মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

ওস্তাদের মার শেষ রাতে

তাহার পর কি হইলো তাহা বিশ্ববাসী দেখিয়াছেন। দেখিয়াছেন গগনভেদী অট্টরোল। দেখিয়াছেন লুটিয়ে পড়া খেলোয়াড় ও বাকিদের হা-হুতাশ। পরের দিন দেখিয়াছেন উল্লাস ও স্বপ্নভঙ্গ। স্মৃতিরোমন্থন ও খিস্তি খেউড়। কিন্তু কি ঘটিয়াছিলো সেখানে?

তখন শেষ রাত। জমাট অন্ধকারে টিভি নামক বৈদ্যুতিন মাধ্যমের পর্দায় চোখ বিশ্ববাসীর। বিষুব অঞ্চলের উষ্ণতায় যোগ হইয়াছে খেলার উত্তেজনা। একখানি বল ও তাহার পিছনে বাইশ জন খেলোয়াড় তিন জন রেফারি, আর কোটি কোটি মানুষের চোখ দৌড়াইতেছে। দক্ষিন আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তের দেশ কলম্বিয়া গনরাজ্যের লাল টুক্‌টুকে জার্সি পরা হুয়ান ক্যামিলো জুনিগা ও একই মহাদেশের পূর্বপ্রান্তের দেশ ব্রাজিল প্রজাতন্ত্রের দশ নম্বর জার্সিধারী এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে বল দখলের লড়াই তে প্রানপনে দৌড়াইতেছেন। খেলা তদবধি আশি মিনিটের কিছু অধিক গড়াইয়াছে। খেলোয়াড়রা ঘর্মাক্ত ও পরিশ্রান্ত। তৃষ্ণায় ছাতি ফাটে। দর্শকাসনের উন্মাদনা খেলোয়াড়দের প্রতিটি রোমকূপে প্রবেশ করিতেছে। জুনিগার দল খেলায় এক গোলে পিছাইয়া আছে।

জুনিগা আরো জোরে দৌড়াইলেন। এই মহতি সভায় পরাজিত হইয়া মাথা নিচু করিয়া দেশে ফিরিতে কে চাহিবে? সামনের ব্রাজিলীয় তরুন অতিশয় চতুর। বল দেখিতে দিতেছে না। কেবল আড়াল করিয়া আছে। জুনিগা স্টেডিয়ামের ওপরে চলিতে থাকা অতিকায় ঘড়ির দিকে চাহিলেন। টিক্‌ টিক্‌ করিয়া সময় বহিয়া যাইতেছে। এই ব্রাজিলীয় বিচ্চুর খপ্পর হইতে বল দখল করিতে হইবে। কিন্তু ধিরে ধিরে বিচ্চু বলটি  কে আরো দূরে লইয়া যাইতেছে। আকাশ বাতাস কাঁপিতেছে দর্শকের গর্জনে। তা বলে কি মাথা নোয়াইতে হইবে? ইশ্বর , হে ইশ্বর, সর্বশক্তিমান, দয়াময়, তুমি কি সহায় হবে না ? এই আর্তি কি তোমার কর্ণকুহরে পৌঁছাইতেছে না? হে দয়াময়, হে পিতা, আজ এই আর্তের সহায় হও। পথ দেখাও , পথ দেখাও প্রভু। আর পারিলেন না, জুনিগা এক মুহুর্ত চোখ বন্ধ করিলেন। ইশ্বরের পায়ে নিজেকে সমর্পন করিলেন।

মুহুর্ত পরে, চোখ খুলিলেন জুনিগা। গগনভেদী কর্ণপটবিদারী চিৎকার কোথায় যেন মিলাইয়া গেল, আলোকোজ্জ্বল স্টেডিয়াম তাঁর চোখে পড়িলনা, ক্লান্তি শ্রান্তি তৃষ্ণা সব যেন মিথ্যা হইয়া গিয়াছে। শুধু চোখের সামনে জুনিগা দেখিতে পাইলেন ইশ্বরের নির্দেশ। তাঁর বানী। দয়াময় সর্বশক্তিমান ইশ্বর তাঁর সহায়। আর পারিলেন না, দু চোখ ফেটে আবেগের অশ্রু বেরিয়ে এলো জুনিগার। প্রতিটি রোমকূপে হর্ষ ও উত্তেজনা ফুটিয়া বাহির হইতেছে। জুনিগা দেখিলেন জ্বলজ্বলে হলুদ রঙের উপর স্পষ্ট লেখা ইশ্বরের নির্দেশ – “নে মার”। তার নিচে লেখা ১০। জুনিগা আর থাকিতে পারিলেন না। তিনি তো শুধু ক্ষুদ্র মানুষ, ইশ্বরের ইচ্ছাই সব। তিনিই সর্বনিয়ন্তা। জুনিগা হাঁটু উঠাইলেন।


১০ বার মারার নির্দেশ ছিলো। তবে কিনা ইশ্বরের মার বলে কথা। বাকি ৯ খানি প্রয়োজন হয় নাই। ওস্তাদের মার শেষ রাতে দেখিয়াছি আমরা। 

[এ লেখার কোন চরিত্রই কাল্পনিক নয়। ইশ্বরের অস্তিত্বও আমার কাছে অকল্পনীয়]

২টি মন্তব্য: