শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

পেট্রোল

এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা বড় বড় পাথরের টুকরোর আড়ালে দু চার জন করে সৈনিক বসে আছে চারিদিকে চোখ ধাঁধানো সাদা। বরফের পুরু আস্তরন সব কিছুর ওপর। এই ধপধপে সাদার ওপর সূর্‍্যের রোদ পড়লে সেদিকে খালি চোখে তাকানো মুশকিল। তাই সব ফৌজির মুখেই, কপাল থেকে গাল পর্যন্ত বিশাল বড় আর  মোটা কালো চশমায় ঢাকা। একে সকলেই সাদা হাই অল্টিচিউড ফৌজি উর্দী পরে আছে। মাইনাস চল্লিস কি পঞ্চাশ ডিগ্রিতে দাড়ি গোঁফ কামানোর প্রশ্নও ওঠেনা। তার ওপর মুখের আধখানা ঢাকা বিশেষ ভাবে তৈরি রোদ চশমায়। কাজেই সকলকেই কেমন এক রকম দেখতে লাগছে। তবুও ফৌজিরা নিজেদের চিনে নেয় কোনো ভাবে। ওই যে লোকটা একবালতি বরফ নিয়ে অল্প লেংচে লেংচে আসছে গরম করে খাবার জল তৈরি করবে বলে, ও হলো হাবিলদার রামদত। অনেক উঁচু থেকে দড়িতে ঝুলতে ঝুলতে পড়ে গিয়েছিল। সে আঘাত এখনো সারেনি হয়ত। তাই চলার সময় খুব ভাল করে নজর করলে ওকে হালকা ল্যাংচাতে দেখা যায়। সামনে প্যাকিং বাক্সর ওপর বসে থাকা লেফটেন্যান্ট চেঁচিয়ে রামদতকে চা চাপাতে বললেন। ইনিই বোধহয় এ চৌকির কম্যান্ডার। এ জায়গাটা বোধহয় পাকিস্তানি ফৌজের সরাসরি গুলির পাল্লার বাইরে। কারন এখানে লোকজন বাংকার বা পরিখার মধ্যে ঢুকে বসে নেই। বরং বেশ নিরাপদেই ঘুরছে। লেফটেন্যান্টের উর্দীতে নামের ট্যাগটা পড়া যাচ্ছে। রাজীব পান্ডে। আইডি আর ট্যাগ খুঁটিয়ে দেখে লেফটেন্যান্ট তাকালেন সামনের দিকে -

-   নাম? ইউনিট?

-   জয় হিন্দ সাহাব। আমি সুবেদার নাগেশ... আলফা কোম্পানি, ১৯ ব্যাটালিওন, মাদ্রাজ রেজিমেন্ট

সুবেদার নাগেশ, নিজের ইউনিটে পরিচিত কড়া মেজাজের গম্ভীর অভিজ্ঞ ফৌজি বলে। কর্নাটকের হাসন জেলার তেজুর গাঁয়ের লোক। পল্টনে অনেক দিন হয়ে গেল। অনেক দিন হয়ে গেল উত্তরে। সিয়াচেনে। সুবেদার নাগেশের সঙ্গে আসা বাকি আট জন ফৌজি এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। কেউ কেউ শুয়ে পড়েছে। খুব ধকল গেছে সবার ওপর দিয়ে। শারীরিক, মানসিক।

-   পেট্রোলে বেরিয়েছিলেন? কোন পোস্ট?

-   জি সাব। পেট্রোলে। আমরা দশ জনের সাব ইউনিট। আমি কম্যান্ডে। কিন্তু তার পরে যে কি হলো!! এক আদমি লা-পাতা ভি হ্যায় সাহাব।

-   মানে? খুঁজে পাননি?

