রামনাথ বিশ্বাস, স্বেন
হেদিন, ইবন বতুতা, মার্কো পোলো কিম্বা মন্দার বোস। ভূপর্যটক অনেক রকমের হয়। পায়ে
হেঁটে, সাইকেলে, জাহাজে চড়ে, এমন কি হালে-কালে দুচার পিস কর্পোরেট কত্তাকে দেখেছি,
যাঁরা এরোপ্লেনের বিজনেস ক্লাসে চড়ে দুনিয়া ঘুরে চলেছেন। দুনিয়ার চতুর্দিকে চক্কর
মারতে মারতে বোধহয় দুনিয়ার সব কিছুই তাঁদের কাছে প্যাঁচালো লাগে । দেশে
দেশে অমিল আছে, আবার মিলও কম নয়। এই যেমন ধরুন গোটা ভারতবর্ষের রেল স্টেশনগুলোর
মধ্যে কেমন একটা মিল আছে মেজাজের আর চরিত্রের। পৃথিবীর সব বিমানবন্দরগুলোর
মধ্যে মিল যেন আরো বেশি। সবই কেমন এক রকম। এমন কি গন্ধ পর্যন্ত।
সুগন্ধের মিল অবশ্য পাওয়া সোজা। সুগন্ধ বোতলে ভরে, ছাপ মেরে, বেজায় আক্রা দরে বিক্রি হয়। কিন্তু দুর্গন্ধ তো কেউ বিক্রি করেনা, তাই তার বিশ্বায়নও হয়নি। দুর্গন্ধ এক এক দেশে এক এক রকম। আলী সাহেবের আফগান সরাইয়ের সূচীভেদ্য দুর্গন্ধ মনে করুন, সে গন্ধ চামচ দিয়ে কুরে কুরে বের করা যায়। যাই হোক, গন্ধবিচার পরে হবে। সে সব নিয়ে লিখতে বসিনি। আসল গপ্পে আসি।
সুগন্ধের মিল অবশ্য পাওয়া সোজা। সুগন্ধ বোতলে ভরে, ছাপ মেরে, বেজায় আক্রা দরে বিক্রি হয়। কিন্তু দুর্গন্ধ তো কেউ বিক্রি করেনা, তাই তার বিশ্বায়নও হয়নি। দুর্গন্ধ এক এক দেশে এক এক রকম। আলী সাহেবের আফগান সরাইয়ের সূচীভেদ্য দুর্গন্ধ মনে করুন, সে গন্ধ চামচ দিয়ে কুরে কুরে বের করা যায়। যাই হোক, গন্ধবিচার পরে হবে। সে সব নিয়ে লিখতে বসিনি। আসল গপ্পে আসি।
আলবার্ট স্পীয়ার সম্পর্কে
লিখতে বসলে অনেক কিছুই লেখা যায়। কিন্তু আমি বেজায় কুঁড়ে লোক। দু কলমের জায়গায় তিন
হলেই কেমন জানি বেজায় আলিস্যি লাগে, আর লেখাটা শেষ হয় না। স্পীয়ার সাহেব জার্মানির
লোক। মোটামুটি এই আজকের তারিখ ধরলে ১১০ বছর আগে তাঁর জন্ম জার্মানির বাদেন-ভুরটেমবুর্গ
অঞ্চলের মানহাইম শহরে। কিছুদিন পরে অবশ্য তাঁরা চলে আসেন হাইডেলবার্গ। সে আবার
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর। হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৬০০ বছর পেরিয়ে গেছে। সারা
পৃথিবী ঝেঁটিয়ে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে এখানে। অথচ আলবার্ট স্পীয়ার ঘরছেড়ে গেলেন
পাশের শহর কার্লসরুহে থেকে স্থাপত্যবিদ্যা পড়তে। অবশ্য পরে সেখান থেকে আরো দু পা
