মুঘলিয়া সলতানতের সূ্য্যি তখন পাটে ঢলতে বসেছে। “মারাঠা দস্যু” হানা দিচ্ছে
রাজপুতানা থেকে মেদিনীপুর। গোটা দেশের “ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা”। ওদিকে মহাকাল
শ্বেতবর্ন ধারন করে বনিকের মানদন্ড হাতে কলকাতা , মাদ্রাজ, বোম্বাই
সহ ইতিউতি হানা দিচ্ছেন, শর্বরী তখনো পোহায়নি। ঠিক এই সময় উত্তর
ভারতের অরাজকতার অন্ধকারে ঝলমল করে উঠলো লখনৌ নগরী আর সুবা অওধ।
রামচন্দ্রের আশীর্বাদধন্য আযোধ্যা যা কিনা অষ্টাদশ শতকের হিন্দুস্তানিতে অওধ। এসব
নিয়ে কইতে বসিনি অবশ্য। আমি খানেওয়ালা আদমী। সিয়াসতি বদবু (রাজনীতির দুর্গন্ধ) থেকে দূরে থাকাই ভাল।
দিল্লি – আগ্রার বাদশাহির সঙ্গে লখনৌয়ের
নবাবিয়ানার মিল খুব কম। অমিলই বেশী।। লখনৌ তথা অওধ গোটা ভারতের ওপর ছড়ি ঘোরাতে
যায়নি । সেই রামচন্দ্রের আমলের পর কখনো আওধি সেনা দক্ষিন ভারত (পুব-পশ্চিম-উত্তর ও
বটে) দখল করতে কুচকাওয়াজ করেনি। বরং লখনৌ অনুশীলন করেছে তার বিখ্যাত ভদ্রতার -
তেহজিবের, শের-শায়রির, কত্থক নাচের, হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের এবং অতি অবশ্যই
বিশ্ববিখ্যাত অওধি কুইজিনের। আওধি সংস্কৃতি নিজেকে গড়ে তুলেছে অনেক অনেক জাতীর –
ধর্মের – ভাষার মানুষের অবদান স্বীকার করে। এ অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা হিন্দুস্তানি বা
উর্দু (উর্দু নামটা ইদানিং চলছে বেশী, আগে হিন্দুস্তানীই বলা হতো) তৈরি হয়েছে
স্থানীয় দোয়াবী সাদামাটা হিন্দির ওপর ফার্সী-আরবী শব্দমালা সাজিয়ে। এ ভাষার কাঠামো
তথা প্রান পুরোনো দেশজ হিন্দি, আর অলংকার ফার্সি-আরবী থেকে সেঁচে আনা। ঠিক সেই
ভাবেই অওধের রান্নাবান্নায় মিশেছে বহু বহু রন্ধনপ্রনালী। আর সব মিলিয়ে যা
দাঁড়িয়েছে তা খাঁটিস্য খাঁটি ভারতীয় ঐতিহ্য। যেমন ধরুন না আওধি বিরিয়ানি, যা কিনা
আওধি রন্ধনশাস্ত্রের মুকুটে কোহ-ই-নূরের মত উজ্জ্বল।
বিরিয়ানিতে থাকে চাল, মাংস, ঘি আর মশলা। উত্তর –
পশ্চিম ভারতের ওপারে ইরান-তুর্কিস্তানের খাবারদাবারে যা থাকে, এক মাংস ছাড়া বাকি সবের উপস্থিতি সেখানে নগন্য। আর এমনটাও তো
নয়, যে তুর্কি আগমনের আগে ভারতবাসী মাংসই খেতোনা। দেখুন না আর্য্য জাতী, তারা
যেখানেই থাকুক, জার্মানি থেকে পাঞ্জাব, চারটে অভ্যেস তাদের রক্তে , এক মাংস খাওয়া,
দুই মদ্যপান, তিন জুয়া খেলা আর চার যুদ্ধ করা। সে পান্ডব প্রধান যুধিষ্টিরই হোন আর