সুবেদার নাগেশা এদিক ওদিক তাকালেন। তাঁর একদম পেছনেই বসে আছে সিপাহি মুস্তাক আহমেদ। ক্লান্ত মুখ। কিন্তু ফৌজি ব্যাগ আর রাইফেল সে নামিয়ে রাখেনি এখনোকেননা টহল খতম করার হুকুম এখনো দেন নি সুবেদার সাহাবছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক দলের বাকিরাও রয়েছে। টহল দিতে বেরিয়েছিলেন সুবেদার, দশজন সৈনিককে নিয়ে। ১৯৬০০ ফুট উচ্চতায় বিলাফন্ড-লা হিমবাহের গায়ে সালতারো রেঞ্জের ওপর সোনাম পোস্ট। সেখানেই ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে ভারতীয় ফৌজ। পেছনে ১৫ কিলোমিটার দূরে সিয়াচেন হিমবাহ। তাকে পাহারা দিতে হয় রাত দিন এই বরফের দেশে। সোনাম ঘাঁটি থেকে কিছুটা নিচে পশ্চিমে পাকিস্তানি চৌকি। দুদিকের ফৌজি একে অপরের ওপর লক্ষ্য রাখে। তাই রোজ টহল দিতে হয়। সেই টহল দিতে বেরিয়েই ঘটল দুর্ঘটনা।

-   কি হয়েছিলো সুবেদার সাহাব? আমাকে খুলে বলুন তো। কিছুটা শুনেছি একটু আগে আমাকে যখন আপনাদের আসার খবর দেওয়া হল তখন। কিন্তু বাকি সবটা খুলে বলুন

-   জি সাহাব। আমরা সকাল ৯টায় সোনাম ঘাঁটি থেকে বেরোই। এক সুবেদার, দুই হাবিলদার, দুই লান্স নায়েক আর পাঁচ সিপাহির স্কোয়াড নিয়ে আমি সুবেদার নাগেশ বেরিয়েছিলাম পেট্রোলে।

নাগেশের বয়ান অনুযায়ী লেফটেন্যান্ট বুঝলেন - ঘন্টাখানেক টহলদারির পরেও তেমন সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি কারোর। আর ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটল। প্রথমে মনে হয়েছিল পাকিস্তানিরা এক সঙ্গে অনেক গুলো ভারি মর্টার ফায়ার করছে। সৈনিকের সহজাত প্রবৃত্তির বশে সকলেই সঙ্গে সঙ্গে বরফের ওপর শুয়ে পড়ে। নয়ত গোলার টুকরোয় আহত হবার সম্ভাবনা। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড যেতেই নাগেশা বুঝতে পারেন মর্টার নয়, এই গুরু-গুরু আওয়াজ আসছে অন্য দিক থেকে, ওপর থেকে। ওপরে তাকানোর পর বোধহয় সিপাহিরা আর দুই বা তিন সেকেন্ড সময় পেয়েছিল। তার পরেই বিপুল তুষার ধ্বস এসে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সকলকে।

-   আরে বাপ রে। ফির ? আপ লোগ তো পুরা ইউনিট গাঢ় গ্যায়ে হোঙ্গে বরফ মে......

সুবাদার নাগেশ পুরোনো ফৌজি। অনেক দেখেছেনরক্ত, ধ্বংস, ঘটনা, দুর্ঘটনা। সিপাহির মন আঘাত পেতে পেতে শক্ত হতে থাকে। কিন্তু অনেক শক্ত হবার পরেও, প্রতিটি ঘটনা সেখানে আঁচড় ফেলে যায়। নরম কাদার মত মনে আঁচড় মিলিয়ে যাওয়া তুলনামুলকভাবে সোজা। কিন্তু ইস্পাতকঠিন মনে যখন আঁচড় পড়ে, সে আঁচড় সহজে মুছে যেতে পারে নাকিন্তু অদ্ভুত ভাবে সুবাদার মনে করতে পারছেন না ধ্বসের মধ্যে পড়ে যাবার পরের কিছু মুহুর্ত। কেমন যেন একটা ভাসা ভাসা গুলিয়ে যাওয়া স্মৃতি। একটা দুঃখের বা খুব কষ্টের স্মৃতি কি? খুব ছোটোবেলায় গ্রামের স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবার সাইকেলের কেরিয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন নাগেশ। অনেক সাধের স্লেট খানা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তার পরে বহুদিন পর্যন্ত সেই স্লেটের জন্যে, অনেক কিছুর মধ্যেও মন একটু তেতো হয়ে থাকত। এখনো সেরকম লাগছে কি?

