বাংলোটা
দিব্যি পছন্দ হলো। বহু পুরোনো আমলের বাড়ি হলেও যত্নআত্তির অভাব হয়নি বলেই, বাড়িটায়
জরার চিহ্ণ নেই কোথাও। অথচ প্রাক স্বাধীনতা আমলের সাহেবিয়ানা লেগে আছে বাড়িটার সারা
শরীরে। লাল ইঁটের রঙের কাঠামো, গোল গোল খিলেন। সাদা রঙের বর্ডার দেওয়া। সম্প্রতি রঙ
হয়েছে। বাংলোর সামনে গাড়ি বারান্দার নিচে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে নামতেই নাকে ভেসে এলো একরাশ
সুগন্ধ। কোথাও কাছেপিঠে কোথাও জুঁইফুল ফুটেছে, আর এই নিঝুম সন্ধ্যের মুখে তার গন্ধ
ভুরভুর করছে। সেই কাকভোরে লখণৌ থেকে বেরোবার পর কেটে গেছে ঘন্টা বারো, আর এই মুহুর্তে
বিহারের লখিসরাইয়ের কাছে, মনকেমন করা সন্ধ্যে হুড়মুড় করে ছুটে চলা দিনের গতি রোধ করছে
আস্তে আস্তে।
সৈয়দ
আমিনুল হাসান জাঁদরেল আই এ এস অফিসার। রাশভারি, মধ্যবয়স্ক, কাঁচাপাকা চুলে ভরা মাথা,
চোখে মোটা ফ্রেমের কালো চশমা। চাকরি জীবনের প্রায় বছর কুড়ি পেরিয়ে এসেছেন। এইটুকু পরিচয়
দিলে হাসান সাহেবের একটা পটচিত্র পাঠকের মনে পরিস্কার হয়ে যায়। কিন্তু সৈয়দ আমিনুল হাসান ঠিক আর পাঁচজন মানুষের মত ছকে
বাঁধা নন। কখনো চাননি ছকে বেঁধে রাখতে নিজেকে। প্রথমতঃ নিতান্ত অফিসের ডিউটিতে না থাকলে একেবারেই সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঘোরেন না। নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে সরকারি কোন স্টিকার লাগাতে দেননি, লাল নীল আলো তো দুরস্থান। হাসান সাহেব ভ্রমনপিপাসু, অসম্ভব বইয়ের
নেশা, এখনো নিয়মিত খেলাধুলো করে থাকেন, এবং হাসান সাহেব লেখক। এরকম পদমর্যাদার একজন
মানুষ, স্বাভাবিক ভাবেই যা লিখবেন, তা বেশ ভারি গোছের ইংরেজি বই হয়ে বেরোবার কথা। এবং
ইংরেজিতে লিখলে লেখার ব্যবসায়িক দিকটাও রক্ষিত হয়। কিন্তু ছকের বাইরে গিয়ে সৈয়দ আমিনুল
হাসান লেখেন মাতৃভাষা বাংলায়। মালদার মানুষ তিনি। মানে মাল-দার নন মালদা জেলার। নিজেই
এটা নিয়ে অসংখ্যবার রসিকতা করেছেন। বাবা ছিলেন
স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টার। রাশভারি বাপের সঙ্গে একটা দুরত্ব ছিলোই। এলাকায় পুরোনো
বাসিন্দা ও বেশ উচ্চকোটির অতিতের জন্যে তাঁদের এলাকায় একটা আলাদা সন্মানও ছিলো। আমিনুল
সাহেব মা কে হারিয়েছেন সাত বছর বয়সে। মা চলে যান আকস্মিক ভাবে, পরে ধরা পড়ে হৃদযন্ত্রের
একটা ভালভ জন্মাবধি আংশিক অকেজো ছিলো। মাতৃহীন ছেলেকে বছর দুয়েক নিজের কাছে রেখে বিধুভূষন
উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বুঝতে পারেন, ছেলেকে একলা এভাবে মানুষ করা খুবই
কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর তাই সৈয়দ আমিনুল হাসানের স্থান হয় রামকৃষ্ণমিশনের বোর্ডিং এ।
কলেজ ছিলো কলকাতায়, ইতিহাস নিয়ে স্নাতক, তার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকোত্তর।
ভেবেছিলেন শিক্ষকতা করবেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে এবং কিছুটা ঝোঁকের মাথায় সিভিল সার্ভিসের
পরীক্ষায় বসে উৎরে গেলেন। জীবন অন্য খাতে বয়ে
গেল।
বাংলোর
সামনের রাস্তাটা মোরাম বিছোনো। সেখানে গাড়ির আওয়াজ শুনেই ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে একটি
লোক। স্থানীয় লোকই হবে। তবে সরকারী কর্মচারীদের মতোই বড় অফিসারের সামনে কর্মতৎপরতা
কিঞ্চিত বৃদ্ধি পেয়েছে। লখণৌ থেকে একলাই গাড়ি চালিয়ে মালদা আসার কথা শুনে যোশী এই বাংলোটার
সন্ধ্যান দিয়েছিলো। সরকারি সার্কিট হাউস, তবে খুব বেশী কোনো অফিসারের যাতায়াত নেই এখানে।
যোশী তাঁরই ব্যাচমেট। এখন বেগুসরাইতে পোস্টেড। সে জায়গা এখান থেকে দূরে নয়। ফেরার পথে
একবার ঘুরে যেতে হবে ওর ওখানে। রাতটা এখানে কাটিয়ে কাল ভোর ভোর বেরোতে পারলে বিকেল
বিকেল মালদা পৌঁছনো যাবে। এ জায়গাটা হাইওয়ের ওপরে নয়। হাসান সাহেব পুরো রাস্তা হাইওয়ে
ধরে পাড়ি দিতে চাননি।তাই মুজঃফরপুরে হাইওয়ে ছেড়ে বারাউনির রাস্তা ধরে লখিসরাইয়ের কাছে
চলে এসেছেন। এখন বড়ই ক্লান্ত লাগছে। লম্বা
সময় ধরে একলা গাড়ি চালানোতে ক্লান্তি চেপে বসে। যদিও গাড়িতে মাঝে মাঝে গান চলেছে। হাসান
সাহেব উদাত্ত গলায় গলাও মিলিয়েছেন। এটা নভেম্বরের
শেষ বলে গরম একেবারেই নেই। তাই গাড়িতে কাচ তুলে এসি চালাবার প্রশ্নই ওঠেনা। দুপুরের
দিকে রাস্তার দুদিকে দিগন্ত জোড়া চাষের খেত দেখে গলা ছেড়ে গাইছিলেন “হেঁই সামালো ধান
হো, কাস্তেটা দাও শান হো, জান কবুল আর মান কবুল……” এমন সময় পাশের লেনের গাড়ি থেকে একটা
জোরে হাত তালির শব্দ ভেসে এলো। দেখলেন কয়েকটি অল্প বয়স্ক ছেলে মেয়ে একটা টাটা সুমোতে
করে কোথাও চলেছে। হাত উঁচু করে থামস-আপ দেখালেন
ওদের দিকে। গাড়িটা ডান দিকের লেনে থাকায় এগিয়ে গেল। দেখলেন গাড়ির নম্বরপ্লেট পশ্চিম
বাংলার।
বাংলোর