জার্মান কাইজার উইলহেল্ম। যাই হোক, ভাত খাওয়া পূর্ব ও দক্ষিন ভারতের খাদ্যাভ্যাসে
পড়ে। অওধের পশ্চিমে পাঞ্জাব রুটির রাজ্য। ঘি খাঁটি দেশজ বস্তু। বনস্পতির
আবির্ভাবের পর তার নামই আজকাল হয়ে গেছে দেশি ঘি। মশলা প্রধানত আসে দক্ষিন ভারত থেকে।
কাজেই সব মিলিয়ে বিরিয়ানি হলো এক খাঁটি ভারতীয় মেলবন্ধন। তবে কিনা উপকরনগুলো সব
কটা মিশিয়ে দিয়েই তো বিরিয়ানি হয়ে গেল না। তার ওপরে থাকে আওধি মেকদারি। আওধি খানায়
মশলার ব্যবহার খুব বেশী নয়। বাংলার চেয়ে বেশী অবশ্যই, কিন্তু খুব বেশী নয়। আর একটা
ব্যাপার, সেটা হলো, আওধি রান্নায় আপনি স্বাদে-গন্ধে টের পাবেন মশলা আছে, কিন্তু
মশলা চোখে দেখতে পাবেন না। ইন্টারনেটে খুঁজলে হাজার হাজার “খাঁটি আওধি বিরিয়ানি”
তৈরির পাকপ্রনালী পাবেন। কিন্তু যিনি আওধি খানার সঙ্গে পরিচিত, স্রেফ একবার দেখেই
বলে দিতে পারবেন এ রান্না আদৌ আওধি নয়। কেউ দেখবেন ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ঢালছেন ,
কেউ দেখবেন টমেটো দিচ্ছেন, কেউ দেখবেন কাজু ছড়াচ্ছেন, রান্নার পর বড়বড় দারচিনি আর
এলাচ দেখা যাচ্ছে কারোর বিরিয়ানিতে, কেউ বলবেন সারা রাত ম্যারিনেড করে রাখুন, কেউ
বলবেন কমলা রঙ ঢালুন। বিশ্বাস করুন, আওধি বিরিয়ানি তে এসব কিচ্ছু চলেনা। এত
হাঁকডাকের ব্যাপারই না। আদতে রান্নাটি অতি সোজা। সেটিই নিচে বলছি।
উপকরন (৫-৬
জনের দুপুরের খাওয়ার হিসেবে। স্বল্পাহারী হলে ৭ - ৮ জন)
১ – লম্বা দানার ভাল বাসমতি চাল এক কিলো (এক
কিলোর প্যাকেট নিতে পারেন, তবে আমি মুদির দোকানে খুচরো হিসেবে কিনি, তাতে দাম
অনেকটা কম পড়ে)
২ – পাঁঠার মাংস এক কিলো। পেছনের ঠ্যাং থেকে নিতে
পারেন, অথবা শিরদাড়ার কাছে চাপ থেকে। দুটো মিলিয়েও নেওয়া চলবে। অল্প একটু চর্বি বা রেওয়াজ রাখবেন মাংসে, নাহলে
স্বাদ আসবে না। মাংস ১০০ গ্রাম ওজনের টুকরো করাবেন। খুব ছোটো যেন না হয়। মোটের ওপর
কিলোয় ১০ টুকরো হবে।
৩ – ২০০-২৫০ গ্রাম ঘি (সবটা লাগবেনা)
৪ – মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ২ খানা, বা একটা বড়
পেঁয়াজ। ফালি ফালি ঝিরি ঝিরি করে কেটে নিন
৫ – আদা বাটা ২ চা চামচ
৬ – রসুন বাটা ২ চা চামচ
৭ – গোটা মশলা (মাংস রান্নার সময় লাগবে। এ মশলা
গোটা ব্যবহার হবে, গুঁড়োতে হবে না। ছাড়াও অল্প কিছুটা গোটা মশলা লাগবে চাল সেদ্ধর