দূরে “মুনচেন” (ওই যে বেনিয়ারা যাকে মিউনিখ বলে) চলে আসেন পড়তে। আখেরে, বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে বেরোন ১৯২৭ সালে। শোনা
যায় ছোটোবেলায় বাড়িতে আড়োআড়ো-ছাড়োছাড়ো পরিবেশ নাকি তাঁর পছন্দ হতোনা। তাই এমন বাউন্ডুলেপনায়
তাঁকে পেয়ে বসেছিলো। সে সময়টা বড্ড গোলমেলে। গত শতকের বিশের দশক।
জার্মানির তখন টালমাটাল অবস্থা। যুদ্ধে পরাজয়, কাইজার পলায়ন করেছেন, জার্মান অর্থ
ও অর্থনীতি দুটিই রসাতলে, শিল্পাঞ্চল আর বড় শহরগুলোতে লাল ঝান্ডাধারীরা শশীকলার মত
বেড়ে চলেছে(বিপদ বই কি! একা সোভিয়েতে রক্ষে নেই আবার জার্মান দোসর)। এর মধ্যে বিয়ারখানায়
ভাঙচুর করে বিশ্বযুদ্ধ ফেরত অস্ট্রিয়ান কর্পোরাল জেলে বসে “আমার জীবন সংগ্রাম” (Mein Kampf) লিখছেন। আর বাভারিয়ার রাস্তাঘাটে তাঁর
চ্যালাচামুন্ডরা ডান্ডা ঘুরিয়ে, ড্রাম বাজিয়ে রাস্তায় মার্চ করা শুরু করেছে।
শুরুর দিকে কয়েক বছর
আলবার্ট স্পীয়ার এদিক ওদিক দু চারটে কাজ কম্ম করেন। বেশীরভাগই শিক্ষকতা। ১৯৩১ সালে
নাৎসি পার্টির সদস্য হয়ে যান। কিছুটা বোধহয় দলে পড়েই। কেননা তার আগে পর্যন্ত তিনি
ডান-বাম কোনো রাজনীতির ছায়াই মাড়াননি। নাৎসি পার্টির সদস্য হয়ে বার্লিন থেকে স্পীয়ার বাড়ি
ফিরে আসেন। দক্ষিন জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চল হলো নাৎসিদের আঁতুড়ঘর। ১৯৩৩ সালে
নাৎসিরা মিউনিখে এক বিশাল শোভাযাত্রা বের করার পরিকল্পনা করে। আলবার্ট
স্পিয়ার আবেদন করেন সে সময় নাৎসি পার্টির হিটলারের ঠিক পরের নেতা রুডলফ
হেসের কাছে। তিনি বলে বসেন এই শোভাযাত্রাকে সাজিয়ে গুছিয়ে লোকের চোখ ধাঁধিয়ে
দেওয়ার দায়িত্ব তিনি নিতে চান। জানিনা রুডলফ হেস কি দেখেছিলেন স্পীয়ারের মধ্যে,
তিনি ছোকরাকে পাঠিয়ে দিলেন সোজা হিটলারের অ্যাপার্টমেন্টে। হিটলার নিজে ছবি
আঁকতেন, এবং বুঝতেন। দায়িত্বটা তিনি স্পীয়ারকেই দেন। এবং এখান থেকেই আলবার্ট স্পীয়ারের উন্নতির শুরু।
নাৎসি জার্মানি বলতেই
চোখের সামনে যে সব স্থাপত্য ভেসে ওঠে, সেগুলো প্রায় সবই আলবার্ট স্পীয়ারের তৈরি। কিন্তু এই সব মার্কামারা নাৎসি স্থাপত্যের সব কটাই যুদ্ধের শেষে ভেঙ্গে
দেওয়া হয়। অবশ্য যুদ্ধের পরে খুব বেশী সংখ্যায় তারা অবশিষ্টও ছিলোনা। ১৯৩৭ সালে
পারি (Paris) শহরে এক বিশাল আন্তর্জাতিক প্রদর্শনি হয় এবং
তাতে জার্মানি অংশগ্রহন করে। তখন ইয়োরোপের আকাশে আসন্ন যুদ্ধের ঘন কালো মেঘ জমেছে।
