হাজার
ওয়াটের আলো জ্বাললেও হয়ত এ ঘরের সব কটা কোনায়
জমে থাকা অন্ধকার পুরো দূর করতে পারবে না। একদিন ছিল, যখন কলকাতা শহরে বিজলী বাতির
আসার আগে এ ঘরে সন্ধ্যের পর জ্বলে উঠত গ্যাসের আলো, কিম্বা তারও আগে মোমের কিম্বা
খুব দামি কারুকাজ করা লন্ঠনের ঝাড়। আর সেই আলোতেই ঝলমল করে উঠত এই ঘর, ঘরের বাইরে টানা বারান্দা, দালান, সদর দরজা। লোক জন , হই হট্টগোল সব মিলিয়ে একেবারে জমজমাট। অন্ধকারের
চিহ্ণ খুঁজে পাওয়া যেতনা কোথাও। ঠিক কবে থেকে যে বাড়িটা খালি হতে শুরু করল কে জানে!
সন্ধ্যের গমগমে শহুরে ব্যাস্ততার মাঝখানে, এ বাড়ির ভেতরটুকু একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত শান্ত। সন্ধ্যে ঘন হয়ে এলে বিপিন বাবু এই নিস্তব্ধতা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। এ বাড়ির এক এক পুরুষে ছিল এক এক রকম নেশা। কখনো ব্যাবসা বানিজ্য, কখনো নাচ গান, কখনো শিকার, কখনো গাড়ি। বিপিন চৌধুরির বাবার ছিলো সাহিত্যের নেশা। নিজে লিখতে না পারুন, সাহিত্যিক পরিমন্ডল খুব পছন্দ করতেন। শেষে প্রকাশনার কারবার ফেঁদে বসেছিলেন। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া টাকাপয়সা কাজে লাগিয়ে কিছু নামী লেখকের লেখার স্বত্ত্বও যোগাড় হয়েছিল এক বন্ধুর মাধ্যমে। ব্যবসা কোনোক্রমে টিকে গেলেও, রমরম করে চলেনি কখনো। পুরোনো ছাপাখানা সমেত প্রকাশনার ব্যাবসা আজও রয়েছে বটে, কিন্তু সেখান থেকে গত বিশ বছরে কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। বিপিনিবাবুর সেই উদ্যোগই নেই। ছাপাখানা চলে টুকটাক লিফলেট, পোস্টার, সরলাবালা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র, নেমতন্নের চিঠি, শ্রীচৈতন্য বস্ত্রালয়ের প্যাকেট এমনকি রসময় মিস্টান্ন ভান্ডারের সন্দেশের বাক্স ছেপে। তাতে বিপিন বাবুর আপত্তি নেই। সারা দিনে ঘন্টা ছয়েক তিনি ছাপা খানায় বসেন। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা। তার মধ্যে যা হলো, হলো। গুটিকয় কর্মচারি আছে, তারাই সামলে নেয়। এছাড়া বিপিনবাবু একলা মানুষ। দিব্যি চলে যায়। সন্ধ্যে হলে আরাম করে এসে শোবার ঘরে নিজের ইজি চেয়ারটিতে বসেন বিপিন চৌধুরি। সামনে পুরোনো বুক শেলফে সারি সারি বই। সবই বিপিন বাবুর বাবার সংগ্রহের। বুকশেলফের পাশে একখানা ডেস্ক। সেখানে আরো অনেক কিছুর সঙ্গে বাঁধানো ফ্রেমে রয়েছেন বিপিন বাবুর পরলোকগত স্ত্রী। বছর পাঁচেক আগে ঘুমের মধ্যেই সেরিব্রাল অ্যাটাকে শেষ। ঝুট ঝামেলা বিহিন শান্ত মানুষটি যাবার সময়েও কাউকে ব্যাতিব্যস্ত করেননি, সময়ও দেননি।
সন্ধ্যের গমগমে শহুরে ব্যাস্ততার মাঝখানে, এ বাড়ির ভেতরটুকু একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত শান্ত। সন্ধ্যে ঘন হয়ে এলে বিপিন বাবু এই নিস্তব্ধতা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। এ বাড়ির এক এক পুরুষে ছিল এক এক রকম নেশা। কখনো ব্যাবসা বানিজ্য, কখনো নাচ গান, কখনো শিকার, কখনো গাড়ি। বিপিন চৌধুরির বাবার ছিলো সাহিত্যের নেশা। নিজে লিখতে না পারুন, সাহিত্যিক পরিমন্ডল খুব পছন্দ করতেন। শেষে প্রকাশনার কারবার ফেঁদে বসেছিলেন। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া টাকাপয়সা কাজে লাগিয়ে কিছু নামী লেখকের লেখার স্বত্ত্বও যোগাড় হয়েছিল এক বন্ধুর মাধ্যমে। ব্যবসা কোনোক্রমে টিকে গেলেও, রমরম করে চলেনি কখনো। পুরোনো ছাপাখানা সমেত প্রকাশনার ব্যাবসা আজও রয়েছে বটে, কিন্তু সেখান থেকে গত বিশ বছরে কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। বিপিনিবাবুর সেই উদ্যোগই নেই। ছাপাখানা চলে টুকটাক লিফলেট, পোস্টার, সরলাবালা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র, নেমতন্নের চিঠি, শ্রীচৈতন্য বস্ত্রালয়ের প্যাকেট এমনকি রসময় মিস্টান্ন ভান্ডারের সন্দেশের বাক্স ছেপে। তাতে বিপিন বাবুর আপত্তি নেই। সারা দিনে ঘন্টা ছয়েক তিনি ছাপা খানায় বসেন। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা। তার মধ্যে যা হলো, হলো। গুটিকয় কর্মচারি আছে, তারাই সামলে নেয়। এছাড়া বিপিনবাবু একলা মানুষ। দিব্যি চলে যায়। সন্ধ্যে হলে আরাম করে এসে শোবার ঘরে নিজের ইজি চেয়ারটিতে বসেন বিপিন চৌধুরি। সামনে পুরোনো বুক শেলফে সারি সারি বই। সবই বিপিন বাবুর বাবার সংগ্রহের। বুকশেলফের পাশে একখানা ডেস্ক। সেখানে আরো অনেক কিছুর সঙ্গে বাঁধানো ফ্রেমে রয়েছেন বিপিন বাবুর পরলোকগত স্ত্রী। বছর পাঁচেক আগে ঘুমের মধ্যেই সেরিব্রাল অ্যাটাকে শেষ। ঝুট ঝামেলা বিহিন শান্ত মানুষটি যাবার সময়েও কাউকে ব্যাতিব্যস্ত করেননি, সময়ও দেননি।
