সব সময় পোলাও কালিয়া
মুখে রোচেনা। পেটে তো নয়ই। টানা কদিন ভারি ভারি রান্না খাবার পর দুটি সাদা ধপধপে
ভাত, একটু ডাল, সঙ্গে লেবু কাঁচালঙ্কা, দুটো পটল ভাজা, একটু কোনো চচ্চড়ি আর মাছ।
আহা, যেন অমৃত। সোজাসাপ্টা রান্নাকে পাত্তা দিতে চাইনা আমরা। অনেক বাঙালিকে চিনি,
যাঁরা জটিলতম মোগলাই বা চিনে রান্না নিখুঁত ভাবে করে দেবেন, কিন্তু সামান্য
মুলো-বেগুন-বরবটি তে কাঁচালঙ্কা-সর্ষেবাটা আর পাঁচফোড়ন দিয়ে অসামান্য চচ্চড়ির
নাগাল এখনো পান নি। কত সামান্য বস্তু দিয়ে অসামান্য রান্না সম্ভব, তার প্রকৃষ্ঠ
উদাহরন বাঙালি রান্নাঘর।
কাঁঠাল কেউ খান, কেউ
খান না। আমি খুবই ভালোবাসি। কাঁঠালবীজ নানান রকম তরকারিতে দিয়ে খাওয়াযায়। চিংড়ি
দিয়ে একটা খাসা রান্না আছে। তবে আজকে এখানে একখানা নিরামিষ রান্নার কথাই বলি। এটা
কোনো পোষাকি রান্না নয়। সাদামাটা আর মুখবদলানো রান্না। আমি নিরামিষ বলতে প্রানিজ
বস্তু ছাড়া রান্না বুঝি। পেঁয়াজ আমার কাছে সব্জি, আমিষ নয়। তাই যদি কেউ পেঁয়াজ
থাকার জন্যে এই রান্নাটাকে আমিষ বলেন, সেটা তাঁর ব্যাপার।
আলুভাতে, ওলভাতে,
ঢেঁড়স ভাতে, যাই খান না কেন, সেটা আসলে জলে সেদ্ধ করে তার পর মাখা। এখানে জলে সেদ্ধর
ব্যাপারটা নেই। আপনি রান্নাটাকে অন্য নাম দিতে চাইলে স্বচ্ছন্দে দিতে পারেন।
উপকরন
কাঁঠাল খাবার পর
কাঁঠালের বীজ গুলো পড়ে থাকে, সেগুলো খুব ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। আজকাল বাজারে
শুকনো কাঁঠাল বীজ কিনতে পাওয়া যায়। শুকনো কথাটার ওপর এত জোর দিচ্ছি, কারন, এ রান্নাটা,
বীজ কাঁচা থাকলে হবে না। রান্না বলছি বটে, তবে উনুনে চাপিয়ে রান্নার করার
ব্যাপারটা এখানে খুবই কম।
শুকনো কাঁঠালবীজ
নেবেন তিন কাপ। পোস্ত দানা সিকি কাপের মত। একটা ছোট পেঁয়াজের আধখানা। গোটা চারেক
শুকনো লঙ্কা। দু থেকে তিন চামচ সরষের তেল, আর পরিমান মত নুন। আর কোন উপকরন নেই। আগেই
বলেছি, বাঙালি রান্নাঘর বাহুল্যবর্জিত।
প্রনালী
প্রনালী তেমন কিছু
শক্ত নয়।তবে সামান্য খাটুনি আছে। পোস্ত আর শুকনো লঙ্কা জলে ভিজতে দিন। পেঁয়াজটা
কুচিয়ে নিন।
একটা শুকনো কড়া,
চাটু বা প্যান উনুনে বসান। একটু গরম হলে, তাতে কাঁঠালবীজ গুলো দিয়ে দিন, আর নাড়তে
থাকুন। আস্তে আস্তে কাঁঠালবীজ গুলো সেঁকা হতে থাকবে। আপনি নাড়া থামাবেন না। তাহলে
পুড়তে শুরু হবে, আর সব জায়গা সমান ভাবে সেঁকা হবে না। একটা সময় দেখবেন বীজগুলো
বীজের গায়ে বেশ পোড়া পোড়া দাগ ধরেছে। অন্ততঃ১০-১২ মিনিট লাগবে এই অবস্থায় আসতে। এই
রকম ভাবে সেঁকা হয়ে গেলে বীজগুলো নামিয়ে একটা থালায় রাখুন, আর ঠান্ডা হতে দিন।
ঠান্ডা হয়ে গেলে,
বীজের ওপরের শক্ত ও পোড়া পোড়া খোসাটা ছাড়িয়ে ফেলুন। ভেতরে আর একটা খয়েরি রঙের
পাতলা খোসা থাকে। ওটা ছাড়াবার দরকার নেই।
বাড়িতে আজকাল
হামানদিস্তা খুব কম থাকে। হামানদিস্তায় সুবিধে হয় একটু, তবে না থাকলে পদের স্বাদের
তফাত হবে, এমন নয়। হামানদিস্তা থাকলে, কাঁঠালবীজ গুলো তাতে দিয়ে ভালো করে থেঁতো
করে নিন। এরপর পোস্ত, পেঁয়াজ, শুকনো লঙ্কা আর কাঁঠালবীজ একসঙ্গে বেটে নিন
শিলনোড়ায়। মিক্সিতে হবে বলে মনে হয়না। শিলনোড়া চাই এটার জন্যে। মিহি বাটা হয়ে গেলে
নুন আর সরষের তেল দিয়ে ভালো করে মাখুন। পাতে পরিবেশনের সময় কাঁচালঙ্কা দিয়ে
সাজিয়েদিন। গরম ভাতের সঙ্গে মেখে খেতে দিব্যি লাগবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন