাজপুতানা থেকে মেদিনীপুর। গোটা দেশের “ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা”। ওদিকে মহাকাল শ্বেতবর্ন ধারন করে বনিকের মানদন্ড হাতে কলকাতা , মাদ্রাজ, বোম্বাই সহ ইতিউতি হানা দিচ্ছেন, শর্বরী তখনো পোহায়নি। ঠিক এই সময় উত্তর ভারতের অরাজকতার অন্ধকারে ঝলমল করে উঠলো লখনৌ নগরী আর সুবা অওধ। রামচন্দ্রের আশীর্বাদধন্য আযোধ্যা যা কিনা অষ্টাদশ শতকের হিন্দুস্তানিতে অওধ। এসব নিয়ে কইতে বসিনি অবশ্য। আমি খানেওয়ালা আদমী। সিয়াসতি  বদবু (রাজনীতির দুর্গন্ধ) থেকে দূরে থাকাই ভাল।

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬

পাঞ্জাবী

পেশাওয়ার ইস্টিশনে একগাদা বাঙালি রেলগাড়ি থেকে নামেনা। তাই আলী সায়েব যখন পেশাওয়ারে নামলেন গাড়ি থেকে, খেয়াল পড়ল তিনি পাঞ্জাবী পরে আসেননি। কাজেই তাঁকে নিতে আসা, পাঠান বন্ধুর-বন্ধু (কিম্বা বন্ধুর-বন্ধুর-বন্ধুর-বন্ধু। খাঁটি পাঠান বন্ধুর সম্পক্কে বন্ধুর পন্থায় বিশ্বাস করেনা বলেই লিখেছেন আলী সায়েব) তাঁকে চিনবেন কি করে, তাই নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। সেই দুশ্চিন্তার কথা শুনে পাঠান তাজ্জব – “পাঞ্জাবী দিয়ে বাঙালি চেনা যায়?” - আজ্ঞে ১৯২৭ সালের কথা কইচি। এখন হিন্দি-পাকি দুশমনিতে নিরুপায় হয়ে বাঙালি রেলগাড়ি চেপে পেশাওয়ার যেতে পারেনা। কিন্তু ৮০-৯০ বছর আগে পেটের টানে সেই নিরুপায় হয়েই আবার বাঙালি রেলগাড়ি চেপে পেশাওয়ার যেত। আলী সায়েব বলে গেছেন যে।

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

ম্যাজিক

হাজার ওয়াটের আলো জ্বাললেও হয়এ ঘরের সব কটা কোনায় জমে থাকা অন্ধকার পুরো দূর করতে পারবে না। একদিন ছিল, যখন কলকাতা শহরে বিজলী বাতির আসার আগে এ ঘরে সন্ধ্যের পর জ্বলে উঠত গ্যাসের আলো, কিম্বা তারও আগে মোমের কিম্বা খুব দামি কারুকাজ করা লন্ঠনের ঝাড়। আর সেই আলোতেই ঝলমল করে উঠত এই ঘর, ঘরের বাইরে টানা বারান্দা, দালান, সদর দরজা লোক জন , হই হট্টগোল সব মিলিয়ে একেবারে জমজমাট অন্ধকারের চিহ্ণ খুঁজে পাওয়া যেতনা কোথাও। ঠিক কবে থেকে যে বাড়িটা খালি হতে শুরু করল কে জানে

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সেবার শীতকালে

আমার আবার বরাবরের গরম গরম বাতিক ছিল একটু গরম হলেই ছাওয়া চাই, হাওয়া চাই। হাঁসফাঁস অবস্থা। কিন্তু কি জানি কেন, বয়স বাড়ছে বলেই বোধহয়, আজকাল আর তেমন গরম করেনা। বরং শীতের কাঁপুনি প্রতি বছর একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে হাতকাটা সোয়েটার পরতুম, এখন সেখান টুপি আর জ্যাকেট চাপাই। সারা রাত গায়ে কম্বল নিয়ে ঘুমোতে পারি, যেটা আগে পারতুম না এবার শীত অবিশ্যি কমসমের ওপর দিয়েই গেল। কদিন হলো “বসন্ত এসে গেছে” বলে ফোনে অনেক মেসেজ আর ছবিও পেয়ে চলেছি। তবে আমাদের এখানের শীত আর কতটুকু? যেতে হয় দার্জিলিং কি সিমলা। শীত বলে শীত? বাপরে! হাড়ের ভেতর মজ্জা পর্যন্ত জমিয়ে দেয়। আমার বাঙালি ধাতে এর চেয়ে বেশী ঠান্ডা কল্পনা করা অসম্ভব। তাই ভাবি, যেখানে শূন্যের নিচে ৩৫-৪০ ডিগ্রি নেমে যায় থার্মোমিটারের পারা, সেখানে কেমন পারা অনুভুতি হয়!