ছাপাখানা
মিনিট দশেকের হাঁটা পথ বাড়ি থেকে। বড় রাস্তা এড়িয়ে, এ গলি – ও গলি করেই চলে আসা যায়। বাড়িতে ফিরে
হাতমুখ ধুয়ে কাচা পাজামা আর ফতুয়া গায়ে চড়িয়ে বিপিন বাবু একটা হাঁক দেন
“শ্রীনাথ...”। কিছু বলতে হয়না। মিনিট পাঁচেকের ভেতরেই শ্রীনাথ হাজির হয় চায়ের
পেয়ালা আর দু খানা ব্রিটানিয়া থিন অ্যারারুট নিয়ে। শ্রীনাথ এই বাড়ির আর এক
বাসিন্দা। জন্ম থেকেই এ বাড়িতে। বয়সে বিপিনবাবুর চেয়ে কিছুটা বড়ই হবে। সেই হিসেবে
একটু অভিভাবকগিরিও চালায় মাঝে মাঝে। দেশের বাড়ি হয়ত তার ছিলো কোথাও, কিন্তু এত
বছরে সেসবের আর খোঁজ রাখেনা কেউ। এই বাড়িই শ্রীনাথের বাড়ি হয়ে রয়ে গেছে এত বছর
ধরে। চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে বিপিন বাবু ডেস্কের ওপরে রাখা আধ পড়া বইটা হাতে তুলে
নিলেন। এলেরি কুইনের , দ্য ডোর বিট্যুইন। দিব্যি বই। বাবার সংগ্রহের কয়েক হাজার বই
থেকে নিয়ে একটা করে বই পড়া আজকাল বিপিন বাবুর বেশ নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মাঝে
ভাবেন, কেন যে আগে এসব পড়েন নি, অথচ বাড়িতেই সব ছিল এতকাল। বইয়ের জন্যে টিভিটায়
আজকাল হাত পড়ে কম। শোবার ঘরে টিভি রাখা গিন্নির ঘোরতর অপছন্দ ছিলো। তিনি চলে যাবার
পর টিভি সেই বসার ঘরেই রয়ে গেছে। এখন শ্রীনাথ সন্ধ্যের পর টিভি খুলে বাংলা সিরিয়াল
দেখে। তবে তাকে বলা আছে, আওয়াজ যেন বেশী না হয়, বিপিন বাবুর পড়ায় যেন ব্যাঘাত না
ঘটে। বইটা খুললেন বিপিন বাবু। অল্প কয়েকটা পাতাই বাকি রয়ে গেছে। আর সেই কটা
পাতাতেই বইয়ের সবচেয়ে গায়ে কাঁটা দেওয়া অংশটুকু হয়ত লুকিয়ে। বিপিন বাবু ডুবে গেলেন
বইয়ের পাতায়।
*******
যাঁরা
বরাবর নিয়মিত বই পড়েন, তাঁদের অনেকেরই পড়ার গতি সাধারনের তুলনায় বেশ বেশী। বিপিন
বাবু নব্য পড়ুয়া। আগে খবরের কাগজটাও নিয়মিত পড়তেন না। আজকাল পড়েন, তবে খবর বেছে
বেছে। গোটা তিরিশ পাতা পড়তেই ঘন্টাচারেক পেরিয়ে গেল। বইটা শেষ করে কয়েক মিনিট চোখ
বুঁজে চুপ চাপ বসে রইলেন বিপিন চৌধুরি। এটা তাঁর ভাল লাগে। পড়া শেষ করে গোটা বইটা
আর এক বার ভেবে নেন মনে মনে। কয়েক মিনিট কেটে গেলে চোখ খুলে আস্তে আস্তে বাস্তব
জগতে ফিরতে থাকেন। বসার ঘর থেকে আবছা টিভির আওয়াজ আসছে। বিপিন বাবু উঠলেন আস্তে
আস্তে চেয়ার ছেড়ে। আড়মোড়া ভাঙলেন। একটানা চেয়ারে বসে কোমর-পিঠ টাটিয়ে উঠেছে। অল্প কয়েক পা পায়চারি করে নিলেন বিপিন বাবু। ভাল
বই পড়লে মন বড় ভাল হয়ে যায়। ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে গিন্নির ছবির দিকে একটু তাকিয়ে
থাকলেন। ছবিটা এখনো নতুনই বলা যায়। তবে ভাল করে দেখলে কালো কাঠের ফ্রেমের কয়েক
জায়গায় পালিশ ও রঙ উঠে গিয়ে ফ্যাকাশে কাঠের রঙ দেখা যাচ্ছে। এমনকি ভেতরের
কার্ডবোর্ডেও কয়েকটা কালো কালো ফুটকি। তবে কি পেছনের দিকে বাঁধাই নষ্ট হয়ে গিয়ে
পোকা ঢুকেছে? ছবি টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখলেন বিপিন বাবু। ছবির পেছনের বাদামী
চাম-কাগজ কয়েক জায়গায় ছিঁড়েছে। পুরোনো বাড়িতে মাঝেমধ্যেই এই সমস্যা হয়। বইগুলো তাই
শ্রীনাথ কে দিয়ে নিয়মিত রোদে দেওয়া হয়। কিন্তু ছবির দিকে নজর দেওয়া হয়নি এত দিন।
এটাকেও সারাতে পাঠাতে হবে দোকানে। ছবির পাশে নজর পড়ল বিপিন বাবুর। ডেস্কের ওপর
অনেক দিন ভাল করে তাকানো হয়নি। শ্রীনাথ ধুলো ঝাড়ে বটে, কিন্তু জিনিষ পত্র নাড়াচাড়া
করেনা। ছবির পাশে অনেক গুলো পুরোনো গ্রামাফোন রেকর্ড রাখা। সেগুলোর খাঁজে খাঁজে
ধুলো জমে আছে। গ্রামাফোন রেকর্ড কেনা এক সময় সখ ছিলো বিপিন বাবুর বাবার। ধর্মতলা
গেলেই কিনতেন। বিশ্বাসের দোকানে তো তাঁকে চিনেই গিয়েছিলো। গেলেই নতুন বেরোনো
রেকর্ড বের করত দোকানের ছোকরা এক গাল হেসে। তার পর এই বাড়ি, তার মানুষজন, শখ আহ্লাদের মতই
গ্রামাফোন আর তার রেকর্ড উঠে গেল। তার জায়গায় এলো নেহাত খেলো খনখনে টেপ রেকর্ডার
বলে এক বিদঘুটে ফক্কিকারি বস্তু, যার সঙ্গে গ্রামাফোনের গরিমার কোনো মিল নেই। বিপিন
বাবু ক্যাসেট কেনেননি কোনোদিন। উৎসাহ পাননি। গ্রামাফোন উঠে যাবার পর রেকর্ড চাপিয়ে
গান শোনাও আস্তে আস্তে বন্ধই হয়ে গেছে। গিন্নি তবু এফ এম চালিয়ে গান শুনতেন। বিপিন
বাবুর সে শখ ও তেমন নেই। একটা গান হবে, আর তার পরে কেউ একটা এসে অসহ্য বিরক্তিকর
ভাবে বকবক করে কানের পোকা নড়িয়ে দেবে। নাঃ এসব পোষায়না। একটা রেকর্ড টেনে বের
করলেন বিপিন বাবু। ফিরোজা বেগম। নজরুলগীতি। “তুমি কি এখন, দেখিছ স্বপন...”। আহা,
কি গুরুগম্ভীর আওয়াজ ছিল। কিন্তু গ্রামাফোনটা গেল কোথায়? এখানেই তো ছিলো? এদিক
ওদিক দেখলেন বিপিন বাবু। আলমারির পাশে এক কোনায় একটা কাঠের টেবল রাখা। তার ওপরে
অনেক কিছুর সঙ্গে গ্রামাফোনটাও আছে। তবে অনেক কাল ব্যবহার হয়নি সেটা দেখে বেশ বোঝা
যাচ্ছে। পুরোনো ফিলিপ্স কোম্পানির মডেল। আশ্চর্যের কথা, ওপরের স্বচ্ছ ঢাকনাটা
তোলার পর, ভেতরটা কিন্তু বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্নই লাগছে দেখ। এটা কি চলবে? খুঁজে
পেতে পেছন দিকে তার আর প্লাগটা হাতড়ে বের করলেন। একটা রবারের গার্ডার দিয়ে সুন্দর
করে গুটিয়ে আটকানো ছিলো তারটা। তারটা হাতে নিয়ে একটু ভাবলেন বিপিন বাবু। কেননা
প্লাগ পয়েন্ট অনেক দূরে। সেই দরজার পাশে। অতটা যাবেনা তার। মনে পড়ল টেবিলের পেছনেই একটা প্লাগপয়েন্ট থাকা উচিত।
গিন্নি করিয়েছিলেন।
ফিরোজা
বেগম গান শুরু করেছেন। গিন্নির ছবির সামনে একটু সময় দাঁড়িয়ে, তারপর সরে এসে বিপিনবাবু বইয়ের
আলমারির কাছে এসে দাঁড়ালেন। বহু ধরনের বইয়ের সংগ্রহ এখানে। এলেরি কুইনের , দ্য ডোর
বিটুইন নিজের শুন্যস্থানে ফিরে গেল। একই সারির বাকি বই গুলো দেখতে থাকলেন বিপিন
বাবু। জুলিয়াস রেডেলের মস্তিস্কের ব্যারাম সম্পর্কিত বই, শম্ভুচরন বোসের লেখা
“টেররস অফ তেরাই”, “এ বেঙ্গলী ইন লামাল্যান্ড”, স্ট্যানলি গিবনের ডাকটিকিটের
ক্যাটালগ, ক্যাপ্টেন স্কটের মেরু অভিযানের ওপর একখানা বই, মাঙ্গো পার্কের পশ্চিম আফ্রিকার অভি্যান, মহিতোষ
সিংহরায়ের “বাঘে বন্দুকে”, জটায়ুর “কঙ্গোর গঙ্গোরিলা”, কোনোটাই ঠিক মনে ধরছেনা।
শেষে চোখ আটকালো চার্লস ওয়েকম্যানের দু ভল্যুমের “হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক” বইটার ওপর।
একটু ভেবে প্রথম খন্ডটা নামালেন বিপিনবাবু। বাইরে মেঘ ডেকে
উঠলো দূরে কোথাও, গুরু গম্ভীর মেঘের ডাক বড় ভাল লাগে।
*****
বাইরে
অঝোরে বৃষ্টি পড়ে চলেছে। গ্রামাফোনে এখন
মালকোষ বাজছে সেতারে। বিপিন বাবু ঘরের আলো
নিভিয়ে দিয়েছেন। শুধু পাশে খাটো চায়ের টেবিলের অপর ছোটো একখানা আলো জ্বলছে বই পড়ার
জন্যে। আলোর পাশে রাখা একখানা ছোটো রামের বোতল, তার পাশে একটা কোকা কোলা আর একটা
সাধারন কাচের গ্লাসে কিছুটা গাঢ় রঙের তরল। এই সুন্দর সঙ্গীতের সঙ্গে বর্ষার রাতে
অনেক দিন পর একটু পান করতে ইচ্ছে করলো বিপিনবাবুর। হাতে চারমিনার জ্বলছে। রোজকার
থেকে আজ যেন একটু আলাদা। এই বৃষ্টি, সঙ্গীত, অ্যালকোহল, সিগারেট, সব মিলিয়ে
অনুভুতি গুলো কেমন আচ্ছন্ন হয়ে আসছে। আর তার ওপরে প্রভাব ফেলেছে এই বই। ভাবতে অবাক
লাগে, এ বই তিনি আগে পড়েননি কেন! মানুষের ইতিহাস যতদিনের, জাদুর ইতিহাসও ততটাই
পুরোনো। বিপিন বাবু ভাবতে থাকলেন অনেক অনেক দিন আগে ইশকুলে পড়ার সময়ের এক জাদু আর
জাদুকরের কথা। ভদ্রলোকের নামটাও মনে আছে , রসময় সূর। বইটা পাশে টেবিলের ওপর রেখে
দিলেন বিপিনবাবু। পাখার হাওয়ায় বইয়ের মলাটের ওপরের জ্যাকেটটা উড়ে যাচ্ছে। পুরোনো
বই, পাছে আরো ছিঁড়ে যায়, তাই রামের বোতলটা চাপা দিয়ে রাখলেন বিপিন বাবু। আহা, এ বাড়িতে
একদিন খাশ স্কচ হুইস্কি, শঁপাঞ কিম্বা বোর্দো , বার্গেন্ডি খাওয়ার রেওয়াজ ছিলো।
রাম কেউ ছুঁয়ে দেখার কথাও ভাবতোনা। আবছা আলোয় গিন্নির ছবিটা দেখা যাচ্ছে। বিপিন
বাবু ফিসফিস করে বললেন – “বুঝলে গিন্নি, সবই ভুতে খেয়েছে একথা সত্যি বটে, কিন্তু
আজও এই রক্তের ভেতরে বাবুয়ানির নেশাটা যায়নি। রাম খেয়ে কি আর হয়? হতো ভাল স্কচ,
দেখতে আজ সারা সারা একা একাই মাইফেল জমিয়ে দিতাম।“ একটু থেমে
গ্লাসে একটা চুমুক দিলেন বিপিন বাবু, তার পর ছবির দিকে চেয়ে বললেন - “গ্রামাফোন নয় গিন্নি, গাইয়ের সামনে বসে তার
নিজের গলায় গান শুনতাম”। একটু হাসি মুখে চেয়ে রইলেন ছবির দিকে বিপিন বাবু।
তার পর একটা ছোট্ট “গুড নাইট” বলে আলো নিভিয়ে দিলেন।
******
সকালের
রোদ্দুরের সঙ্গে ঘরে ঢুকছে একটা অচেনা শব্দ। গানের শব্দ। নজরুলগীতি – “তুমি কি
এখন, দেখিছ স্বপন...”। এ বাড়ির চৌহদ্দিতে কেউ কোনোদিন গান টান করেনা। বিপিনবাবু শুয়ে
শুয়ে শুনলেন কিছুক্ষন। ওদিকে শ্রীনাথ ঢুকেছে চায়ের কাপ আর খবরের কাগজ নিয়ে।
- এই সাত সকালে কে গান গাইছে রে শ্রীনাথ?
- পাশের বাড়িতে ভাড়াটে এসেচে গো। নতুন ভাড়াটে। দিদিমনি নাকি গান করেন।
- এই সাত সকালে তাই বলে............ গলাটা মন্দ নয় অবিশ্যি...