পেশি আস্ফালনের এ হেন সুযোগ কেউই ছাড়বেনা সেটা বলাই বাহুল্য। হিটলার স্পিয়ারকে দায়িত্ব
দিলেন জার্মানির মন্ডপ তৈরি করার। স্পীয়ার তৈরি করলেন এক অতিকায় দানবীয় বহুতল মন্ডপ।
মজার কথা হলো, রাস্তার ঠিক অপর পারে, জার্মান মন্ডপের ঠিক মুখোমুখি উলটো দিকে রইল
সোভিয়েত মন্ডপ। সেও আকারে প্রকারে এক পেল্লায় বস্তু। আর এই মন্ডপের ওপরে ছিলো সোভিয়েত
শিল্পি ভেরা মুখিনার তৈরি বিখ্যাত সেই মুর্তি – শ্রমিক ও যৌথখামারের কৃষক রমনী,
তাদের হাতে হাতুড়ি ও কাস্তে। এই মুর্তি পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সোভিয়েত প্রতীক হয়ে
দাঁড়ায়। পরে সোভিয়েত দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের ছোটোবেলায় কম্যুনিস্ট পার্টির
পোস্টারে অনেক বার দেখেছি এই ছবি। সোভিয়েত সিনেমার শুরুতেও এই প্রতীক দেখানো হতো।
যাই হোক, পারি তে ফিরি। আলবার্ট স্পীয়ারের তৈরি জার্মান মন্ডপ তার উল্টোদিকের
সোভিয়েত মন্ডপের থেকে সামান্য একটু উঁচু হয়ে রইল, আর তার ওপরে বসানো হলো এক বিশাল
জার্মান ঈগলের মুর্তি, আর তার তলায় নাৎসি স্বস্তিকা চিহ্ন। যেন ঈগল শ্ব্যেনদৃষ্টি
তে তাকিয়ে রয়েছে বলশেভিক কৃষক-শ্রমিকের দিকে। সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।
শুনতে পাই কমরেড স্তালিন
নাকি স্পীয়ারের স্থাপত্যে মুগ্ধ হয়ে ১৯৪০ সালে তাঁকে মস্কোতে আমন্ত্রন
জানিয়েছিলেন। কিন্তু হিটলার তাঁর সাধের স্থপতির মস্কো যাত্রা স্পষ্ট নাকচ করে দিয়েছিলেন।
আর তার পরে তো ধুন্ধুমার যুদ্ধ বেঁধে গেলো দু পক্ষে। পূবদিকের লড়াই সামলাতে হিটলার
নিজের সদর দফতর নিয়ে গেলেন পূর্ব-প্রাশিয়ার রাস্টেনবুর্গ শহরের কাছে। সেখানে তৈরি
হয়েছিলো উলফ্স্ষানৎসা। জার্মান নামটি উরুশ্চারনে জখম হবার বিলক্ষন সম্ভাবনা।
বাংলা করলে মোটামুটি দাঁড়ায় নেকড়ের ডেরা। কংক্রিটের দুর্ভেদ্য বাংকারের সমষ্টি, আর
চারিদিকে বহুস্তরের প্রহরা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সব সমেত জায়গাটা আবার ঘন
জঙ্গলের ভেতরে। এই গোটা ব্যাপারটা তৈরি করেছিলো অর্গানাইজেশন টড (Organisation Todt) নামের জার্মান সরকারি
স্থাপত্যবিভাগ। যার মাথা ছিলেন ফ্রিৎস টড। এই ফ্রিৎস টড ১৯৪২ সালে নেকড়ের ডেরা
থেকে বার্লিন ফেরার সময় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। আর তার পরে এই বিভাগের প্রধান