সময়, সেটার পরিমান নিচে বলে দিচ্ছি)
ক) ৪টে তেজপাতা,
খ) এক ইঞ্চি
দারচিনি (এক ইঞ্চি পুরো গোল কাঠি হলে, না হলে আর একটু বেশী)
গ) আধ খানা
জায়ফল (একটা গোটা জায়ফলের আধ খানা কেটে নিন। কিন্তু গুঁড়ো করবেন না,ওই একটুকরো
গোটাই দিতে হবে)
ঘ) ৭ - ৮ টা লবঙ্গ
ঙ) ২ টো বড় এলাচ
চ) ৬
টা ছোটো এলাচ
ছ) ১
চা চামচ গোলমরিচ
জ) দু
খানা জয়িত্রির ফুল (ভাঙা পাপড়ি হলে দু খানা গোটা ফুলের আকারে আন্দাজ মত দেবেন)
ঝ) এক
চা চামচ গোটা মৌরি
৮ – গুঁড়ো মশলা
ক)
ছোটো এলাচ গুঁড়ো এক চা চামচ (এলাচের বীজ বের করে, বীজ গুলো মিহি করে গুঁড়ো করে
নিতে হবে)
খ )
জয়িত্রি গুঁড়ো এক চা চামচ (মিহি গুঁড়ো করে নিতে হবে)
গ)
হলুদ লংকা গুঁড়ো ৩ চা চামচ (সাধারন মুদি খানায় পাবেন না। আমি নিউ মার্কেটের পেছন
দিকে মশলার দোকান থেকে নিয়েছি। এটা না হলে কিন্তু মুশকিল। একান্তই না পেলে অল্প
করে লাল লঙ্কা গুঁড়ো ব্যবহার করে দেখতে পারেন)
৯ – গরম মশলা (এ আমাদের বাঙালি গরম মশলা নয়
কিন্তু। নিচের উপকরন গুলো একসঙ্গে মিশিয়ে একদম মিহি গুঁড়ো করে নিতে হবে)
ক) ২ টো
তেজপাতা
খ) আধ
চা চামচ গোলমরিচ
গ) আধ
ইঞ্চি পরিমান দারচিনি
ঘ)
৬-৭ টা ছোটো এলাচ
ঙ)
একটা বড় এলাচ
চ)
জয়িত্রির একটা ফুল বা সমপরিমান ভাঙা পাপড়ি
ছ) ৮ –
১০ টা লবঙ্গ
জ) আধ
চা চামচ গোটা ধনে
১০ – জাফরান (কেশর) এক গ্রাম (আমি এভারেস্টের যে
প্যাকেট পাওয়া যায় ওটা কিনি। এ ছাড়া আরো অনেক রকম আছে, তাতে না আছে জাফরানের গন্ধ,
না আছে রঙ)।
১১ – মাঠা না তোলা (ফুল ক্রিম) দুধ ২ কাপ (চায়ের
ছোটো কাপ, কফি মগ নয়)
১২ – টক দই ২ কাপ (চায়ের ছোটো কাপ)
১৩ – ২ চা চামচ গোলাপ জল
১৪ – ২ চা চামচ কেওড়ার জল
১৫ – একটা পাতি লেবুর রস
১৬ – ১০০ গ্রাম আলুবখরা (এটা আপনার ওপর ছাড়লাম,
আপনি দিতেও পারেন, না ও পারেন। আমি দিই। নিউ মার্কেটে যেখানে হলুদ লংকা গুঁড়ো
কিনবেন, সেখানেই পাবেন)
১৭ – আলু ????? আমি আওধি বিরিয়ানিতে আলু বা ডিম
না দেবার পক্ষে। আপনি দেবেন কিনা আপনার ওপরে ছাড়লাম। লখনৌতে এ দুটি জিনিস বিরিয়ানিতে
পড়েনা। আর এদুটি বস্তু বাদে বিরিয়ানি খেলে বাঙালির জাত যায়। আপনি শ্যাম রাখবেন না
কূল, সে সিদ্ধান্ত আপনার।
লক্ষ্য রাখুন। বিরিয়ানিতে দিতেই হয় বলে জানি এরকম
অনেক গুলো মশলা কিন্তু এখানে অনুপস্থিত। যেমন ধরুন শা-জিরে, শা-মরিচ, কাবাবচিনি,