- শুনলুম টিভি রেডিওতেও নাকি গানটান করেন...
পাশের
ছোটো টেবিলের ওপর চায়ের কাপ আর খবরের কাগজ আর কাগজের সঙ্গে আসা “ভ্রমন” পত্রিকা রাখতে রাখতে বলল
শ্রীনাথ। বিপিন বাবু তখনো জানলার বাইরে তাকিয়ে গানটা শোনার চেষ্টা করছেন।
- ও ব্বাবা! এত দামী বিলিতি আর এই সিগারেট আনালে কোথা থেকে?
বিপিন
বাবু তাকিয়ে দেখলেন টেবিলের দিকে। তাঁর চায়ের কাপ, তার পাশে টেবিল ল্যাম্প, ল্যাম্পের
সামনে চার্লস ওয়েকম্যানের “হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক” আর তার ওপরে রাখা রয়েছে একখানা খাঁটি
স্কচ জনি ওয়াকার হুইস্কির বোতল, আর এক প্যাকেট মার্লবরো সিগারেট। প্রথমটা
বিপিনবাবু কি বলবেন ঠিক বুঝতে পারলেন না। প্রথমেই যেটা মাথায় এলো, সেটা সুরা ও
সিগারেটের বদলে যাওয়া নয়, বরং মনে হলো, এই দুটি বস্তু তাঁর জীবনধারনের ক্ষমতার
অনেক অনেক ওপরে। ওদিকে শ্রীনাথ ঘর ঝাড়পোঁছ করতে করতে কথা বলেই চলেছে।
- বলি চল্লিস পেরিয়েছ তো অনেক দিন। আর কারবারের হালও ভালোনা। এখন এই সব নেশা তোমার সইবে?
- ও তুই বুঝবিনা শ্রীনাথ.........
- আমি কি আর বুঝবো? তিন কাল ধরে এ বাড়িতে কত কি দেখে এলুম, তাই বলচি। যা ভালো বোঝও করো, আমার আর কি? যা বলবে করে দেবো, যেমন বলবে করে দেবো......
শ্রীনাথের
বকবক মাথায় ঢুকছিলো না বিপিনিবাবুর। ঊঠে বসে বোতলটা হাতে ধরে ভাল করে দেখলেন
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। অর্ধেকটা তরলে ভর্তি। ছিপি খুলে শুঁকে দেখলেন। হ্যাঁ, খাঁটি জনি
ওয়াকারই বটে। মার্লবরোর প্যাকেটে দুটো সিগারেট নেই। কাল যে চারমিনার খাচ্ছিলেন, সে
প্যাকেটে দু খানা খাওয়া হয়ে গিয়েছে কাল রাতেরটা ধরলেন। বিড়বিড় করে আবার বললেন –
“তুই বুঝবিনা শ্রীনাথ...... আমিও ছাই বুঝছিনা কি হলো”। চা আর খবরের কাগজের সঙ্গে
শ্রীনাথ কয়েকটা খাম রেখে গেছে। ডাকবাক্সে পিওন এসে ফেলে দিয়ে যায়। শ্রীনাথ সকাল
বেলা একবার করে ডাকবাক্সে উঁকি মারে। নতুন কিছু দেখলে নিয়ে আসে ওপরে। ইলেকট্রিক
বিল এসেছে। এ মাসে বেশ বেশী। বিলটা হাতে ধরে দেখতে দেখতে গলা তুলে বিপিন বাবু
শ্রীনাথ কে বললেন ফ্রিজে তেমন কিছু না থাকলে ফ্রিজ যেন বন্ধ রাখা হয়, বর্ষা এসে
গেলেও গরমের তুলনায় বিলের পরিমান কমছেনা। চা খেয়ে বিপিন বাবু খাট থেকে নামলেন।
ইলেক্ট্রিকের বিলটা গুঁজে রাখলেন ভ্রমন পত্রিকার খাঁজে, আর পত্রিকাটি আশ্রয় পেল কালকের পড়তে থাকা “হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক” বইয়ের ওপর। দূর থেকে
শ্রীনাথের গজগজ কানে আসে – “শুধু ফ্রিজ বন্ধ করলেই হবে? ওদিকে বিলিতি ইয়ে......”
****
কাজে
বেরোবার আগে, বৈঠকখানায় টাঙানো অনেক গুলো ঠাকুর দেবতার ছবিতে একবার করে মাথা
ঠেকিয়ে বেরোনো বহুকালের অভ্যেস বিপিন বাবুর। আজকেও মাথা ঠেকাচ্ছিলেন, এমন সময় সদর
দরজায় একটা ঠক ঠক করে জোরে আওয়াজ হলো। এত জোরে দরজায় আজকাল কেউ ডাকেনা। “কলিং বেল
আছে কি করতে? যত্তসব অশিক্ষিত ইয়ে...” বিড়বিড় করতে করতে বিপিন বাবু দরজা খুললেন।
সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা। তিরিশের মাঝামাঝি। যথেষ্ট আধুনিকা, তবে আজ ইনি শাড়ীতে।
অচেনা মুখ। মাথার ওপর রোদচশমা তোলা। মাঝারি গড়ন, মুখ পানপাতা, চোখের দিকে তাকালে
বুক ঢিপঢিপ করে। মেয়েটি বোধহয় বিপিন বাবুর বিড়বিড় করে বলা কথার শেষ টুকু শুনে ফেলে
থাকবে। মুখে একটা অপ্রস্তুতের হাসি।
- কিছু মনে করবেন না, মানে, কলিং বেলটা দেখতে না পেয়ে......
এমন হাসির সামনে দাঁড়াতে পারে তেমন বিরক্তি খুব কমই আছে। এক গাল হেসে বিপিন বাবুও –
- না , মানে পুরোনো দরজা আর বেল তো, সব সময় নজরে পড়েনা
- আমি আসলে এ পাড়ায় নতুন, আমার নাম শ্রীতমা। আপনার ঠিক পাশের বাড়িতেই এসেছি।
- আপনি , মানে ভেতরে আসুন না
- আমাকে তুমি বলতে পারেন স্বচ্ছন্দে। আজ একটু তাড়া আছে, আর একদিন হবেখন। আমি শুধু একটু খোঁজ করছিলাম, মানে, কাজের লোক পাওয়া যাবে কোথায়...... মানে বাড়িতে আর কেউ? ... বৌদি......
- আর কেউ তো নেই, আমি একাই থাকি, সঙ্গে ২৪ ঘন্টার কাজের লোক। তা আপনার বোধহয় ঠিকে কাজের লোক দরকার...
- হ্যাঁ ঠিকে কাজের লোক। একটু সকাল সকাল এসে কাজ করে দিয়ে চলে যাবে। আমরা দুজন লোক, আমার হাজব্যান্ড আর আমি। তিনিও সকাল সকাল অফিস, আর আমিও ক্লাস নিতে চলে যাই।
- ক্লাস নিতে? আপনি পড়ান?