কেয়ারটেকার লোকটি বেশ চরিচাপুটি। থাকার ঘরের ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছে। বুঝলেন যোশী
বেশ ভালোই বন্দোবস্ত করেছে। তাঁর সঙ্গে মালপত্র তেমন কিছু নেই। থাকার মধ্যে একখানা
ছোট ট্রলি স্যুটকেস। তাতে নিজের জামাকাপড় রয়েছে কয়েকপ্রস্থ, আর রয়েছে গিন্নির ফরমায়েসি
কিছু বস্তু। আর রয়েছে এক কৌটো চা। এইটি হাসান সাহেবের বড় দুর্বলতা। চা টি বড় শখের।
যদিও এই নিয়ে ছাত্রজীবনের বন্ধুবান্ধবের ভেতরে অনেক রসিকতা চালু আছে। যে হাসান চায়ের
দোকানে ডবল হাফ খেয়ে এসেছে চিরকাল, সে হঠাৎ সব ছেড়ে দামী আর্ল গ্রে কেন খেতে শুরু করল।
এর পেছনে অবিশ্যি একজনের প্রভাব আছে। আর্ল গ্রে তিনি প্রথম পান উপহার হিসেবে। খেয়েই
ভালো লেগে গিয়েছিলো। কেয়ারটেকার লোকটির নাম রামাশীষ যাদব। বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করাতে
বলল সে লখিসরাইয়ের স্থানীয় লোক। এ বাংলোয় সে ছাড়াও আছে এক চৌকিদার। খাবারদাবারের ব্যাবস্থাও
সে করে। সাহেব আসবেন খবরটা এত দেরিতে এলো, যে সে পুরো ব্যাবস্থা করে উঠতে পারেনি। তবে
চাওল রোটি ভাজি দাল অওর চিকেনের ব্যবস্থা সে করে রেখেছে। আর লখিসরাইকা ওয়ার্ল্ড ফেমাস
কালাকন্দ ভি হ্যায়। আজকাল হাসান সাহেব রাতে খুব কমই খান। বেশী খেয়ে মাঝে মাঝে হজমের
সমস্যা হচ্ছে রাতে। কিন্তু খাওয়া পরে হবে, আপাতত চাই এক কাপ চা। দুধ চিনি ছাড়া আর্ল
গ্রে লিকার। রামাশীষকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন, কতটা চা পাতা আর কতক্ষন ভিজিয়ে লিকার
হবে।
ব্রিটিশ
আমলের বাংলোগুলোর একটা বড় সুবিধে, ঘরের সামনে একটা চওড়া বারান্দা থাকে, আর সেখানে দিব্যি
চেয়ার টেবিল পেতে বসা যায়। এবং বেশ আরামের
বহু পুরোনো বেতের গোল গোল চেয়ার আর একটা টেবিলও রাখা আছে। আরাম করে বসে একটু সময় চোখ বন্ধ করে রইলেন হাসান
সাহেব। পকেটে ফোনটা মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে, কিন্তু তাঁর এখন আর কোন বার্তা দেখতে ইচ্ছে
করছেনা। এ জায়গাটা বসতি এলাকার থেকে বেশ কিছুটা বাইরে বলে চারিদিক একেবারেই নিস্তব্ধ,
কিন্তু চোখ বুঁজে থাকতে থাকতেই তাঁর কেমন জানি একটা হালকা অস্বস্তি হলো। মনে হলো তিনি
একা নন। চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাসান সাহেব আবিস্কার করলেন বারান্দার সামনে মাধবিলতার
ঝাড়ের পেছন থেকে একটা কৌতুহলি মুখ তাঁকে লক্ষ্য করছে। একটু হাসি হাসি মুখে হাসান সাহেব
হাতছানি দিয়ে ডাকলেন। ভদ্রলোকটির ভয়ডর কম বলেই মনে হলো। এক লাফে বারান্দায় উঠে এসে
একটু দূর থেকে জুলজুল করে হাসান সাহেবকে দেখতে লাগলো বছর সাতেকের একটা ভীষণ মায়া মায়া
চোখের ছোট্ট ছেলে। পরনে মলিন টি শার্ট, একটু বড়, আর হাফ প্যান্ট। পা খালি। এখানে হিন্দিই
ভাষা, যদিও দেহাতি টানে কথা বুঝতে পারলেও একেবারেই বলতে পারেন না হাসান সাহেব। তাই
একটু আস্তে আস্তে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতেই জিজ্ঞেস করলেন
-
নাম
কি তোমার?
-
বুধন
-
কোথায়
থাকো?
-
ওই
খানে
বাংলোর
পেছন দিকে একটা আউটহাউস গোছের চোখে পড়েছিলো হাসান সাহেবের। কেয়ারটেকারের ছেলে হবে হয়ত।
-
তোমার
বাবার নাম কি? রামাশিষ যাদব?
-
সুখন
পাশোয়ান
-
বাবা
কোথায়?
-
বাবা
গেটে ডিউটি দিচ্ছে, মা রসুই পাকাচ্ছে
ও,
ইনি তাহলে চৌকিদারের ছেলে। আর অতিথির খাওয়া দাওয়ার দায়িত্বর এনাদেরই।
-
তুমি
ইশকুলে পড়ো?
-
ক্লাশ
ওয়ান
-
কোন
স্কুল?
-
ওই
চৌমাথায় ঘুরে যেতে হয় ইশকুল, নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়
-
কি
কি পড়ো?
-
ওহ
গাড়ি আপকি? আপহি চালাতে হো? ইয়া আপ ড্রাইভার হো?
অনেক
দিন পর হাসান সাহেব প্রান খুলে হা হা করে অনেক্ষন হাসলেন। এদিকে বুধন ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে
আছে, স্পষ্টতই কিছুটা বিরক্ত।
-
হাসছ
কেন?
-
মনে
করো আমি ড্রাইভার
-
গাড়িটা
কার?
-
আমার
সাহেবের
-
তুমি
সাহেব না? মা যে বলল সাহেবের জন্যে রান্না হচ্ছে?
-
সাহেব
আসেনি। আমিই এসেছি শুধু
-
কতদিন
থাকবে?
-
কালই
চলে যাবো বেটা, কাল সকালেই
-
তুমি
কোথায় থাকো?
-
আমি?
আমি থাকি লখণৌ, তবে আমার আসল বাড়ি বাংলা
-
লখণৌ?
খুব বড় শহর? পাটনার মত?
-
পাটনার
মত
-
অনেক
লোক সেখানে?
-
অনেক
লোক। খুব ভিড়। বড় বড় প্রাসাদ আছে অনেক, নবাবদের
-
নবাব?
তারা থাকে সেখানে?
-
না
না, তারা আর নেই, প্রাসাদ গুলো লোকে দেখতে আসে, আর লখণৌতে অনেক কিছু আছে দেখার
-
কি
কি আছে?
-
গোমতি
নদী আছে, ছোটা আর বড়া ইমামবাড়া আছে, রুমি দরওয়াজা আছে, রেসিডেন্সি আছে, চক-মিনার-বাগ
বাগিচা কত কি আছে। আর আছে নানান রকম খাবার দাবারের দোকান
-
কি
খাবার? মিঠাই? চাট? সমোসা, জালেবি?
-
বিরিয়ানি,
কাবাব, মিঠাই সব ই
-
বিরিয়ানি
কি?
-
ওই
ভাতের ভেতর বেশ গন্ধ টন্ধ থাকে আর…
-
পোলাওয়ের
মত?