হয়ে বসেন তাঁর সহকারি আলবার্ট স্পীয়ার। শুধু তাই নয়, ফ্রিৎস টড ছিলেন অস্ত্রশস্ত্র
নির্মান দফতরের মন্ত্রি। আলবার্ট স্পীয়ার সেই পদ ও দখল করেন। গোটা দুনিয়া জুড়ে
যুদ্ধ ছড়িয়েছে এমন দেশের অস্ত্রশস্ত্র নির্মান দফতরের গুরুত্ব আশাকরি বুঝিয়ে বলার দরকার
নেই।
৩ বছর জার্মান রাইখের
মন্ত্রি থাকার পর, ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি, বার্লিনে তখন আকাশ থেকে
বৃষ্টির মত বোমা ঝরছে, রাইখ্স্চ্যান্সেলরি কে লালফৌজ ভারি দুরপাল্লার কামানের
পাল্লার মধ্যে এনে ফেলেছে, মাটির ওপরে এক খানা আস্ত বাড়িও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
জার্মান সরকারের যে কজন তখনো বার্লিনে, সবাইকে নিয়ে হিটলার সেঁধিয়েছেন মাটির বহু
নিচে বাংকারের মধ্যে। তার কিছুদিন আগেই হিটলারের সঙ্গে মতান্তর হয়েছে আলবার্ট
স্পিয়ারের। হিটলার তাঁর কুখ্যাত নিরোবেফেহ্ল্ বা নিরো ডিক্রি জারি করেছেন ১৯শে
মার্চ। যার মানে হলো, জার্মানির যেখানে যা কিছু বাকি আছে, সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে
ধ্বংশ করে দিতে হবে, যাতে যুদ্ধের পরে সে সব বলশেভিকদের হাতে না পড়ে। স্পীয়ার
বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, যে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেলে যুদ্ধের পর জার্মানরা থাকবে
কোথায়? খাবে কি? বাঁচবে কি করে? উত্তরে হিটলার আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছিলেন, এই
জার্মান জাত যুদ্ধে হেরেছে, দুর্বল প্রতিপন্ন হয়েছে, এদের বেঁচে থাকার দরকার নেই।
জানিনা, তবে মনে হয় হিটলার গোটা জার্মান জাতটাকে সঙ্গে নিয়েই বৈতরণী পেরোতে
চেয়েছিলেন। আলী সাহেব ও তাঁর লেখায় এই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। আলবার্ট স্পীয়ার
কিন্তু মন থেকে মানতে পারেননি আদেশ। তিনি নিজে এই ডিক্রি কোথাও প্রয়োগ হতে দেন নি। বরং
বাধা দিয়েছেন। ২০শে এপ্রিল, হিটলারের জন্মদিনে আলবার্ট স্পিয়ার এলেন হিটলারের
সঙ্গে দেখা করতে, বার্লিনের বাংকারে। দেখা হলো, কথা হলো। স্পীয়ার জানালেন যে তিনি
ডিক্রি মানেননি। কিন্তু একথাও জানালেন, তিনি ফ্যুরারের শুভাকাঙ্খী ছিলেন এবং আছেন।
২১শে এপ্রিল সকাল বেলা স্পীয়ার বার্লিন ছেড়ে হামবুর্গ রওনা হলেন। ২৯শে এপ্রিল
মৃত্যুর ঠিক আছে নিজের শেষ উইলে হিটলার আলবার্ট স্পিয়ার কে বরখাস্ত করে স্পীয়ারের সমস্ত