মিঠে আতর, কাশ্মিরি লংকা, আগে থেকে ভেজে রাখা মুচমুচে পেঁয়াজ (বেরেস্তা) এসব
কিচ্ছু দরকার নেই। আর মাথায় রাখবেন, মশলা আছে বুঝতে পারবেন, কিন্তু চোখে দেখতে
পাবেন না। তবেই হলো আওধি বিরিয়ানি।
প্রস্তুতি
কিস্যু নেই। মাংস আগে থেকে ম্যারিনেড করা নেই। বরং
যত টাটকা মাংস আনবেন, তত ভাল। ফ্রিজে রাখা মাংস দিয়ে টাটকা মাংসের স্বাদ আসবে না। তবে
হ্যাঁ, মশলা গুলো আগে থেকে গুঁড়ো করে রাখতে পারেন। আর আদা রসুনটা বেটে রাখবেন। তাতে
রান্নার সময় সুবিধে হবে।
আর একটা কথা। বিরিয়ানি কোন পাত্রে রান্না করছেন,
সেটা কিন্তু স্বাদে কিছুটা প্রভাব রাখে। চ্যাপটা হাঁড়ি (তিজেল হাঁড়ি বলে যাকে), বা
চ্যাপটা ডেকচিতে ভাল হবে। বেশী গভীর পাত্রে চাল বা মাংস ঘেঁটে ঘন্ট হয়ে যাবার একটা
সম্ভাবনা থেকেই যায়। মাংস সেদ্ধর জন্যে প্রেসার কুকার ব্যবহার করতে পারেন। আওধি
বিরিয়ানি তে “কাচ্চি” বা ওই ধরনের কিছু ব্যাপার হয় না। মোদ্দা কথা , মাংস রান্না
হয় আলাদা, আর ভাত আধসেদ্ধ করা হয়, তার পরে দুটোকে একসঙ্গে করে দমে বসানো হয়।
প্রনালী
চাল ধুয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন। মাংস রান্না হতে যা
সময় লাগবে, এইটুকু সময়ই ভেজার জন্যে যথেষ্ট। জাফরান একট ছোটো কাপে আধ কাপ গরম জল
করে তাতে ভিজতে দিন। মাঝে মাঝে একটূ চটকে দেবেন আঙুল দিয়ে। কিছুটা আটা মেখে রাখুন,
বিরিয়ানি দমে বসাতে কাজে লাগবে।
ধরে নিচ্ছি আপনি মাংস সেদ্ধর জন্যে প্রেসার কুকার
ব্যবহার করবেন। কুকার আঁচে বসান, ঘি দিন মাংস রান্নার জন্যে আন্দাজ মত। ঘি ছাড়া
অন্য কোনো তেল ব্যবহার করার পরামর্শ দেবো না। স্বাস্থ নিয়ে চিন্তা থাকলে বিরিয়ানি
খাবার দিন আর পরের দিন এক ঘন্টা করে জোরসে হেঁটে নিন। ঘি তে গোটা মশলা গুলো সব কটা দিয়ে দিন (৭নং
উপকরন)। মশলা গুলো চড়বড় করতে শুরু করলে ঘি তে পেঁয়াজ দিন। লালচে বাদামী করে ভাজুন।
পেঁয়াজ ভাজা হলে এবারে পাত্রে মাংস দিন। আদা রসুন বাটা দিন। ২ চা চামচ
হলুদ লংকাগুঁড়ো দিন। এবারে অল্প অল্প নেড়ে ৫ মিনিট রান্না হতে দিন। ৫ মিনিট পর আন্দাজমত
নুন আর টক দই দিন, জয়িত্রি আর ছোটো এলাচের গুঁড়োর অর্ধেকটা করে দিয়ে দিন। কেওড়া আর
গোলাপ জল দিয়ে দিন। এবারে অল্প নেড়ে চেড়ে রান্না হতে দিন।
কিছু মিনিট পর দেখবেন, দইটা মিশে গেছে। এবার
পরিমান মত জল দিন, জল ফুটে গেলে কুকারের ঢাকনা আঁটুন আর আঁচ একটু কমিয়ে দিন। প্রেশার
