শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪

গোয়ালন্দ স্টিমারের মুর্গি্র সালন্‌

মুজতবা আলীর লেখায় পাবেন সবচেয়ে বেশী। পাবেন আরো অনেক বাংলা সাহিত্যে। যাঁরা ধীরাজ ভট্টাচার্য্যের “যখন পুলিশ ছিলাম” পড়েছেন, তাঁরা মনে করতে পারেন, ধীরাজ ভট্টাচার্য্যও এ রান্নার সুখ্যাত করেছেন প্রান খুলেআমাদের পশ্চিম বাংলার সুন্দরবনের দিকেও এ রান্নার চল আছে। কিন্তু ডাঙার মানুষ এ রান্না রাঁধে না। এ হলো একান্তই জলের মাঝি মাল্লার রান্না। শুনেছি অনেক এই মুর্গির ঝোলের কথা, কিন্তু কোথাও এ রান্নার পাকপ্রনালী পাইনি। যেহেতু গোয়ালন্দ স্টিমারে পাওয়া যাবার কারনেই এই পদের এত নাম, তাই আমি সেই নামই রাখলাম।

যদিও অনেকেই অনেক জায়গায় এ রান্নার পাকপ্রনালি লিখেছেন, কিন্তু আমি তার সঙ্গে কোথাও বাঙালি মুর্গির ঝোলের খুব বেশী পার্থক্য পাইনি। মনে হচ্ছিল লোকে না জেনেই লিখেছে। অনেক খুঁজেও পাচ্ছিলাম না পাকপ্রনালি, শেষে আমার এক বন্ধু কিছুটা আন্দাজ দিলো রান্নাটার। তারপর আবার খোঁজা শুরু। অবশেষে বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনে আর যা তথ্য সংগ্রহ করেছি, তার ভিত্তিতে রান্না করেছি আর দেখেছি কেন এই মুরগির ঝোল খেয়ে এত মানুষ মুগ্ধ হয়ে গেছে। বাংলার মাঝি মাল্লা যে বহু কাল যাবৎ বর্মা-মালয়-শ্যাম পাড়ি দিয়ে আসছে, তার প্রমান ও আছে এতে। আর বোধহয় সেই কারনেই এই রান্নার স্বাদ, আমাদের পরিচিত মুরগির ঝোলের থেকে একদম আলাদা।

গোয়ালন্দ স্টিমারের মুর্গি খাবেন এক থালা সাদা গরম ভাতের সঙ্গে মেখে। দয়া করে রুটি, লুচি পরোটা পাউরুটির সঙ্গে খেয়ে রান্নার বারোটা বাজাবেন না। যাঁরা ঝাল খেতে পারেন না। একটু সাবধানে খাবেন।

কি কি লাগবে
মুরগি ৫০০ গ্রাম, মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ৩ খানা , ছোটো রসুন একটা গোটা, আদা এক ইঞ্চি পরিমান, বড় কাঁচা লঙ্কা ৪-৫ টা, শুকনো লঙ্কা ২-৩ খানা, হলুদ এক চামচ, নুন পরিমান দেখে আন্দাজে, সরষের তেল (পরিমান টা নিচে বলেছি), কুচো চিংড়ি মাছ ১০০ গ্রাম (হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। এখানেই তো ওস্তাদের মার)।

প্রনালী
পেঁয়াজ একদম ছোটো কুচি কুচি করে কাটতে হবে। ঝাল মুড়িতে মাখার সময় যেমন কুচি করে, সেরকম। আদা রসুন আর লঙ্কাও(কাঁচা ও শুকনো) সেই ভাবে ছোটো ছোটো কুচি করে কেটে নিতে হবে।

এবারে মুরগি ভালো করে ধুয়ে একটা কাচ বা প্লাস্টিকের পাত্রে রাখুন। পেঁয়াজ, রসুন আদা, লঙ্কা , হলুদ আর নুন দিন। ৬ টেবিল চামচ সরষের তেল দিন। কোনো রকম সাদা তেল দিয়ে এ রান্নাটা হবে না। আর একটা জিনিষ খুব মন দিয়ে খেয়াল করুন, এ রান্নায় কোনো রকম টক জিনিষ ব্যবহার করা হয় নি। খুব ভালো করে দু হাত দিয়ে মাখুন বেশ সময় নিয়ে। এবারে ২ ঘন্টা রেখে দিন ঢাকা দিয়ে
কুচো চিংড়ি ভালো করে ধুয়ে মাথা, খোলা ও পা বাদ দিয়ে দিন। এবারে বাকি চিংড়িটা খুব মিহি করে বেটে নিন। ছুরি দিয়ে বার বার করতে থাকলেই হবে। হামান দিস্তা বা শীলনোড়ার দরকার নেই। খুবই কম পরিমান হয়ে যাবে চিংড়িটা। কিন্তু ওই টুকুই লাগবে। তার বেশি না।

রান্না
একটা ছোট ডেকচি বা কড়ায় ৩-৪ চামচ সরষের তেল দিন। চিংড়ি বাটা টা মুরগিমাখায় মিশিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে গেলে মুরগি মাখা টা কড়ায় ছাড়ুন। চড়া আঁচ রাখবেন না। আঁচ অর্ধেক কমিয়ে রাখুন। ৩-৪ মিনিট নাড়ুন। তার পরে আঁচ একেবারে কমিয়ে দিন আর ঢাকা দিন ভালো ভাবে, যেন খুব বেশী বাস্প বেরিয়ে যেতে না পারে। আধ ঘন্টা পর ঢাকা খুলে আধ কাপ জল দিন, আর আবার ঢাকা চাপা দিয়ে ১০ মিনিট খুব কম আঁচে রান্না করুন। এবারে উনুন বন্ধ করে দিন। কিন্তু কড়ার ঢাকা খুলুন আরো ১০-১৫ মিনিট পর।


রান্না করে, খেয়ে মতামত জানালে ভালো লাগবে।  

২টি মন্তব্য:

  1. chingri-r gravy-te chicken ranna besh interesting bote....i had no clue about this recipe....try kora achhe....plus another thing that surprised me was there is no use of any spices in this recipe...

    উত্তরমুছুন
  2. aaj hate khari holo ..... jai guru.... ostader hat e ekdin hole aro jome jabe.....

    উত্তরমুছুন