দায়িত্ব দিয়ে যান কার্ল অটো জাওয়ার কে। জাওয়ার ছিলেন স্পীয়ারের সহকারি। এর পর
মিত্রপক্ষের হাতে স্পীয়ারের ধরাপড়া এবং ন্যুরেমবার্গ বিচার। বিচারে আলবার্ট
স্পীয়ারের হাজতবাসের হুকুম হয়, এবং অন্য নাৎসি চুড়ামনিদের সঙ্গে আলবার্ট স্পীয়ার সাজা
ভোগ করতে আসেন স্পান্ডাউ কারাগারে। ঠিক ধরেছেন, এখানেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত
বন্দি ছিলেন রুডলফ হেস (১৯৮৭)।
রামনাথ বিশ্বাস, স্বেন
হেদিন, ইবন বতুতা, মার্কো পোলো কিম্বা মন্দার বোস এনাদের সকলের থেকে আলবার্ট
স্পীয়ারের ভূপর্যটন এক্কেবারে আলাদা, কারন স্পীয়ার সাহেব ভূপর্যটন করেন বন্দী
দশায়। কিন্তু তাই বলে ঘরে বসে বসে চুপচাপ আকাশ পাতাল চিন্তা করে নয়। পায়ে হেঁটে। কারাগারের
জীবন একঘেঁয়ে। প্রথম দিকে নিজেদের সেলের বাইরে মাত্র আধ ঘন্টার জন্যে বেরোতে
পারতেন বন্দীরা। কিছুকাল পরে অবশ্য নিয়ম কানুন কিছুটা শিথিল করা হয়। সকালে ঘন্টা
তিনেক আর দুপুরে ঘন্টা দুই-তিন জেলের ভেতরের খোলা চত্তরে কয়েদিরা হেঁটে বেড়াতে
পারতেন। স্পীয়ারের ভ্রমন শুরু হয় এইখান থেকেই। পেশায় স্থপতি স্পীয়ার, প্রথমে
নিখুঁত ভাবে হিসেব করেন চত্তরের দৈর্ঘ-প্রস্থ। এই চত্তরে স্পীয়ার হাঁটতে থাকেন
রোজ, এবং হিসেব রাখতে থাকেন কতটা পথ তিনি পেরোলেন। স্থানীয় পাঠাগার থেকে কয়েদীদের
বই আনিয়ে দেওয়া হতো। আলবার্ট স্পীয়ার নাকি বন্দী দশার প্রথম কয়েক বছরে ৫০০র ওপর বই
পড়ে ফেলেন। তিনি, তাঁর পর্যটনের জন্য আনাতে থাকেন দেশ বিদেশ সম্পর্কে বই। তার
ভূগোল, পর্যটনের তথ্য, ইতিহাস, মানচিত্র সমেত সব রকম উপকরন। বার্লিনের উপকন্ঠ থেকে
তাঁর বিশ্বভ্রমন শুরু হয়। পায়ে পায়ে পথচলা। প্রতিটি ইঞ্চি চলা। জার্মান সৈনিক গোটা
পৃথিবীতে তার পদক্ষেপের ছাপ রেখে যাবার স্বপ্ন দেখেছিলো। ফৌজি উর্দী আর কাঁধের
রাইফেল নামিয়ে রেখে তৃতীয় রাইখের নেতা দেখলেন, তাঁর বিশ্বভ্রমনে বাধা দিতে এগিয়ে
আসছেনা কোনো লাল হেলমেট মজুর-চাষির ফৌজ, কিম্বা মাথার ওপর ঘুরছেনা মার্কিনি
বোমারু। প্রতিদিনের ভ্রমনের পর আলবার্ট স্পীয়ার যত্ন করে হিসেব রাখতেন কতটা পথ
হাঁটলেন এবং কোথায় পৌঁছলেন। বার্লিনের উপকন্ঠ থেকে ভ্রমন শুরু হয়। প্রথমে ইয়োরোপের
মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলা। পেরোলেন মধ্য ইয়োরোপ, দক্ষিন ইয়োরোপ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল।