কুকারে ৪টে সিটি মারুন। কুকার ব্যবহার না করলে, জল দিয়ে মাংস ফোটান নরম না হওয়া
পর্যন্ত। কিন্তু থকথকে ঝোল যেন না জয় এটা লক্ষ্য রাখবেন। ঝোলটি হবে পাতলা, জলজল। মাংস
সেদ্ধ হয়ে গেলে মাংসের টুকরো গুলো তুলে নিয়ে আলাদা করে রাখুন। আর ঝোলটা ছেঁকে নিন
ছাঁকনি দিয়ে। এতে সব গোটা মশলা ও পেঁয়াজের ছিবড়ে আলাদা হয়ে গেল।
একটা অন্য বড় ডেকচি বা হাঁড়িতে অনেকটা জল দিন চাল
সেদ্ধর জন্য। এবারে পরিমান মত নুন দিন জলে। আর দুটো তেজপাতা, এক ইঞ্চি দারচিনি, ৫-৬
টা ছোটো এলাচ, ৫-৬ টা লবঙ্গ, একটা বড় এলাচ দিয়ে দিন। জল ফুটতে দিন ঢাকা দিয়ে।
এবার আপনার বিরিয়ানির চ্যাপ্টা হাঁড়ি বা ডেকচি তে
মাংস আর আলুবখরা গুলো দিন। ছেঁকে নেওয়া ঝোল ঢালুন । কতটা ঝোল দেবেন? মাংস গুলো যেন
৪০-৫০% ঝোলে ডুবে যায়। হাঁড়ি কিন্তু এখনই আঁচে বসাবেন না। একটা অন্য পাত্রে দুধ
নিন, তাতে পাঁচ-ছয় চামচ ঘি ঢালুন। এবারে তাতে ৩ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো (যেটা
করেছেন আগে) দিন, এক চামচ হলুদ লংকাগুঁড়ো দিন, বাকি জয়িত্রি আর ছোটো এলাচ গুঁড়ো
দিন। খুব ভাল করে মেশান, এবার সমগ্র মিশ্রন ওই মাংস আর ঝোলের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে অল্প
নেড়ে মিশিয়ে দিন। দু চামচ পাতি লেবুর রস ছড়িয়ে দিন ওপরে।
ভিজিয়ে রাখা চালের জল ছেঁকে ফেলে দিন। এবারে
দেখুন জল ফুটে গেছে কিনা। ফুটে গেলে একটা সাঞ্চা বা ছাঁকনি দিয়ে গোটা মশলা গুলো জল
থেকে তুলে ফেলে দিন। আর জলে লেবুর রসের বাকিটা দিয়ে দিন। এবারে ভিজিয়ে রাখা চাল ফুটন্ত
জলে ছাড়ুন। চাল কিন্তু পুরো রান্না হবে না। স্রেফ আধসেদ্ধ হবে। ধরে নিন ৫০% সেদ্ধ
হবে। বেশী সেদ্ধ হলে বিরিয়ানি মন্ড পাকিয়ে যাবে। যেই বুঝবেন আধসেদ্ধ হয়েছে অমনি
চাল হাঁড়ি থেকে একটা সাঞ্চা বা বড় ছাঁকনিতে করে তুলে নিয়ে মাংস আর ঝোলের ওপর সমান
ভাবে ছড়িয়ে দিতে থাকুন। আমাদের প্রথাগত পদ্ধতিতে ফ্যান গালতে গেলে, ওই দু তিন
মিনিটে চাল আরো কিছুটা রান্না হয়ে যাবে। চাল সমান ভাবে ছড়িয়ে দিয়ে এবার বিরিয়ানির
হাঁড়ি আঁচে বসান।
চালের ওপরে কয়েক চামচ ঘি ছড়িয়ে দিন। জলে গুলে
রাখা জাফরান ছড়িয়ে দিন। এবার আগে থেকে মেখে রাখা আটা, বিরিয়ানির ঢাকার কানায়
লাগিয়ে প্রেশার কুকারের মত একটা গ্যাসকেট তৈরি করুন। এটা না করলে স্টিম বা দম