- আমি রবীন্দ্রভারতীতে পড়াই। আমার সাবজেক্ট শুনলে হাসবেন। গান বাজনা।
- না না, হাসবো কেন? ওমা, সে তো ভারি গুনের জিনিস......... আচ্ছা, আমি নাহয় শ্রীনাথকে বলে রাখবো। আপনি সন্ধ্যে বেলা ফেরার সময় একবারটি খোঁজ করে যাবেন, কেমন?
- এটা ভারি উপকার করলেন। কাজের লোক নিয়ে যে কি চিন্তা, কি বলব। আজ তাহলে এগোই? ওদিকে আবার ক্লাসের......
- হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনি এগোন। নিশ্চই।
- এই কাগজে আমার ফোন নম্বর লেখা আছে, যদি কিছু জিজ্ঞেস করার থাকে একটু ফোন করে নিতে বলবেন। ... আসি তাহলে? নমস্কার।
বিপিন
বাবু বেরোবেন বলে শ্রীনাথ পেছনেই এসে দাঁড়িয়েছিল। কথাবার্তা সে সবই শুনেছে। বিপিন
বাবুকে আশ্বাস দিলো যে সে নিশ্চই অমুকের মায়ের সঙ্গে কথা বার্তা বলে রাখবে। ওদিকে
শ্রীতমা বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে গেছে। এগিয়ে গেছে, কিন্তু বিপিন বাবুর মনে একটা ছাপ
রেখে গেছে। অনেক অনেক দিন পর, একটু যেন নড়ে গেলেন এই নতুন উপস্থিতিতে। একঘেঁয়ে নিস্তরঙ্গ জীবনে বোধহয় একটা ঢিল পড়ল। বিপিন বাবু বেরোবার সময় উলটো চটি পায়ে গলালেন। ভুল করে পুরোনো দেওয়াল ঘড়িটাকে পেন্নাম ঠুকে ফেললেন। শ্রীনাথ সব দেখে টেখে নিশ্বাস ফেলল। আর বিপিন বাবু রাস্তায় নামার পর গলা তুলে পেছন থেকে মনে করিয়ে দিল, চা ফুরিয়েছে, বাড়ি ফেরার সময় যেন
চা পাতা আনা হয়।
******
সন্ধ্যেবেলা
ঘরে ঢুকে আগে দরজার পাশে সুইচে আঙুল রেখে আলো আর পাখা চালালেন বিপিন বাবু। পাখার হাওয়ায় ফরফর করে পাতা উলটে গেল ছোটো টেবিলের ওপর রাখা পত্রিকার। আর সেই হাওয়াতেই পত্রিকার ভেতরে রাখা ইলেক্ট্রিকের বিল উড়ে এসে পড়ল বিপিন
বাবুর পায়ের কাছে। বিপিন বাবুর ডান হাতে ব্রাউন পেপারে মোড়া
চায়ের প্যাকেট। নিচু হয়ে বাঁ হাতে মেঝে থেকে ইলেক্ট্রিকের
বিল তুলে নিলেন। হঠাৎ চোখ আটকে গেল বিলের নিচে একটা লালচে
ছাপ দেখে। বিলের টাকা মিটিয়ে দিলে এই ছাপ দেওয়া হয়ে
থাকে কাউন্টারে। বিল কে দিল? কখন দিল? শ্রীনাথ দিয়েছে কি?
গলা তুলে শ্রীনাথকে তাড়াতাড়ি একবার আসতে বলে হাঁক পাড়লেন বিপিন বাবু। এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর বিলটা রাখতে গিয়ে আবার এক প্রস্থ অবাক হবার পালা। “ভ্রমন” পত্রিকা বদলে গিয়ে পড়ে আছে
একখানা ঝকঝকে নতুন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। বিপিন বাবু কিছুক্ষন থ হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার পর চায়ের প্যাকেট টা নামিয়ে রেখে হাতে তুলে নিলেন নতুন পত্রিকা। আনকোরা নতুন বই। পত্রিকার সামনের মলাটে একটা রংচঙে পাখির ছবি, আর
পেছনের মলাটে বিদেশী বিমান কোম্পানির ইয়োরোপ নিয়ে যাবার আহ্বান। বিজ্ঞাপনে
একখানা খাশ ইতালিয় কফির কাপ, যাতে ক্রিম দিয়ে একখানা হৃদয়ের রেখাচিত্র আঁকা। নাকের
কাছে ধরলেন। এখনো কালির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে পত্রিকার
পাতায়। শ্রীনাথ ঢুকেছে
দরজা দিয়ে। পেছনে না তাকিয়েই শ্রীনাথ কে বিপিন বাবু
জিজ্ঞেস করলেন ইলেক্ট্রিকের বিল সে কখন দিলো। শ্রীনাথ জবাব দিলো, আজ সারা দিন সে বাড়ির বাইরে পা দেয়নি, আর বিপিন
বাবু টাকা দিলে তবেই না বিল দেওয়া হবে।
আশ্চর্্য্য।
আশ্চর্্য্য। আশ্চর্্য্য। মানুষের অবাক হবার একটা সীমা থাকে। আজ কি সব সীমা
অতিক্রম করে যাবেন বিপিন বাবু? কেমন মাথা ঝিম ঝিম করে উঠছে। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে
বারান্দা দিয়ে হেঁটে গিয়ে কলঘরে ঢুকলেন বিপিন বাবু। মাথায় মুখে একটু জল থাবড়া
দিলেন। বেসিনের ওপরে লাগানো বহু পুরোনো আয়নায় নিজের মুখটা অচেনা লাগছে কি? বদলে যাওয়া মনে হচ্ছে?
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলেন আয়নার সামনে। বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করলেন – “এসব কি হচ্ছে?”।
আয়নার মানুষের ঠোঁট ঠিক একই ভাবে নড়ল কি? তোয়ালে দিয়ে মাথা মুখ মুছে নিলেন বিপিন
বাবু। অবেলায় জল ঘাঁটা ভাল না। যা হচ্ছে তার ব্যাখ্যা পাওয়া অসম্ভিব এই মুহুর্তে।
কাউকে জিজ্ঞেশ করা যায় কি? একবার তুলসীবাবু কে জিজ্ঞেশ করে দেখতে হবে। ওনার মত
যুক্তিবাদী মানুষ খুব কমই আছেন। এক মনসুরের দোকানের কাবাব পরোটা ছাড়া অন্য কিছুতেই
তুলসি বাবু অবাক হন না। কলঘর থেকে বেরিয়ে বিপিন বাবু দেখলেন, শ্রীনাথ চা রেখে গেল
। ঘরে ঢুকে নিজের ইজি চেয়ারে বসলেন বিপিন বাবু। টেবিলের ওপরে বইয়ের ওপরে রাখা আছে
চায়ের কাপ। হ্যাঁ, কাপ আজ আকারে কিছুটা বড়, ধপধপে সাদা। কাপ পালটে গেছে। পালটে
গেছে কাপের ভেতরে রাখা পানীয়। ভুরভুরে গন্ধ ওঠা কফির ধোঁয়া ওঠা কাপ, তাতে ক্রিম
দিয়ে আঁকা একখানা হৃদয়। আর পেয়ালার পাশে দু খানা বাহারি বিস্কুট। নাঃ এর একটা
বিহিত করতেই হচ্ছে। আবার শ্রীনাথের নামে হাঁক পড়ল।
- কফি কোথা থেকে এলো? বাড়িতে কফি ছিল নাকি?