এসে পৌঁছলেন ইস্তানবুল।
বসফোরাস পেরিয়ে এশিয়ার
মাটিতে পা রাখলেন স্পীয়ার। হাঁটছেন আনাতোলীয়ার পথঘাট ধরে। ভূমধ্যসাগরীয়
মিঠেমিঠে পরিবেশ বদলে গিয়ে ক্রমশঃ উষর মরুস্থলিতে প্রবেশ করছেন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে
গরম। ওপর থেকে থেকে ঝুরঝুর করে পড়তে থাকা বরফের ভেতর দিয়ে মধ্য জানুয়ারির
স্পান্ডাউ কারাগারের ধপধপে সাদা বরফে ঢাকা চত্ত্বরে হাঁটছেন আলবার্ট স্পিয়ার। অনুভব
করছেন মরুময় পশ্চিম এশিয়ার গরম। মাথার ওপরে সূর্য্য আগুন ঢালছে। জিভ তালু শুকিয়ে
কাঠ। দূর দুরান্তে একটা দুটো খেজুর গাছ, হয়ত কাছাকাছি জল পাওয়া যাবে। প্রবল রোদের
আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। অনুভব করা যায় আফ্রিকা কোরের জার্মান ফৌজিরা কত কষ্ট পেয়েছে গরমে,
তৃষ্ণায়। ঠান্ডায় জমে যেতে যেতে গরম বালি পাথরের ছেঁকায় ফোসকার যন্ত্রনা টের
পেয়েছেন। কিন্তু থামেন নি আলবার্ট স্পীয়ার। হেঁটে গেছেন নিয়ম করে। পেরিয়েছেন ইরাক,
ইরান। বালুচিস্তান পার হয়ে ঢুকেছেন ভারতবর্ষে। সন্ধ্যের মুখে স্পান্ডাউয়ের গির্জার
ঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছে হালকা হয়ে। সে সময় বেনারসে গঙ্গার ঘাটে বসে আলবার্ট
স্পীয়ার শুনছেন মন্দিরে আরতির ঘন্টার ঠুংঠুং আওয়াজ। হয়ত হাইনরিখ হাইনের লেখা
কবিতার সেই শ্বেতহস্তি খুঁজেছেন কলকাতার রাস্তায়। চট্টগ্রামের সমুদ্রসৈকত পার হয়ে আরাকানের
পাহাড়ে এসে হয়ত মিল খুঁজতে চেয়েছেন বহুকাল আগে ছেড়ে আসা, পাহাড়ে ঘেরা হাইডেলবার্গ
শহরের। সোয়েদাগন মঠ কিম্বা শ্যাম দেশের বুদ্ধমন্দিরে দু দন্ড বসে হয়ত সুদীর্ঘ
যুদ্ধের পর একটু শান্তি খুঁজে পেয়েছেন। ইন্দোচিন হয়ে আলবার্ট স্পীয়ার চিন ও
মঙ্গোলিয়ার ভেতর দিয়ে সাইবেরিয়া এসে পৌঁছন। সেই সাইবেরিয়ায়, যেখানে আরো লক্ষ লক্ষ
জার্মান সৈনিক যুদ্ধবন্দি হিসেবে রয়েছে। আরো পূব দিকে চলতে থাকেন আলবার্ট স্পীয়ার।
বরফে জমে যাওয়া বেরিং সাগর পেরিয়ে পা রাখেন আমেরিকা মহাদেশের মাটিতে, আলাস্কায়।
তথ্যে ঠাসা, আবার কমিক কোশ্যেন্টও খুব কম নয়!! তোমার পক্ষেই সম্ভব। চালিয়ে যাও গুরু!! আমরা পড়ি আর মজা লুটতে থাকি!!
উত্তরমুছুনসোমনাথ এর দ্বিতীয় অধ্যায়!
উত্তরমুছুনচরম তো! তথ্য, চুটকি, কথার বুনন... দুর্দান্ত
বেশ ভালো লাগলো ..... দারুণ
উত্তরমুছুনআরেকটি তুখোড় গল্প।। সুন্দর।।
উত্তরমুছুন