আপাত
সাধারন কথা, কিন্তু হাসান সাহেব চমকে উঠলেন। যাবতীয় যে কোন ভাত জাতীয় পদ কে পোলাওয়ের
সঙ্গে তুলনা করার অভ্যেস তাঁরও আছে। আবার সেই স্মৃতি ফিরে এলো। এতকাল পর আজ যেন বড়
বেশী করে মনে পড়ছে এসব কথা। হয়ত পরিবেশ কিছুটা দায়ি সে সজুন্যে। এতটাই অন্যমনস্ক হয়ে
পড়লেন হাসান হাসেব, যে খেয়াল করলেন না, ইতিমধ্যে রামাশিষ যাদব একটা ট্রে তে করে চা
নিয়ে এসেছে, সঙ্গে একটা রেকাবিতে কিঞ্চিত পকোড়া গোছের বস্তু। আর এসেই বুধনকে দিয়েছে
এক ধমক। বুধনও সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বারান্দা থেকে নেমে অন্ধকারে কোথায় মিলিয়ে গেল।
-
কুছু
মনে করবেন না স্যার, ওটা চৌকিদারের বেটা বুধন, এদিকে চলে এসেছিলো, আর আসবে না …
হাসান
সাহেব ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন রামাশিষের দিকে, বাস্তবে ফিরতে কয়েক সেকেন্ড সময়
লাগল তাঁর। তার পর সম্বিত ফিরে পেয়েই তাড়াতাড়ি বললেন
-
আরে
না না, ও বিরক্ত করেনি। ডাকো বুধন কে , …
ছোটোবেলায়
সৈয়দ আমিনুল হাসান দেখেছেন, বাবার শিক্ষকতা আর পুরোনো উচ্চবংশের গরিমায়, এলাকায় তাঁদের
একটু আলাদা চোখে দেখা হতো। সন্মানের, সম্ভ্রমের। রবীন্দ্র জয়ন্তী হোক, বা স্বাধীনতা
দিবস কিম্বা অন্য কোন অনুষ্ঠান হাসান সাহেবের বাবাকে সেখানে উপস্থিত থাকতেই হতো, আর
বক্তব্যও রাখতে হতো। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে মানুষেরও কোমরের জোর কমতেই থাকছিলো। পরিবার
একান্নবর্তী না হলেও কিছু আশ্রিত, কিছু লতায় পাতায় আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা ও লম্বা সময়
তাঁদের বাড়িতে থেকে যাওয়া চলতেই থাকতো। কেননা মালদা শহরে এরকম থাকার জায়গা পাওয়া মুখের
কথা নয়। হাসান সাহেবের মা, বরাবর চুপচাপ মানুষ। কখনো এই নিয়ে কিছু বলে থাকলেও সে স্মৃতি
হাসান সাহেবের নেই। তবে যতটুকু মনে পড়ে, মা ছিলেন বড়ই হাসিমুখের মানুষ। চারিদিকের যত
ঝড়ঝাপটাই আসুক, মায়ের মুখের হাসি কখনো মিলিয়ে যায়নি। নিত্য টানাটানির সংসারে মোটা ভাত
কাপড়ের অভাব তেমন হয়নি ঠিকই, কিন্তু কোথাও সামান্যতম বিলাসিতার জায়গা ছিলোনা। বাবা
শুধু শিক্ষকই ছিলেন না, এলাকার রাজনৈতিক মানচিত্রে তাঁর উজ্জ্বল একখানা জায়গাও ছিলো।
পরবর্তিকালের বহু ডাকসাইটে নেতা একসময় তাঁর ছাত্র ছিলেন, এবং তাঁদের রাজনৈতিক শিক্ষাও
স্যারের হাতেই। আর এই রাজনৈতিক আদর্শের কারনেই অকারন বিলাসিতা সে বাড়িতে স্থান পায়নি।
আবার অন্যদিকে, এই আদর্শের কারনেই হাসান সাহেব বাড়িতে দেখেছেন খোলামেলা পরিবেশ। মা
গান করতেন। রীতিমত তালিম পাওয়া গাইয়ে। হারমোনিয়াম নিয়ে রোজকার অভ্যেস চলত। এই নিয়ে
পরিবারের কিছু রক্ষণশীল শাখায় ঠারেঠোরে কিছু কথাও শুনেছেন হাসান সাহেব বড় হয়ে, কিন্তু
গা করেননি। ছেলেকে জুড়েই মায়ের জগত, দিন রাত সব কিছু কেটে যেত। মায়ের কাছেই কবিতা আবৃত্তি
করতে শেখা ছোটোবেলায়। আর মায়ের হাতের রান্না, সব টুকু মনে নেই, কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে,
একটি বিশেষ পদ, যা মায়ের কাছে বার বার খেতে চেয়ে বায়না জুড়তেন। তাঁর প্রিয় পদ, মির্জাপুরি
পোলাও।
উঠোন
পেরিয়ে ওপাশে রান্নাঘর। তার পাশে বড় আমগাছ। আর সেই রান্নাঘরে মা রাঁধতো মির্জাপুরি
পোলাও। কাঠের বারকোশে অন্ততঃ বিশ রকমের মশলা সাজিয়ে রাখতো। সেগুলোর নাম বলতো প্রতিবার।
যদিও সে সব প্রায় সবটাই স্মৃতি থেকে উধাও হয়ে গেছে হাসান সাহেবের। সে স্বাদ মনের ভেতর
কোথায় লেগে আছে। সৈয়দ আমিনুল হাসানের লেখার বিষয় খাওয়া ও বিভিন্ন অঞ্চলের রান্না। ভারতবর্ষের
হারিয়ে যাওয়া বা স্বল্প পরিচিত রান্নার ওপরে তাঁকে একজন অথরিটি ধরা হয়। বেশ কয়েকটি
টিভি চ্যানেলে তাঁকে নিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে।
গোন্ড এলাকার কিকাড় রোটি, কিম্বা রামপুরের আদ্রক কি হালওয়ার পাকপ্রনালী তিনিই পাঠকের
সামনে পেশ করেছেন তাঁর শক্তিশালী লেখনীর মাধ্যমে। একই পদের এলাকা ভিত্তিক পাকপ্রনালীর
তফাত, কিম্বা একই পদের অঞ্চলভেদে আলাদা আলাদা নাম, এসব নিয়ে তাঁর কাজ বহু বছরের। চাকরির
খাতিরে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে প্রায় গোটা ভারতবর্ষ। আর সেই কারনেই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে
ঘুরে তাদের রান্নার ঐতিহ্য সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছেন হাসান সাহেব। কিন্তু
এত কিছুর পরেও যে একটি রান্নার সন্ধানে তিনি প্রথম এই খোঁজ শুরু করেছিলেন, সেইটি আজ
পর্যন্ত তাঁর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। সেই পদ হলো মির্জাপুরি পোলাও। হাসান সাহেব
খুব কম হলে বার তিরিশেক মির্জাপুর গেছেন শুধুমাত্র এই পোলাওয়ের খোঁজে। প্রথমতঃ মির্জাপুরি
পোলাও বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব তিনি পাননি। পোলাও পেয়েছে, সে পোলাও অতি উমদা তাতেও সন্দেহ
নেই, কিন্তু মায়ের রান্না মির্জাপুরি পোলাওয়ের ধারেকাছে সে যায় না। তার পরে গোটা উত্তর
প্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা, বিহার খুঁজেছেন। খুঁজেছেন মধ্যপ্রদেশেও। খুঁজেছেন মালদায়
আর মুর্শীদাবাদে। মনে হয়েছে হয়ত এ মির্জাপুর মালদার বা মুর্শীদাবাদের কোন অখ্যাত গাঁ।
মায়ের বাপের বাড়ি ছিলো মুর্শীদাবাদ। সে বাড়ির কারোর সঙ্গেই তেমন যোগাযোগ নেই। হাসন
সাহেবের স্ত্রী সেন্ট জেভিয়ার্সে তাঁরই সহপাঠিনি মনীষা আফসানা। সে খাশ কলকাতার মেয়ে।
তারও জানা নেই এমন তরো খাবারের কথা। স্বাদ গন্ধ কিছুটা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন বলে বলে,
কিন্তু পারেন নি। নিজেও বহুবার চেষ্টা করেছেন রান্নার। ভাবতে চেষ্টা করেছেন সেই মায়ের
কাঠের বারকোশ যার ওপরে মা মশলাগুলো সাজিয়ে রাখতো, আর গল্প বলে বলে এক একটি মশলা দিতেন
রান্নায়। রূপ কথার গল্প, তাতে কখনো দারচিনিকুমার, কখনো লবঙ্গবিবি, কখনো ইলাইচি খান
বা কখনো মহারাজা কেশর সিং থাকতেন। সেই গল্পের লোভে হাসান সাহেব মায়ের পাশে বসে থাকতেন
রান্নাঘরে, আর শেষ হলেই মা বেড়ে দিতো গরম গরম মির্জাপুরি পোলাও। অনেক চেষ্টা করেছেন
মনে করতে, সে মশলাগুলো কেমন ছিলো। মায়ের মুখের রূপকথার গল্প মনে করতে চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু কিছুতেই ভালো করে মনে পড়েনি। নিজে চেষ্টা করার সময় তিনি কি দেননি সে রান্নায়?