-    আমি তো ভাবলাম ঠিক দেখছি কিনা। দেখি আমি বরফের ওপরে শুয়ে আর একটু দূরে সুবাদার সাব কি যেন খুঁজছেন।

নাগেশের দলের সব চেয়ে কম বয়সি ২১ বছরের সিপাহি সূর্য্যবংশী দু কাপ চা নিয়ে এসেছে এনামেলের মগে। এক কাপ লেফটেন্যান্টকে দিতে দিতে বলে চলল। অন্য কাপ এগিয়ে দিলো সুবাদার নাগেশার দিকে।

-   তার পরে চেয়ে দেখি একে একে সবাই উঠে দাঁড়াচ্ছে। তখন চারিদিক কেমন একটা ধোঁয়া ধোঁয়া ভাব। আমাদের মাথার মধ্যে কেমন একটা ঘোর। তার পরে সুবাদার সাহাব হুকুম দিলেন। আমরা আবার চলতে শুরু করলাম। সব দিক গুলিয়ে গেছিল। শেষে কয়েক ঘন্টা হাঁটার পর এই পোস্টের পেট্রোল পার্টি আমাদের দেখতে পেলো, আর এখানে নিয়ে এলো

-   আল্লাহ কা শুকর হ্যায় সাহাব, কি আমরা পাকিস্তানি ফৌজের পোস্টে গিয়ে পড়িনি। নিজেদের লোকেরাই খুঁজে পেলো আমাদের

এবার কথা বলল সিপাহি মুস্তাক আহমেদ। ইউনিটের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হিন্দি বা উর্দু মুস্তাকই বলে বলে ওর একটা প্রচ্ছন্ন গর্ব আছে। নয়ত দক্ষিনি রেজিমেন্টের হিন্দি নিয়ে বাহিনীতে অনেক মজার কথা চালু আছে।

-   মন খারাপ লাগছিলোনা মুস্তাক ভাই? কেমন একটা কষ্ট?

পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে আর এক ফৌজি। সিপাহি ওম রাজ। বুকের লেখা ট্যাগ থেকে নাম পড়ে নেওয়া যায়। ওম রাজ। মুখে কেমন একটা আলগা হাসি। মুস্তাক আহমেদের ভাল লাগল না। বরং মনের ভেতরের সেই অজানা কষ্টটা আরো গেড়ে বসল। কেমন যেন আচ্ছন্ন করে দেওয়া কষ্ট। নিজের মানুষকে হারাবার কষ্ট। দশজনের মধ্যে একজনকে হারাতে হয়েছে। সেই কষ্টই হয়ত মনকে আঘাত দিয়ে চলেছে। অন্ধ্রের কুর্নুল জেলায় নিজের বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল। কে জানে, এখন তারা কি করছে। বিকেল হয়ে আসছে। এখন খেত থেকে চাষিদের ফেরার সময়গ্রামের বাড়ি গুলো দিয়ে ভিজে খড় জ্বালানো ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। গরুর গোয়ালে মশা তাড়ানোর জন্যে এই ধোঁয়া সব বাড়িতেই দেওয়া হয়। কেন যে মুস্তাক গাঁয়ে রইল না, পল্টনে এলো, তা নিজেও ভাল বলতে পারবেনা। তবে ফৌজি জীবন তার ভাল লাগে। উর্দীর ভার সে বোঝে যখন সাধারন মানুষ ট্রেনে-বাসে বা রাস্তায় রাত দিকে সম্ভ্রমের চোখে তাকায়। যখন বাড়ি ফেরার পথে গাঁয়ের ইস্কুলের বাচ্ছারা তাকে দেখে স্যালুট করে। যখন বুড়ো বাবা নুয়ে পড়া পিঠ নিয়েও বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায় তার ছেলে দেশের জন্যে ফৌজে নাম লিখিয়ে জীবন দিতে প্রস্তুত। সেই বাড়ি, আপনজনকত দূর! আর এইখানে, এই ফৌজিরা, যাদের ১৫ মিনিট আগেও চিনতোনা, তারাও এখন আপন জন। ফৌজি উর্দী আর তেরঙ্গা ঝান্ডার এত জোর?