বেরিয়ে যাবে। ঢাকনা এঁটে লাগিয়ে দিন। প্রথম পাঁচ মিনিট চড়া আঁচে, পরের ১০ মিনিট
খুব হালকা আঁচে দমে রান্না হতে দিন। সব মিলিয়ে ১৫-১৮ মিনিট দমে থাকার পর হাঁড়ি
নামান। ঢাকনা খুলুন।
বিরিয়ানির ওস্তাদ রসুইকরের মত এক দিক থেকে কেটে
কেটে থালায় তুলে বিরিয়ানি ভাগ করে দিন সকলকে। সাবধানতার দুখানা জায়গা। এক যা আগেই
বলেছি, চাল কতটা সেদ্ধ হলো সেটা। দুই নুনের পরিমান। মাংস রান্নার সময় নুন দিচ্ছেন,
আবার চাল সেদ্ধর সময়েও । আর বিরিয়ানিতে নুন কম হলে বিরিয়ানি বরবাদ। কাজেই নুনের
পরিমান বিভিন্ন সময়ে চেখে নিয়ে দেওয়াই ভাল।
খুশ-আমদিদ, নোষ ফরমাইয়ে।
এমনি রেসিপি পড়তে আমি কোনদিনই পারিনা। সেটা অবশ্য রেসিপির দোষ নয়, রান্না জিনিসটা আমার মাথায় ওইভাবে ঠিক ঢোকে না আসলে, ঠিক অঙ্কের মত! কেউ ভালো করে বুঝিয়ে দিলে অবশ্য আমি রান্না মন্দ করিনা, সে প্রমাণ পেয়েছি!
উত্তরমুছুনকিন্তু এইগুলো, যেগুলো লেখো, পড়ে ফেলি। কারণটা সহজ - রান্না তো আর শুধু রেসিপি নয়, রান্না হল সংস্কৃতি, স্বাদ, স্মৃতি, অনুভূতি। এই লেখাটা সেরকম - প্রথম ভাগে, সংস্কৃতি, যেটা ঠিক ওই বিরিয়ানিটার মতই মোলায়েমভাবে মিলিয়ে গেল পরের অংশে, যা হল রেসিপি, প্লাস অনুভূতি। পড়তে পড়তে ব্যাপারটা খুব সহজেই চোখের সামনে, বা মাথার মধ্যে, চলে এল।
এইবার, একদিন বানিয়ে ফেলতে হবে। সেদিন ডাকব, খেতে হবে। ☺
তুমি এটা চোখের সামনেই হতে দেখেছ। এবং চেখেছ :-)
মুছুনএমন নিখুঁত..... বেহত্ রিন শিল্প......
উত্তরমুছুনরেসিপি তো অনেকই হয়... এই পাতায় অনেকখানি সময় নিয়ে যে রেশমিয়ানাখানি পড়লাম, তার একমাত্র তুলনায় আসে কোনো স্নিগ্ধ লাল ওয়াইনের ধীর পেলব মাধুরীময় বিভাব.... মেহ্দি হসান সাহেবের কোনো ঘজল..... পা ডুবানো কোনো রাতচরা নদীর পূর্ণিমা রাত.....
মুগ্ধ.... মুগ্ধ হলাম বড়.... খুসামদিদ...
ধন্যবাদ আপনি পড়েছেন এবং লিখেছেন। অনুরোধ রইল, যদি একটি বার রান্না করে খেয়ে দেখেন, আর তার পর এক লাইন লিখে দেন ... তাতে বুঝতে পারবো লেখাটা ঠিক ঠাক হয়েছে কিনা।
মুছুনranna korlam. awesome hoyechhey. Oti proshongshito. Bookmark kore rakhlam.
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ। আমাদের কলকাতার চেনা বিরিয়ানির রেসিপিও সম্প্রতি দিয়েছি। এই রইলো এখানে http://dwitiyaadhyay.blogspot.com/2019/11/blog-post.html
মুছুন