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

পেট্রোল

এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা বড় বড় পাথরের টুকরোর আড়ালে দু চার জন করে সৈনিক বসে আছে চারিদিকে চোখ ধাঁধানো সাদা। বরফের পুরু আস্তরন সব কিছুর ওপর। এই ধপধপে সাদার ওপর সূর্‍্যের রোদ পড়লে সেদিকে খালি চোখে তাকানো মুশকিল। তাই সব ফৌজির মুখেই, কপাল থেকে গাল পর্যন্ত বিশাল বড় আর  মোটা কালো চশমায় ঢাকা। একে সকলেই সাদা হাই অল্টিচিউড ফৌজি উর্দী পরে আছে। মাইনাস চল্লিস কি পঞ্চাশ ডিগ্রিতে দাড়ি গোঁফ কামানোর প্রশ্নও ওঠেনা। তার ওপর মুখের আধখানা ঢাকা বিশেষ ভাবে তৈরি রোদ চশমায়। কাজেই সকলকেই কেমন এক রকম দেখতে লাগছে। তবুও ফৌজিরা নিজেদের চিনে নেয় কোনো ভাবে। ওই যে লোকটা একবালতি বরফ নিয়ে অল্প লেংচে লেংচে আসছে গরম করে খাবার জল তৈরি করবে বলে, ও হলো হাবিলদার রামদত। অনেক উঁচু থেকে দড়িতে ঝুলতে ঝুলতে পড়ে গিয়েছিল। সে আঘাত এখনো সারেনি হয়ত। তাই চলার সময় খুব ভাল করে নজর করলে ওকে হালকা ল্যাংচাতে দেখা যায়। সামনে প্যাকিং বাক্সর ওপর বসে থাকা লেফটেন্যান্ট চেঁচিয়ে রামদতকে চা চাপাতে বললেন। ইনিই বোধহয় এ চৌকির কম্যান্ডার। এ জায়গাটা বোধহয় পাকিস্তানি ফৌজের সরাসরি গুলির পাল্লার বাইরে। কারন এখানে লোকজন বাংকার বা পরিখার মধ্যে ঢুকে বসে নেই। বরং বেশ নিরাপদেই ঘুরছে। লেফটেন্যান্টের উর্দীতে নামের ট্যাগটা পড়া যাচ্ছে। রাজীব পান্ডে। আইডি আর ট্যাগ খুঁটিয়ে দেখে লেফটেন্যান্ট তাকালেন সামনের দিকে -

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬

একবগ্‌গা

বাবুসোনা ইশকুলে রোজ মার খেতো। মার বলে মার? সাধু স্যারের খেজুর ছড়ির মার, হেডস্যারের ডাস্টারের বাড়ি, লক্ষিকান্ত স্যারের কানমোলা, এমনকি রামচন্দ্র স্যারের মত ভালমানুষ লোকের কাছেও চড়-থাপ্পড় জুটিয়ে নিত কিছুনা কিছু করে। কিন্তু এত মার পড়া সত্ত্বেও বাবুসোনা একটা দিনের জন্যেও বদমায়েশি বন্ধ করেনি। মার খেয়েও বসে পড়তনা, মার এড়াতে চেষ্টা করতনা। চোখে চোখ রেখে শাস্তি নিতো প্রতিবার। ক্লাস সিক্সে উঠে দুজনের আলাদা আলাদা ইশকুল হয়ে গেল। মাঝের ক বছর আর তার দেখা পাইনি। শেষে উচ্চমাধ্যমিকের সময় আবার দুজনে একই ইশকুলে একই ক্লাসে এসে বসলুম। তখন অবিশ্যি বয়স অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু কদিন যেতেই বুঝলুম, বাবুসোনা বদলায়নি। নিয়ম না মানায় সিদ্ধহস্ত বাবুসোনা নিয়ম করে কিছুনা কিছু করে বসত যাতে গোটা ইশকুলে হুলুস্থুলু । হাজার শাস্তি পেয়েও সে শুধরোয়নি। এরকম একবগগা ছেলে খুব কমই দেখেছি।  

বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫

মহাভারতের মর্মস্থল

মহাভারত? সেরেচে! চাটুজ্জ্যের পো তো আর কালী সিঙ্গী নয় যে বাংলায় মহাভারত লিখে সাড়া ফেলে দেবে। অথবা নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়িও নয় যে মহাভারতের অজানা সব গপ্প টপ্প শোনাবে। তার ওপর আমার বিদ্যেবুদ্ধির দৌড়ে, মহাভারত যদি লিখেও ফেলি, সেটা সাকুল্লে দেড় পাতাতেই শেষ হবে। তবুও মহাভারত ধরে কেন টানাটানি করছি তার কারনটা খুলে কই। ছোটোবেলায় স্কুলে পড়তে আমার বাবা একখানা অক্সফোর্ডের ম্যাপবই কিনে দিয়েছিলো বইমেলা থেকেআমার ভূগোলের বিদ্যে মন্দ নয়অন্ততঃ আমার নিজের হিসেবে

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

এক সন্ধ্যের গল্প

( লিখছি তো উদ্ভুট্টে সিরিজ, তাহলে উদ্ভট লিখবোনা কেন? )

শীতের বিকেল বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়। আর চায়ের তেষ্টাও পায় বেশী। ১৮৯৪ শকাব্দ শেষ হয়ে আসছে, আর মাত্র কয়েক দিন, তার পরেই ১৮৯৫ শকাব্দ শুরু হবে। কিন্তু আজকাল ভারতে সরকারি শকাব্দ কেউই আর মনে রাখেনা। সাল জিজ্ঞেস করলে ১০০ জনে ১০০ জন ভারতীয়ই বলবে এটা ১৯৭২ সাল, মানে ১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দ। আহমেদাবাদের উপকণ্ঠের এই নতুন মহল্লায় সব বাড়ির বাসিন্দারাই বাড়ির সঙ্গে একটু করে বাগান রেখেছেন। শেষ বিকেলের ঝিরি ঝিরি ঠান্ডা হাওয়া আসছে জানলা দিয়ে। গায়ে কাজকরা কাশ্মিরি শালটা ভাল করে জড়িয়ে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসলেন অধ্যাপক। সামনে চশমা চোখে নবীন ছাত্রটিকে তাঁর বেশ পছন্দ। তার প্রশ্নের শেষ নেই খুঁটিয়ে জানতে চায় সব কিছু

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হাড়হিম হিমবাহ (রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ)

আমার খুব ইচ্ছে, জীবৎকালে একটিবার, লালমোহনবাবুর মত একখানা রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লিখব। পারব না ভাবছেন? আরে দাদা, এই যে দর্জিপাড়া লেনের সেদিনের ছোকরা গিরিশ চাকলাদারসে কিনা নিশাচর নাম নিয়ে ক্যাপটেন স্পার্ক আর র‍্যাক্সিট সমেত রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস নামিয়ে দিতে পারল। আর আপনি আমার উচ্চাশা শুনে ......? নাহয় আমার এডিশনও “তিন মাসেও কিস্যু হবেনা”। তবে খটকা অবিশ্যি একটা আছেই। ভাবছেন ফেলুদা থাকতে হঠাৎ জটায়ু কেন? একটু ভেবে দেখুন দিকি। এই অধমের দ্বারা ফেলুদা হওয়া কি কখনো সম্ভব? মগজাস্ত্র অনেক দুরের কথা, শিশুকাল থেকে আমার মগজের উপস্থিতি নিয়েই অসংখ্যবার অসংখ্য মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ফেলুদা তো কোন ছার, তোপসের তুলনায়ও আমি নেহাতই পানসে। কিন্তু লালমোহন গাঙ্গুলির সঙ্গে এই চাটুজ্যের অনেক মিল। কু-লোকে বলে আমি নাকি কিঞ্চিত লাল, আবার এদিকে আমি মোহন(বাগান) ও বটে। যদিও উটে চড়ে আরব বেদুইন হবার কথা ভাবলে রোমাঞ্চের বদলে তলপেটটা কেমন জানি ......। কিন্তু ইংরিজি বলুন, সাধারন জ্ঞান বলুন (নর্থপোলে সিন্ধুঘোটক, বা উটের পাকস্থলি), গরম কচুরি প্রেম বলুন, এই সব ব্যাপারে জটায়ুর সঙ্গে আমার যাহারপরনাই মিল রয়েছে।

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পদ্মপুকুরের পুঁটি ও আমাদের জুটি


তা সেই সোমবার ইশকুলে গেছি লাফাতে লাফাতে। বাবু মানির ছবি পকেটে করে নিয়ে গেছি। টিফিনের সময় বীরপূজো হবে। তখন আমি হাফ পেন্টুল। কিন্তু মোহনবাগান-ইষ্টবেঙ্গল-মহামেডান তো বটেই, এমন কি ফাগোয়াড়ার জেসিটি, জলন্ধরের বিএসএফ এমন কি ওরকে মিলস, সালগাওকার, মফৎলালের মত দলের প্রথম এগারোর নাম বলে দিতে পারি।