জায়ফল, জয়িত্রী, গোলাপের পাপড়ি, খশখশ, পাত্থর কে ফুল, পিপলি, পিলি মির্চ, জাফরান, শা-জিরে,
শা-মরিচ, লবঙ্গ, ছোট এলাচ আরো হাজার একটা জানা অজানা মশলার মিশেল। কিন্তু মায়ের হাতের
মির্জাপুরি পোলাওয়ের স্বাদের ধারকাছ দিয়েও হাঁটেনি সে রান্না।
রামাশীষ
যাদবের হাঁক শুনে বুধন এসে দাঁড়িয়েছে। রামাশীষের ধারনা হয়েছিলো বুধন নির্ঘাত কিছু গন্ডগোল
করেছে, তাই ধমক মারতে যাচ্ছিল, কিন্তু হাসান সাহেব এগিয়ে এসে বুধনের হাত ধরে তাকে চেয়ারে
বসালেন দেখে আর কিছু বলল না। বুধন একটু অবাক হয়ে গেছে। হাসন সাহেবকে দেখে বোঝা যাচ্ছে
তিনি উত্তেজিত। কিন্তু তবুও তিনি একটু সময় দিলেন। বুঝলেন, সামনের ছোট্ট মানুষটিকে আগে
আস্বস্ত করা প্রয়োজন। তাই পকোড়ারে রেকাবি এগিয়ে দিলেন। বুধন সংকোচে হাত বাড়ালো না,
মাথা নাড়িয়ে না বলল, কিন্তু হাসান সাহেব তার ছোট্ট হাতটি টেনে একটা পকোড়া গুঁজে দিলেন।
বুধন রামাশীষের দিকে তাকালো। সেটা দেখে হাসান
সাহেব রামাশীষ কে বললেন সে যেতে পারে, দরকার হলে তাকে ডেকে পাঠাবেন।
-
তুমি
পকোড়া খেতে ভালোবাসো?
-
হ্যাঁ
-
এই
পকোড়া তোমার মা করেছেন?
-
হ্যাঁ
-
তুমি
খেয়েছ?
-
না
এগুলো তো আপনার জন্যে…
-
নাও,
এখন তোমার যতগুলো ইচ্ছে খাও
বুধন
মাথা নাড়ল, তবে আর হাত বাড়ালো না। হাসান সাহেব চায়ে চুমুক দিলেন। একটু সময় নিলেন, তার
পর সরাসরি প্রশ্নে চলে গেলেন।
-
পোলাও
খুব ভালোলাগে খেতে?
-
হ্যাঁ,
খুব
-
কোথায়
খেয়েছো?
-
মা
রান্না করে আমার জন্যে, কিন্তু খুব কম
-
ভালো
জিনিস রোজ রোজ খেতে নেই
-
মা
ও সেই কথাই বলে
-
কেমন
খেতে সে পোলাও?
-
খুব
ভালো
-
না,
মানে খুব ভালো মানে কেমন ভালো?
-
খুব
ভালো, আমি অনেকটা খেয়ে নিই
হাসান
সাহেব বুঝলেন বুধন কে দিয়ে রেসিপি জানার চেষ্টা বৃথা। সেটা স্বাভাবিক ও বটে। রেকাবিটা
আবার এগিয়ে দিতে বুধন মুখ খুললো
-
অনেক
কিছু দিয়ে করে পোলাও
-
অনেক
কিছু মানে?
-
অনেক
মশলা দিয়ে, বাদশারা যেমন খায়
হাসান
সাহেব একটা পকোড়ায় কামড় দিয়ে দেখলেন। খাশা পকোড়া। দস্তুরমত রেওয়াজি হাতের রান্না,
যেমন তেমন করে তাড়াহুড়োয় ভাজা নয়। বুধন উশখুশ করছিল, হাসান সাহেব তাকে ছেড়ে দিলেন।
বুধন চলে যাবার পর অনেক কথা মনে আসছিলো। এর মধ্যেই বাড়ি থেকে ফোন এলো। অধ্যাপিকা জানতে
চাইলেন তিনি এখন কি করছেন, কিছু খেয়েছেন কিনা, রাতে ঘুমোনোর আগে প্রেসারের ওষুধটা যেন
মনে করে খাওয়া হয়। আর একা একা বেশী সিগারেট……
নটা
নাগাদ রামাশীষ যাদব ডাকতে এলো, খাবার দেওয়া হয়েছে ডাইনিং রুমে। এতক্ষন হাসান সাহেব
না ঢুকেছেন নিজের ঘরে, না ধুয়েছেন হাতমুখ। ডাইনিং রুমের একপাশে বেসিন রয়েছে। সাবান
তোয়ালে সাজানো। হাত মুখ দুয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকে খুব ভালো লাগলো হাসান সাহেবের। বহু পুরোনো
আমলের বাড়ি, তাই কড়িবরগা ওলা ছাত অনেক উঁচুতে। সেখান থেকে পুরোনো আমলের পাখা ঝুলছে
লম্বা লোহার ডান্ডায়। দেওয়ালে বাহারের আলোর ব্র্যাকেট লাগানো। আর বেশ কিছু বড় বড় পুরোনো
অয়েল পেন্ট ঝুলছে। অর্থাৎ এ বাড়ি চিরকাল সার্কিট হাউস ছিলোনা। হয়ত কোন উচ্চপদস্থ বৃটিশ
কর্মচারি এখানে বাস করতেন। না হলে দেওয়ালে বাহারি নিস্বর্গদৃস্য শোভা পেতনা। ছবির কাছে
গিয়ে দেখলেন শিল্পীর নামও রয়েছে, কিন্তু দুস্পাঠ্য টানে , তাই পড়া গেল না। ডাইনিং টেবলখানিও
দেখার মত। কালো মেহগনী কাঠের বিরাট লম্বা টেবিল। চেয়ার গুলো বাহারি জাফ্রি কাটা। এক
দিকের প্রান্তে খাবার সাজান হয়েছে বেশ বাহারি চিনেমাটির পাত্রে। সাধারনত সরকারী সার্কিট
হাউসে এসবের দেখা পাওয়া যায় না। তার মানে এখানে বেশ উঁচুদরের লোকজনের নিয়মিত যাতায়াত