- তুমিই তো নিয়ে এলে কফি। চা আনতে বললুম, আনলে কফি।
- সেকি? দত্ত টি থেকে একশ চা পাতা......
- এই তো তুমি এনে রাখলে এইখানে, এই যে, এই বইয়ের ওপর, আর আমি নে গেলুম কফির কৌটো।
- আর তুই কবে থেকে এমন বাহারি কফি করতে শিখলি?
- ও তো টিভিতে শেখালে গো... সেই যে একটা লোক, কোথায় জানি থাকে, রান্না করে...... বাংলায় করে দেছেলে চ্যালেন......
শ্রীনাথ
বলছে বটে, কিন্তু টিভি তে কতকিছুই দেখায়, এ
ঘটনা কি কাকতালীয়? জোরালো সন্দেহ হচ্ছে অন্য কিছুর ওপর। বিপিন বাবু টেবিলের দিকে তাকালেন। সন্ধ্যের আবছা হয়ে আসা আলোয় টেবিলের
ওপর জ্বল জ্বল করছে চার্লস ওয়েকম্যানের হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক। ম্যাজিক। জাদু বিদ্যা। কয়েক হাজার
বছরের জাদুর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা রয়েছে ওই বইতে। কিন্তু সে বই নিজেই কি জাদুকর? এসব
ঘটনা ঘটছে কি করে? বইটা হাতে তুলে নিয়ে বিপিন বাবু ভালো করে দেখলেন। কোথাও এতটুকু
অস্বাভাবিকত্ব চোখে পড়ছেনা বাহ্যিক রূপে। কিন্তু এই বইয়ের অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া
অন্যকিছু সম্ভাবনাও মাথায় খেলছেনা। কিন্তু এটা শুধুই সম্ভাবনা। প্রমান চাই। প্রমান চাই। বিপিন বাবু ছটফট করে উঠলেন। চেয়ার থেকে উঠে পড়ে ঘরের ভেতর খুঁজতে লাগলেন কিছু একটা। চোখে পড়ল
ডেস্কের ওপর রাখা সকালে পাশের বাড়ির গানের অধ্যাপিকার ফোন নম্বর লেখা কাগজ। কাগজটা
তুলে নিয়ে একবার পড়লেন বিপিন বাবু। শুধু ফোন নম্বর লেখা আছে একটা। বিপিন বাবু এবার তাকালেন বিছানার পাশে ছোটো টেবিলের
ওপর, যেখানে রাখা আছে বইটা। কবজি ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখলেন। মাত্র সাড়ে ছটা। পুরোনো এইচ
এমটি কোম্পানির সাদা ডায়ালের ঘড়ি। ডায়াল হলদেটে হয়ে গেছে। পকেট থেকে মোবাইল ফোন
বের করলেন। পুরোনো হয়ে গেলেও এই মোবাইলই ব্যাবহার করে চলেছেন বিপিন বাবু। গত দশ
বছর চলছে যখন। হাল ফ্যাশনের ফোনের কোনো প্রয়োজন তাঁর নেই। মোবাইলে নম্বরটা সেভ
করলেন বিপিন বাবু।
*******
ভোর
বেলা গানের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল বিপিনবাবুর। না আজ নজরুল নন। খাঁটি রবি ঠাকুর। “তারে
আমি চোখে দেখিনি, শুধু বাঁশি শুনেছি”। বিপিন বাবু একটু গান শুনলেন। তার পর কিছু
একটা মনে পড়তেই ধড়মড় করে উঠে বসে মশারি তুলে বেরিয়ে এলেন বাইরে। বইয়ের ওপর ঝকঝক করছে একটা বিদেশী ঘড়ি। নামটা ঠিক ঠাওর করতে
পারলেন না প্রথম দেখায়। হাতে তুলে নিয়ে দেখলেন রোলেক্স। এমন ঘড়ি বিপিনবাবু জম্মে
হাতে গলাননি। কিন্তু বাকিটা? ঘড়ি নামিয়ে রেখে বইয়ের ভাঁজ খুলে বের করে আনলেন ছোট্ট
ভাঁজকরা কাগজটা। কাগজে ফোন নম্বর লেখা আছে। তার নিচে যোগ হয়েছে কয়েকটা কথা। “পড়শীর
সঙ্গে আলাপ করার জন্যে রেখে দেবেন নম্বরটা”। বিপিন বাবুর কাঁপা হাত থেকে কাগজটা
পড়ে গেল। ধড়মড় করে উঠে মেঝে থেকে কুড়িয়ে নিলেন কাগজটা। বইয়ের ওপর তৃতীয় এবং শেষ
প্রমান অপেক্ষা করছিল। বিপিন বাবু অ্যাাপেল কোম্পানির নতুন আই ফোনটি হাতে তুলে
দেখলেন। এটি চালাতে শিখতে হবে কারোর কাছে। কেননা এমন অত্যাধুনিক ফোনে কি করে কি
হয়, সে সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারনা নেই। ওদিকে গান থেমে গেছে। জানলা দিয়ে বাইরে উঁকি
মেরে দেখলেন বিপিন বাবু। তার পর ফিরে এসে বিছানার প্রান্তে বসে আর একবার কাগজটা
পড়লেন। এ বই যেন পরশপাথর। তবে পরশপাথর শুধু লোহা থেকে সোনা করে। এ বই শুধু বস্তুগত
রূপান্তরই ঘটায়না, ব্যবহারকারি এবং তার পারিপার্শ্বীককেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
*********
খুবই
সাজানো বৈঠকখানা শ্রীতমার। অন্ততঃ বিপিনবাবুর বৈঠকখানার তুলনায় তো বটেই। যদিও ঘরটি
অনেক ছোটো, কিন্তু চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে পরিশিলিত রুচির ছাপ। ছোটো গোল টেবিলের ওপর রাখা চায়ের সরঞ্জাম। একটা
ছোটো রেকাবিতে কিছু নিমকি। দুটো চেয়ারে মুখোমুখি বসে আছে বিপিন বাবু আর তাঁর নতুন
পড়শী শ্রীতমা। আজ শ্রীতমা একটা কালো টপ আর লং স্কার্টে এক্কেবারে অন্যরকম। তবে
লম্বাটে টিপ, কানে গলায় বাহারি কাঠ আর গালার তৈরি কি সব গয়না আর স্কার্টের আদিবাসী
প্রিন্টে তাকে অপরূপ লাগছে। এরকম নারীর সংস্পর্শের এর আগে আসেননি বিপিন বাবু। কালো
টপের গলার কাছ থেকে বুক পর্যন্ত খোলা জায়গাটা কি একটু বেশী ? শ্রীতমা চা ঢালার সময়
কি একটু বেশী নিচু লাগছিল?
- এসব আপনার নিজের আঁকা?
চায়ের কাপ হাতে তুলে নিয়ে পেছনের দেওয়ালে কয়েকটা বাঁধানো ছবি দেখতে দেখতে শ্রীতমা কে প্রশ্ন করলেন বিপিন বাবু।
- আমাকে স্বচ্ছন্দে তুমি বলতে পারেন কিন্তু।
- না, মানে প্রথমেই......।
- (অল্প হেসে ) আমাদের বাড়ি শান্তিনিকেতনে, আর ছোটোবেলা ওখানেই কেটেছে। বাবা ছবি আঁকতেন, আর মা গান। কলকাতা আসা আমার চাকরি সূত্রেই। ছোটোবেলায় দুটোই করতাম। তার পর গান নিয়েই থেকে গেলাম, ছবি আঁকাটা হবি থেকে গেল
- ও বাবা, এ জিনিস তো...... এও কি আপনার, মানে তোমার তৈরি?
বিপিন বাবু চায়ের সঙ্গে আনা নিমকিতে একটা কামড় বসিয়েছেন। দোকানের চেয়ে স্বাদ ও আকার একেবারেই আলাদা। আজ বিকেলে ফিরতি রাস্তায় দেখা হয়ে যায় শ্রীতমার সঙ্গে। শ্রীনাথ একখানি ভাল কাজের লোক জোগাড় করে দিয়েছে এরই মধ্যে। শ্রীতমা তাই ধরে এনেছে বিপিন বাবুকে চা খাওয়াতে।
- হ্যাঁ , মানে ওই টুকটাক করে রাখি, চায়ের সঙ্গে খাবার জন্যে। আগে অনেক দক্ষিনে থাকতাম, সময় পেতাম না, এখন এ পাড়ায় এসে কর্মক্ষেত্র কাছে হয়ে গিয়ে অনেকটা সময় পাবো।
- হ্যাঁ আমার ও আপিস কাছেই। এই হেঁটে মিনিট দশ
- কোন অফিস?
- না, মানে ইয়ে, আমার তো ব্যাবসা। ওই বই টই ছাপা...
- ও মা, আপনি প্রকাশক? এই দেখুন, আমার যে প্রকাশনার ব্যাপারে বড্ড সাহায্য দরকার। মানে আমাদের একটা পত্রিকা......
পত্রিকা ছাপার বহু ঝামেলা। একে সময় কম। তার ওপরে হাজার রকম পাতার ছাঁদ। আর টাকা পয়সা? বিপিন বাবু বেশ কয়েকবারের ভুক্তভুগী।আর তিনি ঐ পত্রিকার চক্করে পড়ছেন না।
- হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চই, কি সাহায্য বলো না, আমার তো কাজই ওই...
- মানে, আমরা কয়েকজন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সঙ্গীত সভা চালাই, তার একটা বার্ষিক স্মরনিকা বের করার কথা ভাবা হচ্ছিল।
- বেশ তো, বেশ তো, কেমন চাইছ, কি আকার, কত কপি ছাপা হবে, ডিজাইনার চাই কিনা, এসব নিয়ে আপনি একদিন চলে এসো অফিসে, সেখানে বসেই একদম দেখিয়ে দেওয়া যাবে। কিছু নমুনাও দেখাতে পারব।
- আপনি বাঁচালেন। আমি ভাবছিলাম কোথায় কোথায় ঘুরতে হবে।। কলকাতায় তো তেমন কাউকে চিনিনা.........
********
অনেক
কিছু বদলাতে হবে। হুলিয়া বদলে ফেলতে হবে। বিপিন বাবুর রক্ত গরম হয়ে উঠেছে। পূর্বপুরুষের
তেজ আবার ফিরে আসছে তাঁর মধ্যে এটা বিপিনবাবু স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। অনেক অনেক দিন
পর, নিজেকে বেশ টগবগে লাগছে। ঝিমিয়ে পড়া জীবনের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে যেন নতুন
করে বাঁচার একটা উদ্দ্যেশ্য দেখা যাচ্ছে। শ্রীতমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা পান খেতে
ইচ্ছে হলো বড়। বিপিন বাবু সচরাচর এসব ইচ্ছেকে তেমন পাত্তা দেন না। কিন্তু নিজেই
অবাক হলেন, যখন এই সামান্য ইচ্ছের জেরে গলির মুখের দোকানে গিয়ে একখানা জর্দা দেওয়া
পান হুকুম করে বসলেন। পানওয়ালা বিপিনবাবুকে চারমিনার বেচে। আজ হঠাৎ পান চাইতে দেখে
অবাক হলো। জর্দা অল্পই দিয়েছিল, কিন্তু বিপিন বাবু ভাল করে দিতে বললেন। পানের খিলি
মুখে পুরতেই যেন এক লহমায় সন্ধ্যের উত্তর কলকাতার এই গলিতে একটা মাইফেলি মেজাজ
নেমে এলো। বাড়ি ফেরার বদলে সামনে আরো দু পা এগিয়ে মনিহারি দোকানে ঢুকলেন বিপিন
বাবু। সাধারনত তিনি এসব দোকানে ঢোকেন না। তাই পাড়ার লোক হলেও, দোকানি একটু অবাকই
হলো, আর খাতির করে “আসুন আসুন , কি চাই বলুন...”। বিপিন বাবু অনেক দেখে শুনে একখানা
সুগন্ধী কিনলেন। নিজের জন্যেই। মাঝে মাঝে মাখলে দিব্যি লাগবে। দোকান থেকে বেরোতেই
দেখলেন এক ছোকরা দোকানের সামনের সিঁড়িতে বসে বসে লটারির টিকিট বিক্রি করছে। তাকে
পাশ কাটিয়ে রাস্তায় নেমে কয়েক পা হাঁটতেই মাথায় কেমন যেন একটা বিদ্যুতের শিখা খেলে
গেল। এ ও কি হতে পারে? উত্তেজনায় মিনিট খানেক চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন বিপিন বাবু। তার
পর ধিরে ধিরে পেছন ফিরে দেখলেন। ছোকরা হেঁকে চলেছে “বঙ্গলক্ষী সুপার বাম্পার,
এক কোটি জেতার সুযোগ......”। বিপিন বাবু
কোনো উত্তেজনা দেখালেন না। এদিক ওদিক থেকে
কয়েকটা টিকিট দেখার পরে ছোকরাকে একটা ওই দিওয়ালি বাম্পারের টিকিট দিতে বললেন।।
******
রামের
নেশা এক রকম, স্কচের নেশা অন্য। রাম রক্তে মিশে মানুষকে ঝিমিয়ে দেয়। স্কচ রক্তের
তেজ বাড়িয়ে ভেতর থেকে আরো তাজা করে তোলে। অ্যাডভেঞ্চারের নেশা জাগায়। পুরোনো
রক্তের জোর ফিরে আসছে কি এ বাড়িতে? জনি ওয়াকারের গ্লাস হাতে নিয়ে এটাই ভাবছিলেন
বিপিন বাবু। ঘর অন্ধকার। পাশে টেবিলের ওপর
খালি রিডিং লাইট জ্বলছে। বিপিন বাবু আধশোয়া হয়ে আছেন বিছানায়। কোলের ওপর খোলা
রয়েছে “হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক”। পাশের ঘরে একটা ঘড়িতে গুরুগম্ভীর ভাবে ১১ টা বাজার
শব্দ শোনা গেল। বিপিন বাবু একটু উঠে বসলেন। বইটা নামিয়ে রাখলেন সামনে। টেবিলের ওপর
থেকে গ্লাসের তরলটুকু এক ঢোকে চালান করলেন গলায়। তার পর পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে
বের করে আনলেন সন্ধ্যেবেলায় কেনা লটারিরি টিকিট। একটু তাকিয়ে রইলেন টিকিটের দিকে।
তার পরে টিকিটটা বইয়ের মধ্যে রেখে বইটা রাখলেন টেবিলের ওপর। একটু পর রিডিং লাইট
নিভে গেল।
******
ভোরের
আলো ঘরে ঢুকছে জানলা দিয়ে। সঙ্গে গানের আওয়াজ। আজও রবি ঠাকুর, তবে একদম অন্য গান –
“কেটেছে একলা বিরহের বেলা...”। বিপিন বাবু চোখ খুললেন। আজও ধড়মড় করে উঠে বসলেন বিপিন বাবু। গানের দিকে
মন গেলনা। মশারী খুলে বেরিয়ে প্রথমেই চোখ গেল টেবিলের ওপর।
*******
টেবিলের
ওপর পড়ে আছে একটা লটারির টিকিট। ওপরে বড় বড় করে লেখা “বঙ্গলক্ষী সুপার বাম্পার
ফক্কা”। আর কিছু নেই। বইটাই গায়েব হয়ে গেছে এবারে।
সত্যজিৎ রায় - কয়েক ছত্র পড়ার পর আপনা থেকেই এই কথাটাই মাথায় চলে এল! শেষ পর্যন্ত পড়ার পরও এই নামটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!