-   গরম চা আর গরম খাবার খাওয়ান আপনার লোকজন কে সুবাদার সাহাব। আর রাত্রে থাকার জন্যে ওই বড় বোল্ডারের ওপাশে দেখুন কতগুলো তাঁবু ভাঁজ করা আছে। যদি ইচ্ছে হয় নিতে পারেন। তবে রাত্রে ঘুমোনোর কথা এখানে কেউ ভাবেনা।

-   লেফটেন্যান্ট সাহাব, আমাদের পোস্টে একটা মেসেজ পাঠানো যাবে? আমাদের রেডিও সেট কাজ করছেনা।
-   আমাদেরও একই অবস্থা সুবাদার সাহাব। আপনি বুঝে যাবেন। এখন অন্য দিকে যাওয়াও মুশকিল, মৌসম খারাব হো রাহা হ্যায়। আপনার আদমীকে খোঁজা কাল সকালে শুরু করব। এখন আপনি আপনাদের নাম আর র‍্যাংক বলুন তো, আমি আমার নোটবুকে লিখে রাখি। এটা রিপোর্টে জুড়ে রাখতে হবে।
-   জি সাহাব। আপনি লিখুন হাবিলদার এলুমালাই, হাবিলদার সুরেশ কুমার, ল্যান্স নায়েক সুদিশ, সিপাহী সূর্য্যবংশী, সিপাহী মুস্তাক আহমেদ, সিপাহী গনেশন, সিপাহী রামমূর্তী, সিপাহী মহেশ আর আমি সুবাদার নাগেশআর এক জন......

-   নাম মনে পড়ছেনা?

-   আজীব বাত সাব, নাম ভুলে গেলাম কি করে?

-   আরো আজীব কি জানেন সুবাদার সাহাব? আপনি কারোর সিরিয়াল নাম্বার বলেননি। নিজেরও না।
-   সাহাব, মাফ কিজিয়ে, আমি বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে, কিন্তু আমি মনে করতে পারছিনা। কি জানি কি হয়েছে।

-   আস্তে আস্তে বুঝবেন সুবাদার সাহাব। বড় ঝটকা লেগেছে। আস্তে আস্তে সব বুঝবেন।

-   আমার পেট্রোল যে খতম হলোনা সাহাব, আমার ওপর অর্ডার ছিলো, হুকুম ছিলো টহল শেষ করে রিপোর্ট লিখতে হবে।

-   লিখবেন। টহল শেষ হলে। আপাতত আমার হুকুমে আপনি এই পোস্টেই থাকছেন আপনার ইউনিট সমেত। 
ক্যারি অন। ডিসমিস।

************-----************

-   সাহাব ...... লেফটেন্যান্ট পান্ডে সাহাব, জলদি আইয়ে

-   কি হয়েছে সুবাদার নাগেশ?

-   আমার যে লোক হারিয়ে গিয়েছিল, সে এসেছে, যার নাম আমরা কেউ মনে করতে পারছিলাম না।

-   আশ্চর্য্য। এত দেরি করে? এত দিন পর?

-   হ্যাঁ সাহেব। কি সব বলছে লোকটা, উল্টোপাল্টা

সামনে সৈনিকের একটা ছোটো জটলা। একজন সৈনিক বরফের ওপর বসে আছে। তাকে ঘিরে অনেকে দাঁড়িয়ে। লেফটেন্যান্ট রাজীব পান্ডে হুকুম দিলেন। ফৌজিরা “সাবধান” হয়ে দাঁড়ালো। বসে থাকা সৈনিক উঠে দাঁড়িয়ে সেলাম করল বিধিসন্মত ভাবে। সেলাম ফিরিয়ে দিলেন লেফটেন্যান্ট - 

-   এতদিন কোথায় ছিলেন?