রয়েছে। তবে সন্ধ্যে থেকে যা মনে হচ্ছে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই আপাতত এই সার্কিট হাউসে।
রামাশীষকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল, যে আর কেউ নেই আপাতত। তবে সাধারনত শনি রবিতে এখানে
বড় অফিসার এমনকি মন্ত্রীদেরও আগমন ঘটে। এত সাজানো গোছানো টিপটপ সার্কিট হাউসের রহস্য
কিছুটা বোঝা গেল। খেতে বসে যা বুঝলেন এত খাবার তাঁর একার পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই
রামাশীষকে বললেন বুধন আর মা বাবাকে ডাকতে। এতক্ষনে মাথায় একটা ইচ্ছে খেলা করছে । রামাশীষ
হাঁক দিতেই বুধনের মা র বুধন মিনিট দুই পরে ঘরে ঢুকলো একটু সংকুচিত ভঙ্গিতে। বুধনের
মা সাধারন স্থানীয় মহিলাদের চেয়ে আলাদা কিছু নন। মাথায় কাপড় দিয়ে ঢেকে ছেলের কাঁধে
হাত রেখে দাঁড়ালেন। বুধনের বাপও এলো। সাধারন চেহারার যুবক, শক্ত সমর্থ চেহারা, মাথায়
ছোটো করে ছাঁটা চুল। গায়ে খাকি উর্দি। মুর্গির দিকে তাকিয়ে এবং এক চামচ মুখে দিয়েই
বুঝেছেন এ হলো বিহারের চম্পারণ জেলার বিখ্যাত পদ আহুনা, বা অনেকে একে হান্ডি মুর্ঘ
এমনকি চম্পারণ মুর্ঘ বা গোস্তও বলেন। দস্তুরমত পোষাকি ও পাকা হাতের রান্না। কারন এ
রান্নায় সমস্ত মশলা গোটা অবস্থায় একটা মাটির হাঁড়ির ভেতর পুরে, মাংসর সঙ্গে মেখে, হাঁড়ির
মুখটা মাটির সরা আর নরম মাটি দিয়ে একেবারে বন্ধ করে নরম কাঠের আঁচে ঘন্টা খানেক বসিয়ে
রাখতে হয়। হাসান সাহেব মুগ্ধ হলেন।
-
বহোত
বঢ়িয়া আহুনা বনা হযায় বহেন, আপ নে পাকায়ি?
-
জি
হ্যাঁ
-
এরকম
ভালো রান্না অনেক কাল খাইনি, বুধনের খাওয়া হয়ে গেছে?
-
জি
না, ও পরে খাবে।
-
শোনো,
বুধনকে বলো এখানে আমার সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করুক
-
জি
নেহি নেহি…ও পরে খাবে, আপনি খেয়ে নিন
বুধনও
মনে হয় লজ্জা পেয়েছে ও অস্বস্তিত মধ্যে পড়েছে। বুধনের বাপও এরকম অবস্থায় পড়েনি। একে
তো সে নিম্নতম ধাপের কর্মচারী, তার ওপরে তারা পাশওয়ান, অর্থাৎ জাতেও…। বিহারের এসব
অঞ্চলে জাতপাতের এখনো প্রবল উপস্থিতি। রামাশীষ স্পষ্টতই বিব্রত। এরকম ঘটনা সে দেখেনি।
সারা রাত খানাপিনা হুইস্কি রামের পর পাঁচশ হাজারের বখশিশ পেতে দেখেছে সুখন ও তার বৌকে।
কেননা তার রান্নার খ্যাতি আছে। কিন্তু তাই বলে আজ অবধি কোনো সাহেব এক সঙ্গে খেতে ডাকেনি।
এই সাহেবের হিন্দি শুনে মনে হয় সাহেব বাঙালি। বাঙালিদের মাঝে মাঝে এসব উদ্ভট খেয়াল
হয়, এটা সে জানে। হাসান সাহেব চামচ দিয়ে অল্প অল্প সব রকম পদ তুলে নিলেন প্লেটে। তার
পর বললেন, ঠিক আছে, এখানে বসে খেতে সংকোচ হচ্ছে যখন এগুলো নিয়ে গিয়ে ঘরে বসে খেও। তার
পর বুধনকে ডাকলেন কাছে। মাথায় হাত বুলিয়ে বুধন কে জিজ্ঞেস করলেন সে কি খেতে ভালোবাসে,
সেইটি যেন আর একবার বলে।
-
পোলাও
-
শোনো
বুধনের মা, কাল তুমি বুধনকে পোলাও রেঁধে খাওয়াবে, আর আমি সুখনকে পাঁচশ টাকা দিচ্ছি,
যা যা দরকার, সুখন সব নিয়ে আসবে। কাল আমি দুপুরে খেয়ে বেরোবো।
বুধনের
মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হেসে ফেলল।
-
সাহাব,
ওইটা তো বাচ্চাকে মন ভোলাতে বলি, ওহ পুলাও তো…
-
তুমি
যেমন করে করো, ঠিক সেই ভাবেই করবে। এতটুকু এদিক ওদিক করবে না
-
লেকিন
সাহাব, উসমে তো কুছ ভি…
-
যেমন
হয়, একদম সেরকম, আমি কিন্তু নিজেও রান্নাবান্না নিয়ে প্রচুর খোঁজ রাখি, কাজেই কিচ্ছুটি
বদল করবে না
-
যো
হুকুম সাহাব
এবার
কথা বলল সুখন।
-
যো
হুকুম সাহাব, কিন্তু শুধুই ওই চাওল.
-
আচ্ছা
তার সঙ্গে এক কাজ করো, মাটন সে আহুনা বানাও, হাম সব লোগ খায়েঙ্গে, রামাশীষ, আপ খাতে
হো তো মাটন?