উত্তরমুছুনলেখাটা অসাধারণ - চোখের সামনে পরিস্কার এক এক করে দৃশ্যপট বদলে বদলে একটা সিনেমা দেখলাম বলে মনে হল!
ম্যাজিক, যথার্থই ম্যাজিক!!
সেলাম!
বইয়ের নাম, চরিত্রের নাম, আরো অনেক কিছুই মানিক বাবুর থেকেই নেওয়া ইচ্ছে করেই।
মুছুনki osadharon lekha! chotobelay Satyajit Ray 'aaro baaro' porechilam. lekhay jeno tar e proticchobi pelam. tomake Kurnish!!
উত্তরমুছুনযা করার উনিই তো করে গেছেন। আমরা শুধু অনুসরন করি। তাই জ্ন্যেই সব কটা বই এর নাম, বিপিন চৌধুরির নাম, শ্রীনাথ বা চারমিনার, সবই ওনার কোনো না কোনো লেখা থেকে নেওয়া।
মুছুনতত্ত্ব কথায় যাবো না শুধু এটুকু বলবো যে বিগত মাসখানেক ধরে চলা মানসিক অস্থিরতার মাঝে এই লেখা আমার মনের চাপ কিছুটা হলেও প্রশমিত করল ।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটা আমার কাছে অনেক বড় কিছু পাওয়া।
মুছুনDarun montobyo
মুছুনযাদুবিদ্যা ও তৎসংক্রান্ত ইতিহাসের প্রতি আমার আগ্রহ বহুকালের। পরমশ্রদ্ধেয় অজিতকৃষ্ণ বসু মহাশয়ের যাদুকাহিনী বইটি বলতে গেলে ঠোঁটস্থ করে ফেলেছিলুম এক কালে। অবশ্য সে কথা এখানে অপ্রাসংগিক।
উত্তরমুছুনবড় আরাম পেলুম লেখাটি পড়ে। স্রষ্টাকে অভিনন্দন, টুপি বিয়োজন, ইত্যাদি। আপনার সাথে পরিচিত হবার বাসনা ক্রমেই বেড়ে উঠছে।
পরিচিত হবার সৌভাগ্য তো আমার। হোক হোক, যত তাড়াতাড়ি হয়। আমার সাকিন নদীর হুই পাড়ে। আর আমার কারখানায় ভোঁ পড়ে নবদীগন্তে। মাঝামাঝি সব জায়গায় আমার বিচরন। তা বাদে আমার নম্বর খানাও দিয়ে দিচ্ছি - ৯৮৩০৫৫৪১২২
মুছুনআমার বসবাস হলদিয়া তবে তা নেহাতই পেটের দায়ে। পাঁচ নং এলাকাটি মদীয় বাস্তুভিটার থেকে তেমন দূর নয়। ফোন্নং টুকিয়া লইলাম। অচিরাত টুকি বলিব।
মুছুনবেশ বেশ
মুছুনআমাদের মত সত্যজিৎ পড়ে বড় হয়ে ওঠা পাঠকের পুরো চমকে চুয়াত্তর করে দিলে তো! একটা গোটা ম্যাজিক ঘটে গেল যেন স্ক্রীনের ওপর! :)
উত্তরমুছুনমানিক বাবুর ছাপ পাকাপাকি করতে, বইয়ের নাম, চরিত্রের নাম, সবই ওনার কোনো না কোনো লেখা থেকে ঝেড়েছি। :-) আসাকরি বাবু দা নিজগুনে মাফ করে দেবেন।
মুছুনPorte porte Satyajit Ray er choto golpo porchi bole mone holo.. Darun darun darun .. Ekhono bhabchi satyi ki eta unar lekha noy onnyokaror?? ������
উত্তরমুছুনএ গল্পের সব চরিত্র ও বইয়ের নাম সত্যজিত রায়ের কোন না কোন লেখা থেকে নেওয়া
মুছুনএই মাত্র পড়ে উঠলাম...একেবারে গোগ্রাসে...খুব খুউব ভালো হয়েছে...সত্যিই দৃশ্যপটগুলো চোখের সামনে সিনেমার মতই ভেসে উঠল...সবচেয়ে যেটা ভালো লাগল..একই সাথে সিনেমা এবং মানিকবাবুর ছোটো গল্প দুটোরই খুব ভালো মিশেল হয়েছে...তোমার লেখা নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই...যেটা বলার....সেটা হল- এরকম ভিন্ন স্বাদের আরও অনেক গল্প নিয়ে একটা ছোটো গল্প সমগ্র লেখো
উত্তরমুছুনএরকম উৎসাহ পেলে ভেবে দেখতেই হচ্ছে
মুছুনDarun likhechen....chaliye jaan sir....oshadharon....
উত্তরমুছুনথ্যাংকু থ্যাংকু
মুছুনআবার একটি অসাধারণ লেখা।।।। বৃষ্টির দিনে এরম সুন্দর লেখা ।। র বা কি চাই।।।
উত্তরমুছুনবেশ বেশ
মুছুনঅসাধারণ। খুব খুব ভালো লাগলো ❤️
উত্তরমুছুনএরকম উৎসাহ পেলে ভেবে দেখতেই হচ্ছে
মুছুনঅসাধারণ লাগল।
উত্তরমুছুনথ্যাংকু থ্যাংকু
মুছুন