-   লেফটেন্যান্ট সাহাব, আমি কিছু মনে করতে পারছিনা ঠিক করে। বরফের ধ্বস নামলো। তার পর ...... তার পর......... দম আটকে আসছিল, ঠান্ডা...... খুব ঠান্ডা...... অন্ধকার......... তার পর, কিছু মনে নেই...... ভাবলাম মরে গেছি...... দিন রাত হিসেব নেই...... সব অসাড় হয়ে গেছে

-   ছ দিন। ছ দিন কোথায় ছিলেন মনে নেই ?

সুবাদার নাগেশ প্রচন্ড উত্তেজিত। চোখ মুখ বলে দিচ্ছিল পুরোন ফৌজির সারা শরীর দিয়ে কতখানি উত্তেজনা ছিটকে বেরোচ্ছে।

-   সুবাদার সাহাব, আপনি দাঁড়ান। ওকে বলতে দিন। আর কি মনে আছে আপনার? বলুন

-   সাহাব, কিছু বুঝতে পারছিনা। কুকুরের ডাক শুনতে পেলাম একবার...... কতগুলো লোক... কেমন একটা ঘরঘর শব্দ... সাদা সাদা মুখোশ পরা মানুষ...... আলোর ঝলকানি... তার পরে আবার... মনে নেই। শেষে দেখি বরফের ওপরে শুয়ে আছি। উঠে বসলাম। হাঁটতে শুরু করলাম।

-   নিজের নাম মনে আছে আপনার?

-   জি সাহাব। ল্যান্স নায়েক হনুমন্তআপ্পা কোপ্পাড়

কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন লেফটেন্যান্ট। হনুমন্তআপ্পা কেন এবং কি মনে করতে পারছেনা, তিনি জানেন। এই ঘাঁটির বাকি ৮৭৯ জন সৈনিকও জানেন সব। নতুন এসে পৌঁছনো ৯ জন এবং আজকের ১ জন, সব মিলিয়ে দশজন, এরাও এখুনি জেনে যাবে তারা কেন এখানে। ১৯৮৭ থেকে তিনি এখানে। বাকিরাও বহু বহু কাল ধরে এখানেই। বাকি দুনিয়া তাদের ভুলে গেছে। হয়ত বছরে একবার কেউ মালা চড়ায় তাদের নামে, কারোর আবার তাও নয়। কিন্তু সৈনিকবৃত্তি কঠোর। নিয়মের বাইরে যাওয়া সেখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যাই ঘটুক, তার ওপরে বর্তানো দায়িত্ব তাকে পালন করতেই হবে। জীবনে, এবং জীবনের পরেও।

-   সুবাদার নাগেশ

-   জি সাহাব

-   আপনার পুরো ইউনিট তৈয়ার?

-   জি সাহাব। পুরো দশ জন। ল্যান্স নায়েক হনুমন্তআপ্পাকে নিয়ে।

-   এক ঘন্টার ভেতর আপনার পেট্রোল আবার শুরু করুন। পেট্রল শেষ করে এখানে ফিরে আসবেন। আমাকে রিপোর্ট দেবেন। এই ব্যাগের ভেতরে ম্যাপ, পেট্রোল রুট আর কম্পাস আছে। আপনাকে আমি ৪৮ ঘন্টা সময় দিলাম পেট্রোল খতম করার জন্যে। জয় হিন্দ।