-
জি
জি, জরুর …
-
বাস
আর কিছু দরকার নেই তাহলে, এই নাও মাটনের টাকা।
তার
পর একটু থেমে স্বগতোক্তির মত বলে চললেন - আমার আম্মার হাতের মির্জাপুরি পোলাও……বুধন
কে দেখে কি ভাবে কে জানে, বহু কাল আগের নিজের ছোটোবেলা ফিরে ফিরে আসছে। এই পরিবেশের
সঙ্গে হয়ত বাহ্যত হাসান সাহেবের ছেলেবেলার পরিবেশের তেমন মিল নেই, কিন্তু কোথাও একটা
সূত্র যেন ধরা যায়। সেই বাহুল্যহীন নিস্তরঙ্গ জীবনের ছোট ছোট খুশী, শান্তি আর সারল্য
কোথাও যেন বড় বেশি করে তাঁকে নিজের ছোটবেলায় নিয়ে গিয়ে ফেলছে। বড় ইচ্ছে করলো আরো একটু
সময় এখানে কাটিয়ে যেতে। আহুনা মটন একটা বাহানা বৈ নয়। কিন্তু বেশ শক্ত পোক্ত বাহানা।
বিশেষ করে তাঁর মত ভোজনরসিক মানুষের কাছে।
সারা
রাত নানান স্মৃতি ঘুরে বেড়ালো মাথায়। ভালো করে ঘুম হলো না। ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে
গেলেও অনভ্যস্ত জায়গা বলে ঘুম ভেঙেও গেল সাত সকালে। হাসান সাহেব সকাল সকাল চান সেরে
নেন। বাথরুমে জল গরম করার ব্যবস্থা হয়েছে , কাজেই নভেম্বরের সকাল হলেও চান করতে অসুবিধে
হলো না। তাঁর পদমর্যাদার একজন অফিসার, শুধু মাত্র খাবার জন্যে কোথাও এক বেলা বেশী থেকে
যাচ্ছেন এরকম হয়নি এর আগে। গরম গরম পুরি আর আলুর ঝোল ঝোল তরকারি এলো জলখাবারে, সঙ্গে
খবরের কাগজ। আজ আর আর্ল গ্রে নয়, বুধনের মা একদম দিশি পদ্ধতির দুধ চিনি আদা দেওয়া চা
করে পাঠিয়েছে। অনেক দিন পর এরকম চা খেয়ে বড় ভালো লাগল হাসান সাহেবের। স্থানীয় খবরের
কাগজ, তবে ইংরেজি। কিছুক্ষন উল্টেপাল্টে দেখে উঠে পড়লেন। ঘাসের লনে মোরাম বিছোনো রাস্তায়
একটু হাঁটলেন। সুখন একটা প্লাস্টিকের বালতিতে সাবান জল গুলে তাঁর গাড়িটা পরিস্কার করছিলো।
সুখনকে দেখে একটু হাসলেন হাসান সাহেব। তার পরেই দেখলেন লাফাতে লাফাতে বুধন আসছে। স্কুল
ইউনিফর্ম পরে। এখন সে স্কুলে যাবে বাপের সাইকেলের পেছনে বসে। আর দুপুরে ফিরে আসবে।
আরো কিছুক্ষন পায়চারি করে বারান্দায় এসে বসলেন হাসান সাহেব। মনে ঘুরে ফিরে আসছিলো বহু
আগেকার ছোটবেলার স্মৃতি। স্মৃতির সঙ্গে গন্ধ বোধহয় খুব ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। মায়ের
গায়ের গন্ধ, সব মায়েদেরই হয়ত থাকে। এত বছর পরেও সেই মায়া মায়া সুগন্ধ লেগে আছে হাসান
সাহেবের স্মৃতিতে। মা রান্না করছে পিঁড়েতে বসে। তখন এরকমই চল ছিলো। যদিও গ্যাসের উনুন
এসে গেছে হাসান সাহেবের ছোটবেলায়, কিন্তু গ্যাসের টেবিলের ব্যবহার শুরু হতে আরো কিছুদিন
বাকি। একটা বড় কাঁসার থালা হাতে তুলে মা মশলার নাম বলতো, আর সেগুলো এক এক করে পোলাওতে
যোগ হতো। আর আস্তে আস্তে পোলাও থেকে ভেসে আসতো সেই খোশবাই। পোলাও হতে কিছুটা সময় লাগত।
সে সময়টা তিনি রান্নাঘরের বাইরে এসে উঠোনে খেলতেন। তাঁর ডাক নাম ছিলো তিতু। অনেক অনেক
অনেক অনেক বছর হয়ে গেল তাঁকে তিতু বলে কেউ ডাকেনি। বাবার আদর করে দেওয়া নাম, তিতুমীর
থেকে তিতু। বাইরের উঠোনে খেলতে খেলতেই ডাক আসতো “তিতুউউ”। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে চলে যেতেন
ছোট্ট তিতুমীর। আর থালায় পড়ত গরম গরম পোলাও। আর মন প্রাণ ভাসিয়ে নিয়ে যেত সেই অদ্ভুত
মায়া মায়া সুগন্ধ। ছোট্ট তিতুমীরের কথা মনে করে, জোরে শ্বাস টেনে দীর্ঘস্বাস ছাড়লেন
হাসান সাহেব। আর তার পরেই চমকে উঠে হেলানো চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন। খুব হালকা হলেও নাকে
একটা পরিচিত গন্ধ প্রবেশ করছে কি? না কি এ সেই ছোটোবেলার স্মৃতির ভ্রম? আরো কয়েকবার
শ্বাস টানলেন হাসান সাহেব। যদিও খুবই ক্ষীন কিন্তু ধুলোপড়া স্মৃতির জোর এমন হতে পারে?
এই ভাবে ছুঁয়ে যেতে পারে ঘ্রানেন্দ্রীয়? বারান্দা থেকে নামলেন হাসান সাহেব। নাঃ ভুল
নয়, এ এক্কেবারে সেই চেনা গন্ধ, আর বাগানের ওই প্রান্তে সুখনের কোয়ার্টারের রান্নাঘর
থেকেই আসছে এ গন্ধ, এটাও মিথ্যে নয়। পদমর্যাদা, পারপার্শ্বিক সব কিছু ভুলে প্রায় দৌড়েই
যাচ্ছিলেন রান্নাঘরের দিকে, আর ঠিক এই সময় রামাশীষ যাদব দেখতে পেল সাহেব কে। রামাশীষের
ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে হাসান সাহেব বুঝলেন এই ভাবে অন্যের রান্নাঘরে হানা দেওয়াটা তাঁর
পদমর্যাদার সঙ্গে একেবারেই খাপ খায়না। কিন্তু বেয়াড়া কৌতুহল আর থরথরে আবেগের ঢেউ কে
আটকানো গেল না। অগত্যা বাংলোর গেটের ডিউটি থেকে সুখন কে ডাকা হলো। রামাশীষ যাদবও রইলো
সঙ্গে। সপার্ষদ হাসান সাহেব হানা দিলেন রসুইঘরে।
সুখনের
বিবি কখনো এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়েনি। এই বাঙালী সাহেব বড়ই খামখেয়ালী। গতকাল ওই ডাইনিং
রুমে তাদের বসিয়ে একসঙ্গে খেতে চাইলেন। এখন আবার রসুইঘরে এসে ঢুকেছেন। তবে লছমী মানুষ
চেনে। এ লোক খারাপ আদমী নয়। বরং বিলকুল পাগল আছে বলেই মনে হয়। খেতে খুব ভালোবাসে সে
তো দেখাই যাচ্ছে। এত উঁচু দর্জার আদমী, আহুনা গোস্ত কি করে মটকি তে পাকায়, সেটাও একদম
পাক্কা রসুইকরের মত বলে দিলো। এখন আবার আবদার জুড়েছে তার এই সাদা মাটা পুলাও কি করে
পাকায় সেটা দেখবে। সুখন একটা প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে দিয়েছে। মুশকিল হলো এখন পুলাও
হান্ডিতে দমে বসানো। আরো বিশ মিনিট বাদে খূলতে হবে, নইলে চাওল পাকবেনা ঠিক করে।
-
স্রেফ আদা, জিরে, ধনে, হলুদ, মৌরি আর পাতি লেবু? সে কি? এই দিয়ে পোলাও?
-
জি
সাহাব, আমাদের আর ক্ষমতা কি বলুন? হাঁ ধোড়াসা কোতমির আর বাগানের পুদিনার পাতাও দিই।
আর এখানে পিপলি বলে একটা জিনিস পাওয়া যায়…
-
কোতমির?