-   জয় হিন্দ সাহাব।

************--************

পরিশিষ্ট

২০১৬ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারী সিয়াচেন হিমবাহে বরফের ধ্বসে শহীদ হাবিলদার এলুমালাই, হাবিলদার সুরেশ কুমার, ল্যান্স নায়েক সুদিশ, সিপাহী সূর্য্যবংশী, সিপাহী মুস্তাক আহমেদ, সিপাহী গনেশন, সিপাহী রামমূর্তী, সিপাহী মহেশ আর সুবাদার নাগেশা। ছ দিন পর ২৫ ফুট বরফের নিচে থেকে বাহিনির জওয়ানরা উদ্ধার করেন ল্যান্স নায়েক হনুমন্ত আপ্পা কোপ্পাড় কে। কিন্তু এ হেন অমানুষিক কষ্টের সঙ্গে ছ দিন লড়াই করে হনুমন্ত আপ্পা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার ক্ষমতা হারান দিল্লির হাসপাতালে। ১১ই ফেব্রুয়ারী শহীদ হন এই সৈনিক।

ওপরের লেখায় আর যাঁরা এসেছেন, তাঁরাও সিয়াচেনের শহীদ। লেফটেন্যান্ট রাজীব পান্ডে, হাবিলদার রামদত, সিপাহী ওমরাজ ১৯৮৭ সালে শহীদ হন।

আজ পর্যন্ত ৮৭৯ জন সৈনিক শহীদ হয়েছেন সিয়াচেনে। তার ৯০%ই আবহাওয়া ও পরিবেশের জন্যে।  

সিয়াচেন হিমবাহ নিয়ে আমি কিছুদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলাম। সে সম্পর্কে কেউ উৎসাহী হলে এখানে চোখ রাখতে পারেন - http://dwitiyaadhyay.blogspot.in/2015/09/blog-post_24.html

বন্ধু অংশুমান দাসের সঙ্গে এক হোয়াটস-অ্যাপ কথোপকথন থেকে এই লেখার বীজ মাথায় আসে।

   
  

৮টি মন্তব্য:

  1. শালা, ফাটাফাটি!!!!!!

    দুঃখিত, আমার ভাষাটা বিষয়ের সঙ্গে প্রচন্ড বেখাপ্পা হয়ে গেল, কিন্তু এটাই মনে হল যে!!

    দুলাইন পড়েই মনে হল, আবার সেই সিয়াচেন, আর আবার সেই সেনাদের জীবন নিয়ে লেখা!! ভালো লাগে ঠিকই, প্রচন্ডই ভালো লাগে, এখনো একটাই আফসোস রয়ে গেছে যে সেনাবাহিনী তে যেতে পারিনি, তবু আবার সেই তাদের নিয়েই লেখা!!

    কিন্তু, আরো দুলাইন পরেই কেমন যেন সন্দেহ হল! সন্দেহের অবসান ঘটানোর সময় পেতে পেতেই, কি যেন হয়ে গেল! ঘটনার মোড় বদলাতে বদলাতে ঝটকা খেলাম!! ঠিক যখন মনে হচ্ছে যে - "তাহলে কি এটাই বলতে চাইছে?!" - ঠিক তখনই বুঝলাম কি থেকে কি হয়ে গেল!!

    কম্পু বলেছিল সে জানে মৃত্যুর পরে কি আছে!! লাইনটা পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল রোমাঞ্চে!!

    আজ আরেকবার হল!

    শুধু কি ওরাই? আমি পারব না? জীবৎকালে তো পারলাম না! কিন্তু তার পরেও যদি এরকম কিছু থাকে, আমি যেতে চাই!

    ব্যাস, এটুকুই বলার ছিল।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করেনা, এরকম জীবনের পরে শুধু শুন্য।

      মুছুন
  2. যদি এমন হতো .... যদি হতো ...... সত্যি ভাষাহীন আমি ..

    উত্তরমুছুন
  3. কি করে এমন ভাবতে পারিস? এমন climax, কল্পনা তেও আসেনি। শেষ টা পড়ে বিভোর। human emotions নিয়ে এমন লেখা মনে দাগ কেটে গেলো।

    উত্তরমুছুন
  4. মন ছুঁয়ে গেল।কিছু বলার ভাষা নেই।

    উত্তরমুছুন