মানে ধনেপাতা? তাজ্জব… কিন্তু… গরম মশলা, ইলাইচি…পিপলি আমি জানি, ওকে বলে গরীবের গোলমরিচ,
লম্বা লম্বা দেখতে
-
ইলাইচি,
লং, কেশর, জাফরান … ও সব তো সাহাব বড়ে লোগোঁকে লিয়ে, আমাদের চাওলে একটু বাস আনার জন্যে
যে টুকু দরকার এই মশলাতেই হয়ে যায়।
-
তাজ্জব,
আমার আম্মা এই পোলাও রান্না করতেন। একদম এই খোশবাই, কিন্তু… কিন্তু……
-
জি
সাহাব?
-
আম্মা
তো তাতে কত কি মশলা দিতো আমাকে গল্প বলতে বলতে… ইলাইচি খান, লবঙ্গ কুমার…
লছমীর
লম্বা করে টানা ঘোমটার ফাঁক উছলে একটু হাসি বাইরে এলো।
-
ও
তো সাহাব হাম ভি বুধনিয়া কে গল্প করে বলি
-
গল্প করে?
-
এক
থালি পে ওই চার পাঁচ রকম মশলা অনেক ভাগে ভাগ করে রাখি, আর দেবার সময় গল্প করে করে বলি,
এই দিলাম, ওই দিলাম, তিরিশ রকমের মশলা দিলাম…
-
গল্প
করে?
-
জি
সাহাব, ওকে একটু গল্প করে বলি, ও আমার রাজ দুলারা, ও যা খাচ্ছে, সেটা বাদশায় খায়… বাচ্চে
হ্যায় সাহাব…
আশ
মিটিয়ে মির্জাপূরী পোলাও খেয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসলেন হাসান সাহেব। রোজকার অভ্যেস
মত আজ তিনি কিছুতেই সিগারেট ধরাবেন না। মির্জাপূরী পোলাওয়ের স্বাদটুকু যতক্ষন পারেন
রেখে দেবেন নিজের কাছে। মির্জাপুরী পোলাওয়ের কেরামতি তার রন্ধনপ্রনালী বা মশলার কেরামতি
তে নেই। ও জিনিস কখনো বানিজ্যিক ভাবে তৈরি সম্ভবও না। এ হলো মায়ের আদরে মাখামাখি এক
অনন্য রেসিপি, যার রহস্য লুকিয়ে আছে পোলাও রান্নার সময় বলতে থাকা রূপকথায়। সুখন কে
নগদ দু হাজার টাকা দিয়ে এসেছেন, লছমী বহেন যাতে নিজের ইচ্ছে মত কিছু একটা কিনতে পারেন।
আর ঠিকানা লিখে নিয়েছেন, নিজের ফোন নম্বরও দিয়ে এসেছেন। যদি কোন মশলা দরকার হয়, তারা
যেন নির্দ্বিধায় জানায়, হাসান সাহেব পাঠিয়ে দেবেন। নিজের সাধের কলমের সেট থেকে এক খানা
ভালো জাপানী কলম দিয়ে এসেছেন বুধনকে। শহর পেরিয়ে যেতেই ফোন এলো মেয়ের। এষা জানতে চায়
কতদুর পৌঁচেছেন তিনি। বাবা এলে একটু ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া হয়। বাপের মতই তিনিও ভোজনরসিক।
হাসান সাহেব বললেন পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। শুনে মিস এষা একটু রেগেই গেলেন। মেয়েকে শান্ত
করতে হাসান সাহেব গভীর গলায় বললেন, এবারে মেয়ের জন্যে নিয়ে আসছেন নতুন উপহার। মনে মনে
আর একবার আউড়ে নিলেন মির্জাপুরী পোলাওয়ের রেসিপি। শহরের বাইরেটা ফাঁকা হয়ে আসছে। এই
ভর্তি দুপুরে স্কুল শেষে রাস্তা দিয়ে একটি বাচ্চা ছেলে ফিরছে। পিঠে মলিন ব্যাগ, গায়ে
হলদেটে হয়ে আসা সাদা জামা আর নীল হাফ প্যান্ট। গাড়ি দেখে মুখ তুলে তাকালো ছেলেটি। বড্ড
চেনা চেনা মুখ। কোথায় দেখেছেন একে? কিছুতেই মনে করতে পারলেন না। হুস করে গাড়িটা পেরিয়ে
গেল ছেলেটিকে। একরাশ ধুলোর মধ্যে দিয়ে রিয়ার ভিউ মিররের ভেতর দিয়ে একবার তাকাতেই সব পরিস্কার
হয়ে গেল হাসান সাহেবের কাছে। তিতুমীর হেঁটে হেঁটে ফিরছে স্কুল থেকে। এবার বাড়িতে গিয়ে
বই খাতা রেখে একটু মুড়ি কিম্বা ভাত খেয়েই দৌড়বে মাঠে, খেলতে। ফিরে এসে সন্ধ্যে বেলা
চোখ জুড়ে আসবে রাজ্যের ঘুম। সব কিছু বড় চেনা হাসান সাহেবের। এষার উপহার হিসেবে হারিয়ে
যাওয়া মির্জাপুরী পোলাওয়ের রেসিপির সঙ্গে তিতুমীরকেও হাসান সাহেব নিয়ে চলেছেন বাড়িতে।
আমি সাধারণত আসল কথাটা শেষে বলি, লিখতে গেলে, কারণ ওতে জমে ভালো।
উত্তরমুছুনকিন্তু আজ ওটা দিয়েই শুরু করছি, না হলে অপরাধ হয়ে যাবে।
এই তুলনাটাকে তুমি বা লোকে কিভাবে নেবে জানি না, কিন্তু আজকাল যেহেতু মুখের উপর সোজা কথা বলার বদভ্যেসটা গেড়ে বসছে, বলছি, এই লেখাটা খোদ মানিক বাবুও লিখতে পারতেন না। আর, আমি নিজে মানিকবাবুর অন্ধ ভক্ত, এটা মাথায় রেখো।
বেশী হেজিয়ে আমি এই লেখাটার মাধূর্য নষ্ট করব না, তবে দুটো কথা বলব।
গল্পটা খাবারের নয়, যদিও এর নাম আর বহরের অনেকাংশই জুড়ে আছে খাবার। গল্পটা অন্য কিছুর। কিসের, সেটা এককথায় যদি আমাকে বলতে হয়, তাহলে আমি বলব এটা জীবনের বিস্ময় নিয়ে একটা গল্প। যে বিস্ময় না থাকলে জীবন থেমে থাকে, আর যে বিস্ময় না থাকা এক চরিত্রকে নিয়ে মানিক বাবুর এক অসাধারণ গল্পও আমাদের মুগ্ধ বিস্ময় জাগিয়ে তোলে (বৃহচ্চঞ্চু)।
আবার এটাও ঠিক, গল্পটা খাবারের। সেই খাবার, যা ধনী-গরীব, জাতপাত, ধর্ম-অধর্ম - কিছুই দেখে না। এ খাবার শুধু মনুষ্যত্বের কথা বলে, শৈশবের ম্যাজিক ফিরিয়ে আনে।
মনে পড়ল সেই "রাতাতৌলি" সিনেমার ক্লাইম্যাক্স সিনটা, যেখানে ক্রিটিক এক চামচে খাবার মুখে তুলল, আর...
গল্পটার নাম হয়ত আজ মির্জাপুরী পোলাও, কিন্তু আমি জানি এটার নাম কারুর কাছে গোস্ত বিরিয়ানী, কারুর কাছে ইলিশ ভাপা, বা এঁচোড়ের ডালনা। আর আমার কাছে শুঁটকি মাছ।
আমিও আজ হাসান সাহেব, তোমার লেখনীর জোরে।
ওরে বাপ রে বাপ। এ কি কান্ড!!! এর পরে তো নরকেও স্থান হবে না আমার। শেষে কিনা মানিক রায়্বের সঙ্গে তুলনা? আসলে ছোটোবেলার কিছু খুব খুশীর , আনন্দের জায়গা, বড় হয়ে যুক্তি দিয়ে ভাবলে খুব সাদামাটা লাগে। কিন্তু ভেবে দেখেছি, মনটাকে সেই ছোটোবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলে, ওই ভালোলাগাটুকু ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত ভাবেই সম্ভব। সেই সূত্রেই গল্পটুকু লেখা।
মুছুনGolpo to noi...jeno hathe aka chobi.chokher samne dekhte pelam...mon chuye gelo
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ। তবে তুই আমাকে যে গুলো বললি ওগুলোও এখানে লিখে দিতে পারিস। তাতে অন্য পাঠকের সঙ্গে মত বিনিময়টুকু আরো জমবে। যেমন বাম মনস্ক আই এ এস হলে কেন "হেই সামালো" গাইতে হবে, কিশোর কুমারের কোন গান বা ঠাকুরমশায়ও আসতে পারতেন। আমার মনে হয়, খুব ভালো পয়েন্ট এটা। আলোচনা চলতেই পারে। ওই গানের ব্যবহারটা সত্যিই স্টিরিওটাইপ হয়ে গেছে।
মুছুনভালো পয়েন্ট। তর্কের উপযোগী 😁
মুছুনPagol naki..tor bhokto ra amake pitbe dhore..
মুছুনআমি রাম নই, আমার ভক্তরাও.... 😀😀
মুছুনNo comment 😶
মুছুনএটা কি !!! রহস্য গল্প? রূপকথা? নাকি রন্ধন প্রনালীর গুপ্ত রহস্য .... এই বয়সে এসে আমরা বাকী জীবন খুঁজে ফিরি এই 'মির্জাপুরি পোলাও'।
উত্তরমুছুনএইটা যে ঠিক কি সেটা হয়ত নিজেও ভালো করে বলতে পারবো না। সেই অর্থে চমক বা ক্লাইম্যাক্স কিছুই নেই। শুধু একটু নস্টালজিয়া আছে। তাও নিতান্তই গেঁইয়া ম্যাড়ম্যাড়ে। আজকালকার স্মার্ট শহুরে মানসিকতায় এসব চলবে না। খেয়ে বা পড়ে লোকে আড়ালে বলবে - "অ্যাঃ"
মুছুনছোটবেলায় বাবা একবার ইটাচুনা রাজবাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সারাদিন সেখানে ঘোরা ছাড়াও দুপুরে রাজকীয় লাঞ্চ খাওয়া হয়েছিল। লুচি আর কচি পাঠার মাংস, আলুরদম, চিংড়ী মালাইকারী, মিস্টি দই আরো কত কি! গল্পটা পড়ার পর সেই স্মৃতিটা বড্ড তাজা হয়ে উঠল!
উত্তরমুছুনছোটবেলার খারাপ স্মৃতিও বড় বেলায় মধুর হয়ে ওঠে। আর ভালো স্মৃতির তো কথাই নেই।
মুছুনবড় ভালো লাগলো সোমনাথ, আলোড়িত হলাম। মন্তব্য দীর্ঘায়িত করে এই আমেজটা নষ্ট করতে চাই না।
উত্তরমুছুনজানিনা কেন, তবে এই মন্তব্যটার আশায় বসে থাকি।
মুছুনখুব উৎসাহ আর মজা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম...কিন্তু শেষটায় যে এমন একটা মন কেমন করা মায়ের গন্ধমাখা রেশ দিয়ে হবে ভাবিনি...এও বুঝছি রেশটা রয়ে যাবে...সব ঘেঁটে দিলে দাদা...আর কিছু মাথায় আসছে না....😒
উত্তরমুছুনএকদম আমাদের পাতি বাংলা গল্প। এতে আগের মত কোনো উদ্ভট কিছুই রাখিনি আর।
মুছুনKhub bhalo laglo. Emnitei tomar lekhay amar balance between narratives and conversation ta darun laage. Narrative ta simply takes me to that place and helps to visualize. Also, I loved the basic premise of the story , maane ei je parents ra toiri kore ekta imaginary world for kids jeta titu has gone through his mirzapuri pulao and now Budhan is going through, seta khub apt for me and now for my son. That basic premise is applicable irrespective of your financial, social status. Likhte thako.
উত্তরমুছুনআমাদের ছোটোবেলায় সকলের নিজস্ব একটা করে "ডুংলুং ডো" থাকে। সত্যজিত রায়, একশৃঙ্গ অভিযানে যার কথা লিখেছেন।
মুছুনআমি না, লিটারেলী ছিটকে গেছি তোমার লেখাটা পড়ে। যাই, আমিও কিছু একটা রাঁধার চেষ্টা করি।
উত্তরমুছুনএইটি রান্না করলে চলবে? http://dwitiyaadhyay.blogspot.com/2019/11/blog-post.html
মুছুননস্টালজিক হয়ে পড়লাম। স্বচ্ছ চিত্র বর্ণনার মধ্য দিয়ে যেন সবটাই চাক্ষুষ করতে পারলাম। সত্যি বলতে কী, সবমিলিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম দাদা। আপনার রন্ধন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান দেখে অবাকও হয়েছি।
উত্তরমুছুনওই প্রানধারনের জন্যে একটু ডাল ভাতের জোগাড় আর পাঁচজনের মত করে নিতে পারি আর কি।
মুছুনদারুণ ভালো লাগল। আপনার কলম অক্ষয় হোক।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ লেখায় চোখ রাখার জন্যে। উৎসাহ পেলে সত্যি ভালো লাগে।
মুছুনদারুন একটা গল্প।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ। এর পরের লেখায় হাত দিয়েও দিতে পারছিনা স্রেফ কাজের চাপে।
মুছুনআমি আপনাকে চিনি না, আপনিও চেনেন না স্বাভাবিক। আমার এক বন্ধু যদি এই লেখাটা আমাকে পড়তে না বলতেন, হয়তো জানতেও পারতাম না যে আমার কথা বলে দেওয়ার মতো এরকম একটা লেখাও কোথাও রয়েছে। হয়তো শুধু আমার নয়, আরও অনেকেরই কথা। এটা তো খাবারের গল্প নয়, এটা আমাদের নরম ছোটবেলার আঁচ। বহুক্ষণ থাকবে এই রেশটা।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ হিন্দোল। আপনার মন্তব্য সত্যিই উৎসাহ দিলো। হয়ত আরো লিখতে চাইবো এরকম মন্তব্যের জন্যেই। হ্যাঁ এটা ঠিক, এরকম স্মৃতি আমাদের সকলেরই আছে কিছু না কিছু।
মুছুনএই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুনKhub bhalo laglo lekhata pore. Chhotobelar anek smriti bheshe uthlo chokkher samne. Tution pore bari dhukei rannar gondho petam r roj guess kortam sedin Ma ki ranna koreche.
উত্তরমুছুনঠিক তাই। স্মৃতিতে শৈশব বেঁচে থাকে
মুছুন